আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গুরুত্ব পেয়েছে খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদ
একুশে টেলিভিশন
প্রকাশিত : ১২:৪৯ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫ মঙ্গলবার
বিএনপি’র চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা ও গণমাধ্যমগুলো তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন, নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব তুলে ধরে নানা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া আজ মঙ্গলবার সকালে ইন্তেকাল করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দেওয়া এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) জানায়, দীর্ঘদিন অসুস্থতার পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন বেগম খালেদা জিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে আনা মামলাগুলোকে তিনি ও তাঁর দল বরাবরই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছিল। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে সর্বশেষ দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস দেয়। এতে করে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথে তাঁর সব আইনি বাধা দূর হয়েছিল। আগের সরকারের সময় একাধিকবার তাঁর বিদেশে চিকিৎসার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলেও অন্তর্বর্তী সরকার চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়। উন্নত চিকিৎসা শেষে তিনি মে মাসে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন।
আল জাজিরা লিখেছে, বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, তিনি লিভার সিরোসিস, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগসহ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত ২৩ নভেম্বর ফুসফুসের সংক্রমণ ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে নিউমোনিয়াসহ শারীরিক জটিলতা বেড়ে গেলে তাঁকে সিসিইউ ও আইসিইউতে রাখা হয়। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে তাঁর চিকিৎসা চলছিল।
বিবিসি ‘গৃহবধূ থেকে যেভাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম নেতা হয়ে উঠেছিলেন খালেদা জিয়া’ শীর্ষক বিশেষ প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন সংবাদ তারা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করেছে।
ভারতের আন্দন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, “একদা রাজনীতিতে ঘোর অনিচ্ছুক ‘ফার্স্ট লেডি’ থেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী!” জলপাইগুড়ির ‘পুতুল’ হয়ে উঠেছিলেন ‘বেগম জিয়া’-শীর্ষক প্রতিবেদনসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি অধ্যায়ের অবসান হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি শুধু একটি দলের প্রধানই ছিলেন না, বরং সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে অন্যতম প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক জীবনে আপসহীন নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে দেশ-বিদেশে অসংখ্য মানুষ শোক প্রকাশ করছেন।
বেগম জিয়ার ইন্তেকালে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারাদেশে এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতাল, গুলশানে তাঁর বাসভবন ও নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শোকাহত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ভিড় দেখা গেছে। সেখানে অসংখ্য মানুষকে অশ্রুসিক্ত দেখা যায়। সারাদেশে সব জায়গায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে শোকের মাতম।
এএইচ
