ঢাকা, বুধবার   ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ৯ ১৪৩২

আমদানির জন্য অগ্রিম অর্থ পাঠানো সহজ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৪২ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বুধবার

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সহজ করা এবং আমদানি প্রক্রিয়া আরো কার্যকর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানির ক্ষেত্রে অগ্রিম অর্থ পাঠানোর সীমা সংশোধন করেছে। এখন থেকে আমদানিকারকরা ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত রিপেমেন্ট গ্যারান্টি ছাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে পারবেন, আগে যা ছিল ১০ হাজার ডলার। একই সঙ্গে রপ্তানিকারকদের রিটেনশন কোটা হিসাব থেকে অগ্রিম অর্থ পাঠানোর সীমা ২৫ হাজার ডলার থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার ডলার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্র ও মাঝারি আমদানিকারকদের জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে। এই সীমা বৃদ্ধি আমদানিকারকদের জন্য কম খরচে ও দ্রুত সময়ে অর্থ পাঠানো সম্ভব করে তুলবে। ফলে সময় এবং অতিরিক্ত খরচ কমবে। এই সংশোধনী দেশের সামগ্রিক বাণিজ্য দক্ষতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক বাণিজ্য আরো সহজ করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। দিনদিন নমনীয় নীতি সহায়তার অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ সময়োপযোগী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এদিকে ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ ২০ কোম্পানির সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সোমবার বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা হয়। বিশেষ করে আগামী রমজানে যেন কোনো পণ্যের ঘাটতি না থাকে, সেজন্য আগাম প্রস্তুতির প্রসঙ্গ আসে। বড় এলসি খোলা, এলসি খোলার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি পেতে ধীরগতি, কাস্টমস ডিউটিসহ নানা প্রতিবন্ধকতার বিষয় উঠে আসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা সমাধানে আশ্বাস দিয়ে বলা হয়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন নীতি নেওয়া হয়েছে। নীতি কার্যকরে ব্যবসায়ীদের সহায়তা দরকার। ডলার সরবরাহ কিংবা ব্যাংকিং বিষয়ে যে কোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চার ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ফাইন্যান্স ডিরেক্টর উজমা চৌধুরী, স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির, নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম স্বপন এবং সিটি গ্রুপ, টি কে গ্রুপসহ বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। আগামী রমজানে পণ্য সরবরাহ যেন ঠিক রাখা যায় সে বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পরামর্শ দেন।

বৈঠকে গভর্নর বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ডলারের দর স্থিতিশীল রয়েছে, সরবরাহ নিয়েও কোনো সংকট নেই। নিম্ন আয়ের মানুষের স্বস্তির জন্য মূল্যস্ফীতি আরো কমাতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশে নামানো। এজন্য বেশি কমাতে হবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি। মূল্যস্ফীতিতে এককভাবে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রয়েছে চালের দরের। চালের দর সহনীয় পর্যায়ে আনতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সরকারি উদ্যোগে আমদানির পাশাপাশি বেসরকারি খাতের ২৪২টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালায়। আমদানি ও সরবরাহ ঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করতে পারলে দর কমবে। এখনকার বাস্তবতায় শুধু চালের দর কমাতে পারলে মূল্যস্ফীতি আরও অন্তত ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমবে।

জানা গেছে, বৈঠকে মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল একটি লিখিত বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সাম্প্রতিক এক নির্দেশনার মাধ্যমে একটি কোম্পানি এক দিনে একই আইটেমের এবং একই সরবরাহকারীর বিপরীতে ৩০ লাখ ডলারের বেশি এলসি খুলতে পারবে না। অথচ মেঘনা গ্রুপ জাহাজ চার্টার করে র-সুগার, সয়াবিন সিড, ক্রুড অয়েল ও গম একই সঙ্গে আমদানি করে। এতে তাদের খরচ কম হয়। আবার কয়লাভিত্তিক সরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানির এক জাহাজ কাঁচামালের মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি থেকে তিন কোটি ডলার। এলসির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের শর্ত তুলে নেওয়ার দাবি জানান তিনি। তিনি জানান, বড় এলসি খোলার সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের পোর্টালে সব তথ্য দিয়ে অনাপত্তি নিতে হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনাপত্তি দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে চার থেকে পাঁচ দিন সময় লাগে। ছুটির দিনসহ এলসির তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পোর্টালে আপলোড করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যেন অনাপত্তি দেওয়া হয় সে দাবি জানান।

বৈঠক শেষে স্বপ্নের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির সাংবাদিকদের বলেন, দীর্ঘদিন পর ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে ডলারের কোনো ঘাটতি নেই। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক চাইছে রিজার্ভ ধরে রেখে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে। একই সঙ্গে পণ্যের সরবরাহে যেন কোনো ঘাটতি না হয়, তা নিশ্চিত করতে।