ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫,   অগ্রাহায়ণ ২০ ১৪৩২

শীতের আগমনী ছোঁয়ায় রঙে রঙে সেজেছে গদখালী,টিউলিপ চাষে নতুন সম্ভাবনার ইঙ্গিত

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:০২ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৯:০৪ পিএম, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার

শীতের আগমনী হাওয়ায় আবারও প্রাণ ফিরে পেয়েছে ‘ফুলের রাজধানী’ খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারা এলাকা। মাঠজুড়ে রঙিন ফুলের চারা, কুয়াশা ভেদ করে ব্যস্ত চাষির পদচারণা, চারদিকে ছড়িয়ে আছে ফুলের গন্ধ আর উৎসবের আমেজ। 

ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল—ফুলের ভরা মৌসুম সামনে রেখে চলছে জোর প্রস্তুতি। শীতের শুরুতেই রঙে রঙে ভরে উঠেছে গদখালী, ফুটতে শুরু করেছে নতুন আশার ফুল। তার সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে টিউলিপের সম্ভাবনাময় চাষ—যা হয়তো খুলে দেবে বাংলাদেশের ফুলচাষে এক নতুন অধ্যায়।

চাষিরা এখন সকাল-সন্ধ্যা ব্যস্ত বীজতলা তৈরি, জমিতে সেচ, আগাছা নিড়ানো, স্প্রে এবং পরিচর্যার কাজে। কারণ, আসন্ন বিজয় দিবস, নববর্ষ, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও শহীদ দিবসের বাজার ধরাই এখন তাদের মূল লক্ষ্য।

এ মৌসুমে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, গোলাপ, গাঁদা, জারবেরা, জিপসি ও চন্দ্রমল্লিকার পাশাপাশি পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষ করে ইতোমধ্যে নজর কেড়েছেন কয়েকজন তরুণ চাষি। 

টিউলিপ চাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, “টিউলিপ সাধারণত ৫ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভালো জন্মায়। বাংলাদেশে এমন আবহাওয়া বিরল হলেও গদখালীর মাটি ও শীতের হালকা ঠান্ডা টিউলিপ চাষে আশাব্যঞ্জক ফল দিচ্ছে।”

ফুল উৎপাদন ও বিপণনে দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে ঝিকরগাছা উপজেলা। গদখালী, নাভারণ, পানিসারা ও মাগুরা ইউনিয়নের একাংশকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় ফুলচাষের বাণিজ্যিক অঞ্চল। এখানকার উৎপাদিত ফুল প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরে পাঠানো হয়। পাশাপাশি ইউরোপের পাঁচটি দেশেও রপ্তানি হচ্ছে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, জারবেরা, রজনীগন্ধাসহ নানা জাতের ফুল। ফুলচাষ এই অঞ্চলের হাজারো কৃষক–শ্রমিক পরিবারের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

গদখালী ফুলচাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর জানান, যশোর অঞ্চলে প্রায় সাত হাজার ফুলচাষি ১২ শতাধিক হেক্টর জমিতে ফুল উৎপাদন করেন। দেশের মোট ফুলের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ সরবরাহ হয় এখান থেকে। তিনি বলেন, “গ্রীষ্মের অতিবৃষ্টি ও তীব্র গরমে কিছু ক্ষতি হয়েছিল। তবে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিদের মুখে হাসি ফিরেছে। সব ঠিক থাকলে এবার শত কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।”

অন্যদিকে, মৌসুম সামনে রেখে গদখালী ফুলবাজারও সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখান থেকে কোটি টাকার ফুল বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৪–৫ টাকা, রজনীগন্ধা ৬ টাকা, গ্লাডিওলাস ১২–১৫ টাকা এবং জারবেরা ১২–১৪ টাকায়।

স্থানীয় কৃষিবিদরা মনে করছেন, দেশে বাণিজ্যিকভাবে টিউলিপ চাষের সম্ভাবনা যাচাইয়ে গদখালী হতে পারে নতুন দিগন্তের সূচনা।

ঝিকরগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, বর্তমানে এ উপজেলায় প্রায় ৬৪০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ রয়েছে। বিদেশি কিছু ফুলও পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এ অঞ্চলের প্রায় এক হাজার কৃষক ও ৫০ হাজারের বেশি শ্রমিক ফুলচাষের সঙ্গে যুক্ত। বছরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ফুলের লেনদেন হয় এখানে। কৃষকদের আমরা সার্বিক সহযোগিতা করছি—যাতে ফুলচাষের পরিধি আরও বিস্তৃত হয়।”

শীতের শুরুতেই রঙিন গদখালী আবারও প্রমাণ করছে—বাংলাদেশের ফুলচাষ শুধু সৌন্দর্য নয়, সম্ভাবনা ও অর্থনীতিরও শক্ত ভিত্তি।

এমআর//