ঢাকা, রবিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫,   পৌষ ১৪ ১৪৩২

সংঘাতের মধ্যেই মিয়ানমারে জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:১৮ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার | আপডেট: ১০:২০ এএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫ রবিবার

গৃহযুদ্ধ, রাজনৈতিক দমন-পীড়ন এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তীব্র প্রশ্নের মধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমারে। 

রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে শুরু হওয়া নির্বাচনে আগামী ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন ধাপে এ ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। 

আজ প্রথম ধাপে রাজধানী নেইপিদো, বাণিজ্যিক রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুন, দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মান্দালয়সহ জান্তা নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি শহর ও গ্রামাঞ্চলে ভোটগ্রহণ চলছে। স্থানীয় সময় সকাল ৬টা (বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিট) থেকে জাতীয় পার্লামেন্ট ও প্রাদেশিক আইনসভার জন্য একযোগে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে।

প্রায় পাঁচ বছর পর এই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন দেশটির নাগরিকরা। তবে দেশজুড়ে চলমান সংঘাত, বিরোধী দলগুলোর অনুপস্থিতি এবং সেনাশাসনের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে এই নির্বাচনকে অনেকেই ‘অবিশ্বাসযোগ্য’ ও ‘নাটকীয় আয়োজন’ হিসেবে দেখছেন।

তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চল ও প্রদেশগুলোতে ভোটগ্রহণ হচ্ছে না। মোট ৩৩০টি টাউনশিপের মধ্যে তিন ধাপে ২৬৫টিতে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনা থাকলেও সেগুলোর সবটিতে জান্তার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই।

এর আগে মিয়ানমারে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের নভেম্বরে। সে নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লেইং।

অভ্যুত্থানের পরপরই অং সান সু চিসহ এনএলডির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এখনো কারাগারে রয়েছেন। সু চির বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে জান্তা সরকার। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ ১৫০ বছর কারাদণ্ড হতে পারে। 

২০২৩ সালে জান্তানিয়ন্ত্রিত নির্বাচন কমিশন এনএলডিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত ঘোষণা করে। ফলে এবারের নির্বাচনে এনএলডি অংশ নিচ্ছে না। একই সঙ্গে ২০২০ সালের নির্বাচনে অংশ নেওয়া অধিকাংশ রাজনৈতিক দলও এই ভোট বর্জন করেছে। 

এ অবস্থায় সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (ইউএসডিপি) নির্বাচনী মাঠে সবচেয়ে প্রভাবশালী দল হিসেবে রয়েছে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, ভোট শেষে তারাই সরকার গঠন করবে।

এই বাস্তবতায় নির্বাচন আয়োজনকে কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছে জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংগঠন ও একাধিক পশ্চিমা দেশ। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক সম্প্রতি বলেন, সহিংসতা ও দমন-পীড়নের পরিবেশে মতপ্রকাশ, সংগঠন ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা অনুপস্থিত থাকায় জনগণের মুক্ত ও অর্থবহ অংশগ্রহণের কোনো পরিস্থিতি নেই।

তবে জান্তা সরকার দাবি করছে, এই নির্বাচন মিয়ানমারের সংঘাত কাটিয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পথে ‘নতুন অধ্যায়’ সূচনার সুযোগ তৈরি করবে। 

রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার এক সম্পাদকীয়তে বলেছে, এই নির্বাচন দেশকে সংকট ও সংঘাতের বৃত্ত থেকে বের করে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়ার ভিত্তি গড়ে দেবে।

এএইচ