ঢাকা, বুধবার   ০৩ ডিসেম্বর ২০২৫,   অগ্রাহায়ণ ১৮ ১৪৩২

প্রতিবন্ধকতা নয়; অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০১:১৪ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার | আপডেট: ০১:১৯ এএম, ৩ ডিসেম্বর ২০২৫ বুধবার

চলার পথে প্রতিবন্ধকতা যে আসবেই, তা আবশ্যক। তাই বলে কি আমরা থেমে যাই? নাকি থেমে যায় আমাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষা। নিশ্চয়ই না বরং আমরা খুঁজে নিই নতুন পথের দিশা। আজ কথা বলবো তাদের নিয়ে, যাদের প্রতিবন্ধকতাই জীবনের অংশ।

আজ ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস, ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ (UN) আনুষ্ঠানিকভাবে এ দিনটিকে প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। প্রতি বছর এ দিনটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো, প্রতিবন্ধকতাকে করুণতা বা বোঝা হিসেবে দেখার পরিবর্তে তাদের প্রতি সহমর্মিতা এবং সহযোগিতার মনোভাব তৈরি করা। সমাজের অন্যদের মতো তাদেরও সমান অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান নিশ্চিত করা এবং তাদের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে বিবেচনায় রেখে সবার জন্য সহজপ্রাপ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি সমাজ গড়ে তোলা।

এ বছর প্রতিবন্ধী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো,
"Fostering disability-inclusive societies for advancing social progress.অর্থাৎ "প্রতিবন্ধিতা-অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি"—
যার উদ্দেশ্য: সমাজের অগ্রগতিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। শুধুমাত্র অংশগ্রহণই নয়, বরং তাদের চাহিদা, অভিজ্ঞতা ও ক্ষমতাকে প্রাধান্য দেওয়ার পাশাপাশি থাকবে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্বাধীনতা।

প্রতিবন্ধকতা হতে পারে শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক—যা একজন ব্যক্তির দৈনন্দিন কাজ, চলাফেরা, সামাজিক যোগাযোগ ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২১ সালের জাতীয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যার ২.৮ শতাংশ বা প্রায় ৪০ লাখ ৩৩ হাজার ২৬৮ জন প্রতিবন্ধী। ২০২৩ সালের একটি জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রতি হাজারে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা ২৮.২ জন, যা প্রায় ২.৮ শতাংশ।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন চিকিৎসা ও পুনর্বাসন পেশাজীবী। এমনই এক পেশা হলো স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি। স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি হলো একটি বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসাসেবা, যেখানে ভাষার ব্যবহারে অসুবিধা, কথা বলা ও বোঝার সমস্যা, উচ্চারণ বা কণ্ঠস্বরজনিত সমস্যা, খাদ্য চিবানো ও গলাধঃকরণ সম্পর্কিত সমস্যার চিকিৎসা দেওয়া হয়। শিশু থেকে বয়স্ক—যে কোনো বয়সের ব্যক্তির জন্য স্পিচ অ্যান্ড ল্যাংগুয়েজ থেরাপি প্রয়োজন হতে পারে।

বাংলাদেশের মোট প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ যোগাযোগের সমস্যা ও খাবার চিবানো ও গলাধঃকরণজনিত সমস্যায় ভুগছেন। তাই বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে স্পিচ থেরাপির চাহিদা আসলে ব্যাপক। যদিও বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে এ থেরাপি সেবা সহজলভ্য নয়। তাই প্রতিনিয়ত অসংখ্য রোগী সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে এ চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে হলে দেশের সকল সরকারি হাসপাতালে এ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন সরকারি পর্যায়ে সচেতনতা ও উদ্যোগ।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব এবং তাদের অধিকার। তাই আমাদের সকল শ্রেণির পেশার মানুষের উচিত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঠিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসা।"

 

লেখা: শিক্ষার্থী, বি.এস.সি ইন স্পিচ অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ থেরাপি (তৃতীয় বর্ষ) বিএইচপিআই, সিআরপি