এনডিএফ’র আয়োজনে জাতীয় সীরাত কনফারেন্স ও কালচারাল ফেস্ট অনুষ্ঠিত
একুশে টেলিভিশ
প্রকাশিত : ০৯:১৭ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ শুক্রবার
ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) আয়োজিত জাতীয় চিকিৎসক সীরাত কনফারেন্স ও কালচারাল ফেস্ট ২০২৫ আজ রাজধানীর শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন হলে উৎসবমুখর ও আধ্যাত্মিক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সীরাতের আলোকে চিকিৎসকদের নৈতিকতা, মানবসেবা, নেতৃত্ব ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন বিষয়ে দিনব্যাপী নানা আলোচনা, সেমিনার ও সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়। এতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশ নেন বহু চিকিৎসক, নীতিনির্ধারক, শিক্ষক এবং গবেষক।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনডিএফ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান। প্রধান আলোচক ছিলেন ড্যাফোডিল ইসলামিক সেন্টারের ডিরেক্টর শায়খ মোখতার আহমাদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দেন কসোভার সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী রিফাত লতিফি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, “রাসূলুল্লাহ ﷺ মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠতম রোল মডেল। স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্নতা, খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, মানসিক সুস্থতা—যে বিষয়গুলো আজ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে বৈজ্ঞানিক নীতি হিসেবে স্বীকৃত, সেগুলোর বাস্তব প্রয়োগ আমরা নবীজীর জীবনাচরণেই দেখি। তিনি শত বছর পূর্বে মানবতার জন্য যে উদাহরণ রেখে গেছেন, তা আজও চিকিৎসাবিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, “চিকিৎসা পেশা কেবল রোগ নিরাময়ের নয়; এটি গভীর নৈতিকতা, দায়বদ্ধতা ও মানবসেবার সমন্বয়। রোগী শুধু ওষুধ পায় বলে সুস্থ হয় না; সে চিকিৎসকের আচরণ, আন্তরিকতা, সহানুভূতি এবং মানসিক সমর্থন থেকে নতুন শক্তি পায়। তাই একজন চিকিৎসকের চরিত্রই অনেক সময় রোগীর সুস্থতার পথে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।”
তিনি চিকিৎসকদের উদ্দেশে আহ্বান জানান, সীরাতের আদর্শ ও আধুনিক চিকিৎসা জ্ঞানের সমন্বয়ে সেবা দিলে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা আরও মানবিক ও ফলপ্রসূ হবে।
প্রধান আলোচক শায়খ মোখতার আহমাদ বলেন, “ইসলামে চিকিৎসাকে একটি পবিত্র আমানত বলা হয়েছে। রাসূল ﷺ অসুস্থ মানুষের খোঁজখবর নেওয়া, চিকিৎসা সহজলভ্য করা এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সীরাত কেবল ইতিহাস নয়—এটি চিকিৎসকদের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ নৈতিক কাঠামো।” তিনি উল্লেখ করেন, সীরাতভিত্তিক জীবনদর্শন গড়ে উঠলে চিকিৎসক-রোগীর সম্পর্ক আরও বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠবে।
কসোভার সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী রিফাত লতিফি বলেন, “স্বাস্থ্য এখন বৈশ্বিক দায়িত্ব। এক দেশের চিকিৎসকদের জ্ঞান ও দক্ষতা অন্য দেশের মানুষের জীবন বাঁচাতে পারে। মুসলিম চিকিৎসকরা বিশ্বের স্বাস্থ্যখাতে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো নৈতিকতা, মানবিক মূল্যবোধ ও পেশাগত যোগ্যতা ধারণ করেন।”
তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, “আপনারা শুধু দেশের নয়; বৈশ্বিক মানবতারও সেবক। গবেষণা, উদ্ভাবন, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং নৈতিক চিকিৎসা চর্চায় আপনাদের এগিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি।” তিনি এ আয়োজনকে “আন্তর্জাতিক মানের অনুপ্রেরণাদায়ী সম্মেলন” হিসেবে অভিহিত করেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই বিপ্লবে চিকিৎসকদের অবদান স্মরণে একটি বিশেষ স্মারক উন্মোচন করা হয়। স্মারকে সংকটময় সময়ের সাহসী চিকিৎসাসেবা, ত্যাগ ও পেশাগত দায়িত্ববোধের ঐতিহাসিক ভূমিকা তুলে ধরা হয়। এটি দেশের চিকিৎসক সমাজের আত্মত্যাগ ও সাহসিকতার প্রতীক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
দিনব্যাপী আলোচনা শেষে অনুষ্ঠিত হয় মনোমুগ্ধকর কালচারাল ফেস্ট। চিকিৎসকদের পরিবেশনায় সীরাতভিত্তিক নাশিদ, আবৃত্তি, সংগীত ও মননশীল পরিবেশনা উপস্থিত অতিথি ও দর্শকদের মুগ্ধ করে।
সীরাতের আলোয় মানবিক চিকিৎসা ও বৈশ্বিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে শেষ হয় এবারের এনডিএফ সীরাত কনফারেন্স ও কালচারাল ফেস্ট ২০২৫।
