ঢাকা, সোমবার   ০৩ নভেম্বর ২০২৫,   কার্তিক ১৯ ১৪৩২

স্ট্রোক রোগে সময়ের মূল্যই সবচেয়ে বড় অস্ত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪৮ পিএম, ২ নভেম্বর ২০২৫ রবিবার

“প্রতিটি মূহুর্ত মূল্যবান” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষে রোববার (২ নভেম্বর) ঢামেক হাসপাতাল চত্বরে বর্ণাঢ্য র‌্যালি শেষে ট্রেনিং কমপ্লেক্স গ্যালারীতে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম। নিউরোসার্জারি বিভাগের ডা. সুজন শরীফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের এন্ডোভাসকুলার ও স্ট্রোক সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহেদুর রহমান শিকদার অনুষ্ঠানে স্ট্রোক বিষয়ক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন,প্রতি মিনিটে প্রায় ১ দশমিক ৯ মিলিয়ন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ (নিউরন) মারা যায়। তাই স্ট্রোকের রোগীদের জন্য সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে নেওয়া গেলে রোগীকে পুরোপুরি এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আনা গেলে জীবন সুরক্ষা পায়। থেরাপির মাধ্যমে এসব রোগীদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরানো সম্ভব বলেও জানান তিনি।

স্ট্রোক যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে জানিয়ে ডা. শাহেদুর রহমান বলেন, ‘তবে আশার কথা হলো, এসব রোগীদের চিকিৎসা যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে দেশেই হচ্ছে। স্ট্রোক ইউনিট ছাড়া স্ট্রোকের সফল ও কার্যকর চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব হয় না, এ কারণে আরও স্ট্রোক ইউনিট প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্বারোপ করে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান বলেন, এখন রোগীরা বুঝতে পারে না তাদের স্ট্রোক হয়েছে কিনা, এই সচেতনতা মানুষের মাঝে তৈরি করাটা জরুরী হয়ে পড়েছে। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে প্রতিরোধ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেক রোগের ক্ষেত্রে টাকা বা ভালো চিকিৎসা নিয়ে হয়তো সুস্থ হওয়া সম্ভব কিন্তু স্ট্রোকের ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক চিকিৎসা না নিলে হয়তো মৃত্যু হতে পারে বা বরণ করে নিতে হবে পঙ্গুত্বের জীবন। সে জন্য সচেতনতা ও প্রতিরোধ এই রোগের সবচেয়ে বড় সমাধান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি চার জনে একজনের স্ট্রোক হয়, তবে এই স্ট্রোক নব্বই ভাগই প্রতিরোধ করা সম্ভব। এতে করে আমাদের আর চিকিৎসা পর্যন্ত যাওয়ার প্রয়োজনই হল না। 

তিনি আরও বলেন, সারাদেশে স্ট্রোক সেন্টার হওয়া প্রয়োজন এবং মানুষের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে সারা দেশকে স্ট্রোক সেন্টারের আওতায় নিয়ে আসা দরকার। স্ট্রোকে সচেতনতার জন্য সামাজিক আন্দোলন তৈরি করতে হবে। 

অধ্যাপক ডা. ফজলে এলাহী মিলাদ বলেন, অসংক্রামক রোগের ওষুধ বন্ধ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তিনি সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনের আহ্বান জানান। 

ঢামেক হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, স্ট্রোকের সকল রোগী, বিশেষ করে বয়স্কদের সার্জারি করা সম্ভব হয় না। সেই সকল রোগীদের ফিজিক্যাল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে চিকিৎসা দেওয়া হয়। 

অনুষ্ঠানে অন্য বক্তারা স্ট্রোকের চিকিৎসায় হটলাইন চালুর পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে স্ট্রোক অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু করার বিষয়েও তারা মত দেন। এছাড়া সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারসহ অন্যান্য অংশিজনদের অবদান রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

এমআর//