ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৩ অক্টোবর ২০২৫,   কার্তিক ৭ ১৪৩২

সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত, দেশেই উৎপাদন হবে বালাইনাশক

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২৭ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার | আপডেট: ০৯:৪২ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২৫ বুধবার

আর আমদানির ওপর নির্ভরতা নয়, এখন থেকে বাংলাদেশেই উৎপাদন হবে সকল ধরনের বালাইনাশক ওষুধ। এতে রপ্তানির দ্বারও উন্মোচিত হবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা। 

সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ‘স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচনের’ উপরে এটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ এগ্রোকেমিক্যাল ম্যানুফেকচারার্স এসোসিয়েশনের (সিজিডিএল) নেতৃবৃন্দসহ ১১টা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। 

সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক উৎপাদন ও রপ্তানির দ্বার উন্মোচনের লক্ষ্যে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় দুটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ওষুধ  প্রশাসন অধিদপ্তর যে প্রক্রিয়ায় উপকরণ ও কাঁচামাল আমদানির অনুমোদন প্রদান, মূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং আমদানি ও উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, মন্ত্রণালয় তার অধস্তন দপ্তরের মাধ্যমে অনুরূপ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারে। এতে ওষুধের মতো স্থানীয়ভাবে বালাইনাশক, কীটনাশক উৎপাদন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে ও আমদানির বিকল্প শিল্প তৈরি হবে এবং রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হবে।

দ্বিতীয় সিদ্ধান্তটি হলো-উক্ত উপকরণ/কাঁচামালের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আমদানি সহজীকরণ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে শুল্ক সুবিধা ইত্যাদির জন্য প্রেরণ করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে দেশে কীটনাশকের বাজার সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার। যার ৫৫ শতাংশ বা ৪ হাজার ১২৫ কোটি টাকার বাজার রয়েছে সাতটি বহুজাতিক কোম্পানির হাতে। আর স্থানীয় আমদানিকারকেরা চাহিদার প্রায় ৪১ শতাংশ বা ৩ হাজার ৭৫ কোটি টাকার কীটনাশক আমদানি করছে। কীটনাশকের বাজারে দেশি উৎপাদনকারীদের হিস্যা মাত্র ৪ শতাংশ বা ৩০০ কোটি টাকার।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কীটনাশকের আমদানি পর্যায়ে শুল্কহার ৫ শতাংশ। এর বিপরীতে কীটনাশক উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহার ৩০ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত। এ কারণে চাহিদার বড় অংশই আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হচ্ছে।

তথ্য বলছে, সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি সবচেয়ে বেশি বালাইনাশকের ফিনিশড পণ্য আমদানি করে। সে হিসাবে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যবসা রয়েছে তাদের। তবে কোম্পানিটির ৪৬ ভাগ মালিকানা বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের।

এর বাইরে জার্মানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বায়ার ক্রপসায়েন্স। প্রতি বছর প্রায় ৪শ থেকে ৫শ কোটি টাকার ফিনিশড পণ্যের ব্যবসা করে তারা। এ ছাড়াও ভারতীয় বহুজাতিক কোম্পানি ইউপিএল, জার্মানভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি বিএএসএফ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি এফএমসি করপোরেশন পরোক্ষভাবে এখানে ব্যবসা করছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফিনিশড পণ্যের পরিবর্তে যদি কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে অবাধ এবং সহজ করা হতো সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো যেতো। 

বালাইনাশক মূলত ফসলের ক্ষতিকর উদ্ভিদ বা প্রাণী, যেমন—পোকামাকড়, জীবাণু, আগাছা, ইঁদুর ইত্যাদি দমনে ব্যবহৃত হয়। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কৃত্রিম বাধাগুলো দূর করা দরকার। জাতীয় স্বার্থে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎপাদনে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া উচিত। উৎপাদনের সুযোগ দেওয়ার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবশেষে সরকারের পক্ষ থেকে এমন সিদ্ধান্ত এলো।

বাংলাদেশ অগ্রকেমিক্যালস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কেএসএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারকে ধন্যবাদ জানতে চাই যে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে এসে উৎপাদনকারীদের দাবিগুলো আমলে নিয়েছে তাই। এ সরকার জনবান্ধব সরকার। উৎপাদনকারীদের সহযোগিতা করার অর্থ কৃষকের সাথে কাজ করা এবং জনগণের অধিকার নিয়ে কাজ করা । যদি এনবিআর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেয় তাহলে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে আর কোনো বালাইনাশক আমদানি করতে হবে না । ওষুধ শিল্পের ন্যায় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।

এএইচ