ঢাকা, বুধবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৫,   বৈশাখ ১৭ ১৪৩২

আশ্রয়হীন জয়িতা এখন বিচারক

প্রকাশিত : ০৬:১০ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৭:১৮ পিএম, ৯ জুলাই ২০১৭ রবিবার

ভারতের অধিবাসী তৃতীয় লিঙ্গের জয়িতা মণ্ডল। কিছুদিন আগেও যিনি ছিলেন আশ্রয়হীন। সরকারের দেওয়া সুযোগে এবার তিনি বিচারকের আসনে বসতে যাচ্ছেন। কারণ শনিবার তিনি ভারতের ইসলামপুর আদালতে বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। ইসলামপুরে সমাজকর্মী হিসেবে কাজ করার সুবাদে স্থানীয় প্রশাসনের থেকে এই স্বীকৃতি ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। আনন্দ বাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- শারীরিক গঠনে পুরুষ, মনে নারী ২৯ বছরের জয়িতা। কয়েক বছর আগে কলকাতায় নেতাজি নগরের একটি কলেজে বিএ পড়ার সময়ে টিটকারিতে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তখন তার নাম হয় জয়ন্ত। পরে হলফনামা দিয়ে জয়িতা হয়েছেন। শিলিগুড়িতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হয়ে এইচআইভি সচেতনতার কাজ করতে করতেই তার প্রথম বার ইসলামপুরে যাওয়া। প্রান্তিক এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গ তথা হিজড়া, রূপান্তরকামীদের জন্য কাজের ইচ্ছেটা তখনই আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

বর্তমানে ইসলামপুরে ১৯৭ জন ট্রান্সজেন্ডারকে নিয়ে কাজ করছেন জয়িতা। তার চেষ্টাতেই সেখানে কেন্দ্রীয় রোগী কল্যাণ সমিতি প্রকল্প বা সরকারি বৃদ্ধাবাস সামলাচ্ছেন রূপান্তরকামীরা। প্রশাসনের সাহায্যে হাতের কাজ, বিউটিশিয়ান, সেলাইয়ের কাজও শেখানো হচ্ছে অনেককে। জয়িতার কথায়, ‘‘এতদিন আইনি লড়াই লড়তে কোর্টে গিয়েছি। বিচারকের ভূমিকায় দ্রুত সড়গড় হব।’’

২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের নালসা রায়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের কাজ করা বা সামাজিক মর্যাদার অধিকার স্বীকৃতি পাওয়ায় জয়িতাদের লড়াই কিছুটা মসৃণ হয়েছে। রাজ্য প্রশাসন ট্রান্সজেন্ডার উন্নয়ন বোর্ড গড়ে তুলেছে। ওই বোর্ডের সদস্য রাজ্য সমাজকল্যাণ সচিব রোশনী সেন বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের পাশে দাঁড়াতে জেলায় জেলায় ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য কমিটিও গড়া হচ্ছে।’

তার মতে, জেলায় জেলায় সমাজের বিশিষ্ট ভূমিকায় ট্রান্সজেন্ডাররা উঠে এলে তা সামাজিক বিদ্বেষ বা ভুল ধারণা ভাঙতেও সাহায্য করবে। ইসলামপুরে জয়িতার ক্ষেত্রে সেটাই হয়েছে। সাধারণত, বিভিন্ন জেলা আদালতে নিষ্পত্তি না-হওয়া কিছু মামলা ও লঘু অপরাধের নিষ্পত্তি হয় লোক আদালতে।

প্রাক্তন বিচারক, আইনজীবী ও সমাজে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বিচারক হন। জয়িতা প্রসঙ্গে উত্তর দিনাজপুরের জেলা শাসক আয়েষা রাণির মন্তব্য, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বলে নয়, একজন গুরুত্বপূর্ণ সমাজকর্মী হিসেবেই জয়িতা প্রশাসনের সম্পদ।

আরকে/ডব্লিউএন