বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সহযোগিতার আশ্বাস বিশ্ব নেতাদের
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০২:৩৫ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, আইনের শাসন এবং গণতন্ত্রের উন্নয়নে ও বিকাশে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ব নেতারা। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য অর্থায়ন কিভাবে বৃদ্ধি করা যায় তা নিয়েও আলোচনা হয়। বিশ্ব নেতারা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকটের যে কোন সমাধানে পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বুধবার (নিউইয়র্ক স্থানীয় সময়) জাতিসংঘের সাইড লাইনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে তারা এ আশ্বাস দেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রতিটি বৈঠকে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনে স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়েও আলোচনা হয়। একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে তারা প্রয়োজনীয় সহায়তারও আশ্বাস দেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ইতালি, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড ও কসোভো এই চার দেশের সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে অনুরোধ করলে তিনি বাংলাদেশ-ইতালি বাণিজ্য সম্পর্কের উন্নয়নে ইতালি বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দেন।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার দেশ জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ৩০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিতব্য রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল পাঠাবে।
এমনকি ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আশা প্রকাশ করেছেন যে তিনি আগামী ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফর করবেন।
ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের প্রতি তার দেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এছাড়া ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
কসোভার প্রেসিডেন্ট ভিজোসা ওসমানী সাদরিউ তার দেশ উন্নয়নের কৌশল প্রধান উপদেষ্টাকে জানান।
কোসোভা একটি ছোট দেশ হলেও এর অর্থনীতি ইউরোপে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ১৯৯০-র দশকে এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত ছিল, তবে গত দুই বছরে এটি ইউরোপের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। কিভাবে বাংলাদেশ কসোভার মতো উন্নয়ন করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়। বাংলাদেশের উন্নয়নে কসোভার সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানে সাম্প্রতিক বন্যায় প্রাণহানির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়। বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে বাংলাদেশ-পাকিস্তান একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল (ইউএসবিবিসি) আয়োজিত অ্যাডভান্সিং রিফর্ম, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড গ্রোথ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মেটলাইফ, শেভরন এবং এক্সেলেরেটসহ শীর্ষ মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানোর ব্যাপারে ইতিবাচক কথা বলেছেন।
ক্লাব ডি মাদ্রিদের সভাপতি ও স্লোভেনিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দানিলো তুর্ক বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি হোটেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
বৈঠকে দানিলো তুর্ক অধ্যাপক ইউনূসকে সংগঠনের সদস্য হতে আমন্ত্রণ জানান।
তিনি ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে অধ্যাপক ইউনূসের পথপ্রদর্শকমূলক কাজের প্রশংসা এবং এর বৈশ্বিক প্রভাবের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা সম্মানিত হব যদি আপনি আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের চলমান গণতান্ত্রিক রূপান্তর বিষয়ে আপনার মতামত আমরা বিশেষভাবে মূল্যায়ন করব।’
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে দানিলো তুর্ক বলেন, এ আন্দোলন দুনিয়াকে বিস্মিত করেছে এবং এ ধরনের রূপান্তর সম্পর্কে বৈশ্বিক নেতাদের আরও ভালোভাবে জানা প্রয়োজন।
তিনি অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ এবং অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক অনুশীলনকে উৎসাহিত করার প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
বুধবারের এসব বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে চার দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
নিউইয়র্কে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা আজ নিউইয়র্ক সফরের তৃতীয় দিনে চার বিশ্ব নেতার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি বৈঠক খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং আমরা বলব যে এই বৈঠকের মাধ্যমে আমাদের সম্পর্ক ওই দেশগুলোর সঙ্গে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’
মঙ্গলবার বিশ্বব্যাংকের সভাপতি অজয় বাঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে তারা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও আলোচনা করেন।
এর মধ্যে রয়েছে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচন, দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, রাজস্ব ও ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, চট্টগ্রাম বন্দর পুনরুজ্জীবন, আঞ্চলিক অর্থনৈতিক একীকরণ এবং এশিয়াজুড়ে তরুণদের ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা।
এছাড়াও তারা দেশের চুরি হয়ে যাওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার সম্পদ পুনরুদ্ধারের বিষয়েও আলোচনা করেন।
সভাপতি অজয় বাঙ্গা গত ১৪ মাসে অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে তিনি কাজ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এসএস//