বাবা-মা ও স্ত্রীকে ‘প্রতিবন্ধী’ দেখিয়ে সরকারি ভাতা নেন কৃষকলীগ নেতা
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১০:০৫ এএম, ৬ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার | আপডেট: ১০:০৬ এএম, ৬ অক্টোবর ২০২৫ সোমবার

ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রতারণার এক চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আলোচনায় এসেছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলার বাধাইড় ইউনিয়নের কৃষকলীগ নেতা ও ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। অভিযোগ উঠেছে, তিনি তার বাবা, মা ও স্ত্রীকে ভুয়া প্রতিবন্ধী দেখিয়ে সরকারি ভাতা নিচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, এই দম্পতি আরও ৩৫ জন সুস্থ নারী-পুরুষকে ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়েছেন, যার মাধ্যমে প্রকৃত অসচ্ছল ও অসহায় প্রতিবন্ধীরা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলম বাধাইড় ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, আর তার স্ত্রী পলিয়ারা একই ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী সদস্য। তারা স্থানীয় প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে বেপরোয়া ছিলেন। এ সময় তারা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় নিজেদের স্বজন ও অনুসারীদের জন্য ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড সংগ্রহ করেন।
এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা সাদিউর রহমান তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)র কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর তার পিতা নুরুল ইসলাম, মা জাহানারা বেগম ও স্ত্রী পলিয়ারাকে সুস্থ থাকা সত্ত্বেও দৃষ্টি ও শারীরিক প্রতিবন্ধী সাজিয়ে ভুয়া সনদ তৈরি করেছেন। আরও অন্তত ১৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের কেউই প্রকৃত প্রতিবন্ধী নন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রী প্রতিটি কার্ডের জন্য সাত থেকে নয় হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। এমনকি এক প্রকৃত প্রতিবন্ধী আদিবাসী যুবক সুশীলের কাছ থেকে চার হাজার টাকা নিয়েও কার্ড দেননি। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও প্রমাণও প্রকাশ পেয়েছে, যেখানে ভুক্তভোগী নিজেই প্রতারণার বর্ণনা দিয়েছেন।
অভিযোগকারী সাদিউর রহমান বলেন, “জাহাঙ্গীর আলম যুবলীগ নেতা ময়নার দাপটে বেপরোয়া ছিলেন। তার প্রভাবেই তিনি স্ত্রী ও আত্মীয়দের ভুয়া প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়ে ভাতা নিচ্ছেন। সচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকেও টাকা নিয়ে কার্ড দিয়েছেন।”
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর বলেন, “আমার মা অসুস্থ, এখন কথা বলতে পারব না। পরে সাক্ষাতে বলব।”
তানোর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হোসেন খান বলেন, “আমরা তদন্ত করছি। অভিযোগে উল্লেখ থাকা ১৭ জনের মধ্যে সাতজনের কার্ড পাওয়া গেছে, যার মধ্যে জাহাঙ্গীরের বাবা-মা ও স্ত্রীও রয়েছেন। তাদের ভাতা বন্ধ করা হয়েছে এবং নোটিশ দেওয়া হয়েছে। যাচাই শেষে যদি দেখা যায় তারা প্রকৃত প্রতিবন্ধী নন, তবে ইউপি সদস্য দম্পতির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এএইচ