ববিতে উপাচার্যের মেয়েসহ কোটায় ভর্তি ২৪ জন
ববি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১২:৫২ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার | আপডেট: ০২:১২ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার

গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষায় স্বাভাবিক মেধা তালিকায় চান্স না পেয়েও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কোটার সুবিধায় ২৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু পোষ্য কোটাতেই ভর্তি হয়েছেন তিনজন।
ভর্তিকৃতদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তৌফিক আলমের মেয়ে ফাতেমা তৌফিক। তিনি গুচ্ছ মেধাক্রমে ৩২ হাজার ৭৪৩ অবস্থান করলেও পোষ্য কোটায় বিজ্ঞান অনুষদের রসায়ন বিভাগে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে স্থানান্তরিত হন।
একইভাবে স্টোর কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানের ছেলে ওমর ফারুক ফয়সাল মেধাতালিকায় ৯ হাজার ৭৩৯ ক্রমে থাকলেও পোষ্য কোটার সুযোগে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিশিয়ান আরিফ হোসেন সুমনের ছেলে রাইসুল ইসলাম ইমন ৩৩ হাজার ১২০ মেধাক্রমে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।
এবারের ভর্তি প্রক্রিয়ায় মোট ২৪ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোটার আওতায় সুযোগ পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রতিবন্ধী কোটায় ৬ জন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৬ জন, বিকেএসপি থেকে ১ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৫ জন, হরিজন কোটায় ৩ জন এবং পোষ্য কোটায় ভর্তি হয়েছেন ৩ জন।
এ বিষয়ে আপ বাংলাদেশ ববি শাখার সদস্য সচিব মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, “এমন ঘটনা পুরোপুরি জুলাই আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার পরিপন্থী। আমরা পোষ্য কোটাকে অবৈধ ও অযৌক্তিক মনে করি। ২৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে উপাচার্য ও কর্মকর্তাদের সন্তানরা যখন মেধার পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়ে কোটায় ভর্তি হয়, তখন শিক্ষা ব্যবস্থার ন্যায্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়।”
তিনি আরও বলেন, কোনো কোটার নামে মেধাবীদের অধিকার হরণ মেনে নেওয়া যায় না। স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ বা অবিচারমূলক ভর্তির সুযোগ থাকলে তা বৈষম্য আরও বাড়াবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে হতাশ করবে। তাই অবিলম্বে পোষ্য কোটায় ভর্তি প্রথা বাতিল করে যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. তারিক হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ পুরনো বৈষম্যমূলক ধ্যানধারণা থেকে বের হয়ে মেধাভিত্তিক, স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের অযোগ্য সন্তানদের পোষ্য কোটার মাধ্যমে ভর্তি দেওয়া হচ্ছে, যা গণঅভ্যুত্থানের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য অবিলম্বে পোষ্য কোটা বাতিলের আহ্বান জানাচ্ছি।”
তিনি আরও প্রশ্ন রাখেন—যেখানে দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের সন্তানরা মেধার জোরে ভর্তি হচ্ছে, সেখানে সমাজের এলিট শ্রেণির সন্তানরা কিভাবে কোটার দাবিদার হতে পারে? তার মতে, মেধাহীন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা রাষ্ট্র কোনো সুফল লাভ করতে পারে না।
এ বিষয়ে ভর্তি টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য সহযোগী অধ্যাপক ড. রাহাত হোসাইন ফয়সাল বলেন, নিয়ম মেনেই ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। ৩০ নম্বর পাস মার্ক অতিক্রম করলেই নির্ধারিত কোটা ব্যবহার করা যায়। উপাচার্যের মেয়ে কোনো বাড়তি সুবিধা পাননি।
এএইচ