ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে : সেনাবাহিনী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ০৭:৫২ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার | আপডেট: ০৭:৫৭ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২৫ শনিবার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চার্জশিটে নাম আসা সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৫ জনকে ঢাকায় সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। হেফাজতে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত এবং একজন এলপিআর-এ থাকা কর্মকর্তা।
শনিবার (১১ অক্টোবর) ঢাকা সেনানিবাসের মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মামলা–সংক্রান্ত বিষয়ে সেনাবাহিনীর পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মেজর জেনারেল হাকিমুজ্জামান বলেন, যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে সেনা হেফাজতে রয়েছেন। আমরা মোট ১৬ জনকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য বলেছিলাম, তাদের মধ্যে ১৫ জন এসে হেফাজতে রয়েছেন।
মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, গত ৮ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথম দুইটা চার্জশিট জমা পরে। এরপর তৃতীয় আরেকটা চার্জশিট জমা পরে। এই সংবাদটি আসা শুরু করেছে বেলা ১১টা থেকে ১টার মধ্যে। আমারা টিভি স্ক্রলের মাধ্যমে জানতে পেরেছি চার্জশিট জমা পরেছে এবং ট্রাইব্যুনাল এক্সেপটেড হয়েছে। চার্জশিটগুলোর মধ্যে একটা ছিলো গুম সংক্রান্ত যারা তখন ডিজিএফআই এ কর্মরত ছিলো তাদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ। আরেকটা ছিলো র্যাবের টিএফআই নিয়ে, আর আরেকটা ছিলো ৪-৫ আগস্টের রামপুরার ঘটনা নিয়ে। এরপর সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়ে গেলো। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার পর আইজিপির কাছে চলে যায়, নিয়ম অনুযায়ী এবং ২২ তারিখ পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা এখন পর্যন্ত কোনো চার্জশিট কিংবা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাইনি। চার্জশিটে প্রায় ২৫ জন সেনা কর্মকর্তার নাম এসেছে। এর মধ্যে অবসরে আছেন ৯ জন কর্মকর্তা, এলপিআরে আছেন ১ জন কর্মকর্তা ও কর্মরত আছেন ১৫ জন। যারা অবসরে চলে গেছেন তাদের প্রতি আমাদের সেনা আইন ওইভাবে খাটে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বাংলাদেশের সব আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ তারিখ কর্মরত ১৫ ও এলপিআরে থাকা ১ জন সেনা কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে আসার জন্য একটা আদেশ সংযুক্তি করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আদেশে তাদের বলা হয়েছে ৯ তারিখে তারা যেন ঢাকা সেনানিবাসে সেনা হেফাজতে চলে আসেন। আমরা কিন্তু এখনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাইনি বা পুলিশও আমাদেরকে কিছু জানায়নি। তারপরও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার কারণে স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব কর্মকর্তাদের হেফাজতে আসার জন্য আদেশ দিয়ে দেয়।
মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই ধরনের প্র্যাকটিস করে, সংবেদনশীল কেসে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, শুরুতে তাদের আমরা হেফাজতে নিয়ে থাকি। পরে প্রয়োজনমতো কোর্ট-মার্শাল বা অন্যান্য আইনানুগ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। আমরা যাদেরকে হেফাজতে আসার জন্য বলেছি, তাদের অধিকাংশই সাড়া দিয়েছে; তবে এক জন সাড়া দেননি। ওই কর্মকর্তা ৯ তারিখ পর্যন্ত প্রতিক্রিয়া জানাননি। ১০ অক্টোবর আমরা তার সঙ্গে ও তার পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করি। জানতে পারি তিনি ৯ অক্টোবর সকালে বাসা থেকে বের হয়ে ছিলেন, একজন আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে বের হয়েছিলেন, কিন্তু পরে বাড়ি ফেরেননি এবং পরিবারের সঙ্গে তার মোবাইলফোনেও যোগাযোগ স্থাপন করা যায়নি। তিনি মেজর জেনারেল কবির।
তিনি বলেন, এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নিয়ম অনুযায়ী তাকে ‘ইলিগ্যাল এবসেন্ট’ হিসেবে ঘোষণা করি। এছাড়া ১০ অক্টোবর আমরা এ বিষয়ে আরও কিছু আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। একই সঙ্গে ডিজিএফআই, এনএসআই ও বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্থলবন্দর, বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর দিয়ে তিনি অবৈধভাবে দেশের বাইরে যেতে না পারে- এর ব্যবস্থা করা হোক। আমরা তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা-তেও লোক পাঠিয়েছি। তিনি দেশের বাইরে চলে যেতে পারেন- এই আশঙ্কাকে মাথায় রেখে কাঠামোগতভাবে অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। আমি নিজে ডিজি (ডিজিএফআই), ডিজি এনএসআই এবং ডিজি বিজিবির সঙ্গে এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছি।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সাবেক ও বর্তমান ২৪ জন সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। গত ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন। আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে তাদের গ্রেপ্তার করে ২২ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
এসএস//