ওসমান হাদির জানাজা
হাদির জানাজায় উপস্থিতির সংখ্যা নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
C. Analyst
প্রকাশিত : ০৭:৪৯ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার | আপডেট: ০৮:০৫ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার
দেশের আপামর মানুষকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন বিপ্লবী শরীফ ওসমান হাদি। হাদি চেয়েছিলেন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দেশের আইন প্রণয়নে ভূমিকা রাখতে। ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজে ন্যায়বিচার কায়েম করা ছিল তার আজীবন লালিত স্বপ্ন। বাংলাদেশে সকল আধিপত্যবাদের কবর রচনা করা ছিলো হাদির চেতনা। সেই শহিদ হাদির চেতনা ছুঁয়ে গিয়েছে দেশের লাখো মানুষকে। তাইতো তার জানাজায় লাখ লাখ মানুষ হাজির হয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। যে হাদি হাসিমুখে বলেছিলেন ঢাকা-৮ আসন থেকে যদি ৫০০ ভোট পান তবে তাতেই তিনি খুশি হবেন। আততায়ীর বুলেট হাদির প্রাণ ছিনতাই করতে পারলেও হাদির সেই ৫০০ ভোট কেড়ে নিতে পারেনি। গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের প্রাঙ্গণে “অন্তত ৫ লাখ” মানুষের উপস্থিতি জানান দিয়ে গেলো, হাদির ৫০০ ভোট হাজার গুণে ফিরে এসেছে।
এদিন তার প্রাণহীন দেহ ঠিকই পৌছেছিল সংসদে, কিন্তু তখন হাদি পৌছে যান জাগতিক সংসদের অনেক ঊর্ধ্বে। বিভিন্ন পর্যালোচনা বলছে, শরীফ ওসমান হাদির জানাজায় উপস্থিত হন কয়েক লাখ মানুষ। তবে হাদির জানাজায় আসলে কত লোক হয়েছে, তা বাস্তবে সঠিকভাবে বলা কঠিন।
বুয়েট থেকে জানাজায় অংশ নেওয়া একদল শিক্ষার্থী একটি বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন, “হাদির জানাজায় প্রায় অন্তত ৮ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছে”।
তারা বলছেন, “নিজেদের অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা থেকে এবং বিভিন্ন পয়েন্টে উপস্থিত মানুষের সাথে কথা বলে আমরা হিসাব করেছি যে- আজকে শহীদ শরিফ ওসমান হাদীর জানাজায় উপস্থিত মানুষ ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গ মিটারের মতো জায়গা দখল করেছিল। এরকম ঘনত্বের জনসমাগমে উপস্থিত মোট মানুষের সংখ্যা ১ মিলিয়ন বা ১০ লক্ষের কাছাকাছি হতে পারে”।
একুশে টেলিভিশন সংসদ ভবনের আশেপাশের এলাকার রাজউকের ডিটেইলড ম্যাপ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে এবং ড্রোন ফুটেজের সাথে সমন্বয় করে দেখার চেষ্টা করেছে যে জানাজায় উপস্থিতির আনুমানিক সংখ্যা কত। আমাদের বিশ্লেষণে দেখা যায়, মানিক মিয়া এভিনিউ, সংসদের দক্ষিণ প্লাজা ও মাঠ, খামার বাড়ি পর্যন্ত সঙ্গযোগ সড়ক, এবং আসাদ গেটের জনসমাগমের অংশ নিয়ে আনুমানিক ১,৬৮,০০০ বর্গ মিটার এলাকায় জামায়েত হয়েছিল। বাস্তব ঘণত্ব অনুসারে, প্রতি বর্গমিটারে ৪ থেকে ৫ জন হিসেব করলে সেখানে অন্তত ৬,৭২,০০০ থেকে ৮,৪০,০০০ জন মানুষের উপস্থিতি সম্ভব। এছাড়া শুরুর দিকের ড্রোন শটগুলোতে সংসদ ভবনের পূর্ব দিকের মাঠ খালি দেখা গেলেও, জানাজার পূর্বেই ঐ মাঠও পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শী সুত্রে জানা যায়।
হাদির জানাজায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা আর মানিক মিয়া এভিনিউতে যে জনস্রোত নেমেছে, তা আসলে সঠিক ভাবে গুনে বের করা দুষ্কর। এসব জনস্রোত গণনায় “আয়তন হিসেবে স্ট্যাটিস্টিক্যাল ভাবে” আনুমানিক বিচারই সারা বিশ্বে বেঞ্চমার্ক হিসেবে গৃহীত। সেই হিসেবে শরীফ ওসমান হাদির জানাজায় নিম্নে ৫ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ১ মিলিয়নেরও অধিক উপস্থিতি হতে পারে। তবে সংখ্যাটা যতই হোক, ওসমান হাদি যে দেশের কোটি মানুষের মনে আলোড়ন তুলে ভালোবাসার একটা স্থান লাভ করেছেন, সেটা কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। তাইতো উপস্থিত জনতা স্লোগান তুলেছিলো, “আমরা সবাই হাদি হবো, যুগে যুগে লড়ে যাব”।
