ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫,   আশ্বিন ১১ ১৪৩২

নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার ১০৪ জন সফরসঙ্গী নিয়ে সমালোচনার ঝড়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০১ এএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ শুক্রবার

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে থাকা ১০৪ জন সফরসঙ্গীর বিশাল বহর ঘিরে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্ক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সফর–পুস্তিকা অনুযায়ী, সফরসঙ্গীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৬২ জন। তবে সরকারি নথি অনুযায়ী এই সংখ্যা ১০৪, যার মধ্যে আছেন উপদেষ্টা, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সরকারি কর্মকর্তা এবং তিনটি রাজনৈতিক দলের ছয় নেতা। এমন বহর নিয়ে জনগণের টাকায় বিদেশ সফরের এই চর্চাকে 'অপচয়' বলেও মন্তব্য করছেন বিশ্লেষকরা।

সফরে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক নেতারা হলেন— বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সদস্য মোহাম্মদ নকিবুর রহমান (যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুক্ত), জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের শাসনামলে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে বিশাল আকারের প্রতিনিধিদল পাঠানো একটি লজ্জাজনক চর্চায় পরিণত হয়েছিল, যা কোনো কোনো সময় দুই শতাধিকও হতে দেখা গেছে। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তী সরকারও অব্যাহত রাখলো একই চর্চা। বন্ধ হলো না জনগণের টাকার এই অপচয়। নিউইয়র্কে শতাধিক প্রতিনিধি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই সফর নিয়ে সামাজিক যোগায়োগ মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করেছেন অসংখ্য মানুষ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে বলেছেন, অতীতের মতো এবারও শতাধিক প্রতিনিধি পাঠিয়ে হতাশ করেছে সরকার। গত বছর ৫৭ জন প্রতিনিধি প্রেরণ করে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হয়েছিল। এবার তার উল্টোটা হলো। আমরা জানতে চাই, এই বড় প্রতিনিধিদল গঠনের পেছনে কী যুক্তি রয়েছে? তাদের কার কী ভূমিকা থাকবে? জাতিসংঘের আলোচ্য বিষয়গুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা কতটুকু? জনগণের টাকায় বিদেশ সফর করলে এর ফলাফল ও জবাবদিহি থাকা উচিত।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর বিদেশ সফরের ব্যয় হ্রাসে একটি পরিপত্র জারি করেছিল। কিন্তু সেই পরিপত্রের সঙ্গে শতাধিক সদস্যের এই প্রতিনিধি দলের প্রেরণ পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। এটি সরকারের অবস্থান নিয়েও জনমনে প্রশ্ন তৈরি করছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুয়ায়ী, অতীতে রাজনৈতিক সরকারের আমলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন উপলক্ষে ১৫০ থেকে ২০০ জন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছেন। ২০১৪ সালে ১৮০ জন সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে যান তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৯ সালে ২৯২ জন সফরসঙ্গী নিয়ে নিউইয়র্কে যান তিনি। তবে ২০০৭-০৮ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সফরসঙ্গীর কলেবর ছোট ছিল।

এদিকে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা সফরসঙ্গীদের সংখ্যা নিয়েও তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। পুস্তিকা অনুযায়ী সফরসঙ্গীর সংখ্যা ৬২। আর সরকারি নথি অনুযায়ী এই সংখ্যা ১০৪। এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তার বলেছেন, সরকার প্রধান বা শীর্ষনেতাদের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে দুইভাবে সফরসঙ্গীদের তালিকা করা হয়। একটি হলো সফর–পুস্তিকা, এতে শীর্ষ নেতার সঙ্গে একই ফ্লাইটে যাওয়া ব্যক্তিদের নাম থাকে। অন্যটি হলো সরকারি তালিকা: এতে সেই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর নামও থাকে, যারা পরে যুক্ত হন, ভিন্ন ফ্লাইটে আসেন, বা অন্য দূতাবাস থেকে অস্থায়ীভাবে কাজ করতে আসেন।

দুই তালিকাতেই যুক্ত আছেন চার উপদেষ্টা— আসিফ নজরুল, মো. তৌহিদ হোসেন, মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও আদিলুর রহমান খান। উপদেষ্টা পদমর্যাদার দুজন হলেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার একজন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন।

সরকারি নথি অনুযায়ী, এবার প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গীর তালিকায় নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়েছেন ১৯ জন ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন ৪৭ জন।

অনেকেই মনে করছেন, গণআন্দোলনের ফসল হিসেবে চিহ্নিত নির্দলিয় অন্তর্বতী সরকার অতীতের রাজনৈতিক সরকারের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বড় বহর নিয়ে বিদেশ সফরের সংস্কৃতি বজায় রাখলো।

এসএস//