কানায় কানায় পূর্ণ সংবর্ধনাস্থল, জনসমুদ্রে পরিণত রাজধানী
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:১৮ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ বৃহস্পতিবার
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার তিনশ’ ফিট সড়ক পরিণত হয়েছে মানুষের মহাসমুদ্রে। ভোরের আলো ফোটার আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের ঢলে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে পুরো সংবর্ধনাস্থল। কোথাও দাঁড়ানোর জায়গা নেই, জনস্রোতের মাঝে শুধু উচ্ছ্বাস আর প্রত্যাশা।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তিনশ’ ফিট সড়ক, তার আশপাশের অলিগলি এবং সংযোগ সড়কগুলোতে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। সকাল ৮টার দিকে দৃশ্যটি আরও ঘনীভূত হয়।
মঞ্চের সামনে তো বটেই, আশপাশের প্রতিটি জায়গায় দাঁড়িয়ে মানুষ অপেক্ষা করছেন তাদের প্রিয় নেতার এক ঝলক দেখার জন্য। স্লোগান, ব্যানার, ফেস্টুন আর জাতীয় ও দলীয় পতাকায় পুরো এলাকা রঙিন হয়ে ওঠে।
সংবর্ধনাস্থলের মূল মঞ্চ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মঞ্চে ১৯টি চেয়ার রাখা হয়েছে। মঞ্চের চারপাশে ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। শৃঙ্খলা বজায় রাখতে স্বেচ্ছাসেবকরাও সক্রিয় রয়েছেন।
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন জীবন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। তিনি বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-ঢাকা ফ্লাইটে বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। তার আগমন ঘিরে রাজধানীতে বিরাজ করছে বিশেষ উত্তেজনা ও আবেগঘন পরিবেশ।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীদের স্রোত রাজধানীর দিকে ধেয়ে আসছে। পশ্চিম ও পূর্ব দিকের মহাসড়ক দিয়ে একের পর এক মিছিল তিনশ’ ফিটের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, খুলনা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ ট্রেনে নেতাকর্মীরা রাতেই ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। কেউ কেউ বাস, লঞ্চ ও ব্যক্তিগত যানবাহনেও রাজধানীতে এসেছেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে ভোরে ঢাকায় এসেছেন সানাহ উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এতদিন তারেক ভাইকে শুধু পর্দায় দেখেছি। আজ বাস্তবে সামনে থেকে দেখব। আমরা চার বন্ধু মিলে ঢাকায় এসেছি শুধু তারেক ভাইয়ের এক ঝলক দেখার জন্য। বাড়িতে বলে এসেছি, উনাকে দেখে ফিরলে সবাইকে মিষ্টি খাওয়াব।’
পটুয়াখালী থেকে লঞ্চে এসে সংবর্ধনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন সুবিদ মাস্টার। সঙ্গে এনেছেন দুই ছেলে ও এক ভাগ্নেকে। তিনি বলেন, ‘এক এগারোর পর থেকে ১৬ বছর ধরে আমরা দেখেছি কীভাবে তারেক রহমানের ওপর রাজনৈতিক নিপীড়ন চালানো হয়েছে। তাঁর বক্তব্য পর্যন্ত প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আজকের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে সেই সময়ের কথা ভাবলে গা শিউরে ওঠে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ এই শীতের মধ্যে এত দূর থেকে এসেছি তারেক রহমানকে কাছ থেকে দেখব বলে। আমার মতো অসংখ্য মানুষ আজ এখানে এসেছে ভালোবাসা থেকে, বিএনপির প্রতি বিশ্বাস থেকে।’
রাজধানীর তিনশ’ ফিট ছাড়াও বিমানবন্দর এলাকা, পূর্বাচল, বনানী, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হচ্ছেন। কোথাও কোথাও ক্ষুদ্র মিছিলের সঙ্গে ব্যান্ড সংগীতের দল অংশ নিচ্ছে, যা পুরো আয়োজনকে উৎসবমুখর করে তুলেছে।
নেতাকর্মীদের স্লোগানে, গান আর করতালিতে পুরো এলাকা প্রাণচাঞ্চল্যে ভরে উঠেছে। দীর্ঘ নির্বাসনের পর দলের শীর্ষ নেতার প্রত্যাবর্তন বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে শুধু রাজনৈতিক ঘটনা নয়, বরং এক আবেগঘন পুনর্মিলনের প্রতীক হয়ে উঠেছে।
এএইচ
