ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয় : গভর্নর

প্রকাশিত : ০৬:০০ পিএম, ২৩ জুলাই ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০২:৫৭ পিএম, ২৫ জুলাই ২০১৭ মঙ্গলবার

সাইবার নিরাপত্তা বিশ্বব্যাপী উদ্বিগ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আক্রমনের শিকার হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় ব্যাংকগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক হতে হবে। প্রত্যেকটি ব্যাংককে আলাদা আলাদাভাবে সাইবার সিকিউরিটি স্ট্রাটেজি প্রণয়ন করতে হবে।

সোমবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনষ্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) অডিটোরিয়ামে “ব্যাংকের তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রস্তুতি” শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ কথা বলেন।

বিআইবিএম ও ট্রান্স আইটি সলিউশন যৌথভাবে আয়োজিত এ কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএম এর মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর। কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো: আহসান হাবীব।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির আরও বলেন, ক্রমবর্ধমান সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং নিরাপদ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে ব্যাংকের সব কর্মীর সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রধান আইটি কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে। একই সঙ্গে আইটি নিরাপত্তা বিষয়ে একটি গাইড লাইনও প্রস্তুত করেছে। এ ব্যাপারে দেশের সব ব্যাংকে সতর্ক হতে হবে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে ভালো ধারণা থাকতে হবে। ব্যাংকারদের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিতে হবে।

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, মাঝারি মাপের প্রাকৃতিক বিপর্ষয় হলে অনেক ব্যাংকের গ্রাহক সেবা বন্ধ হয়ে যাবে। আর বড় ধরনের বিপর্যয় হলে কোনো ব্যাংকেরই সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ডাটা সেন্টারের যে ধরনের নিরাপত্তা দরকার তা ব্যাংকগুলোর নেই।

ট্রান্স আইটি সলিউশনের সিইও আমিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে তথ্য নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুধু ঢাকা বা বড় শহরে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রতিটি জেলা পর্যায়ে ব্যাংক কর্মীদের জন্য এরকম ভিন্নধর্মী কর্মশালা আয়োজন করা যেতে পারে।

কর্মশালায় বক্তারা বলেন, প্রচলিত ধারার চেয়ে ভিন্নধর্মী ট্রেনিংয়ে সাইবার বিপদ চোখের সামনে তুলে ধরে তা থেকে পরিত্রাণ পাবার উপায় দেখান হলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হবে। পরিপূর্ণ সচেতন কর্মীরাই আর্থিক খাতের সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

কর্মশালায় মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রুবাইয়াত আকবর। এতে বলা হয়, প্রতি ৩৯ সেকেন্ডে বিশ্বের কোনো না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে একবার সাইবার হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা। শুধু র‍্যানসমওয়্যারের কারণেই ২০১৬ সালে ক্ষতি হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সাল নাগাদ সাইবার অপরাধজনিত ক্ষতি দাঁড়াতে পারে ৬ ট্রিলিয়ন ডলার বা ৬ লাখ কোটি ডলারে।

হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেবার পরিকল্পনা নিয়ে হ্যাকাররা প্রথমেই টার্গেট করে ব্যাংকের সাধারণ কর্মীদের। তাদেরকে ভুলের ফাঁদে ফেলে গ্রাহক তথ্য চুরি এবং পেমেন্ট সিস্টেমে অনধিকার প্রবেশ করার জন্য নিরন্তর চেষ্টা চালায়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালে সাইবার ঝুঁকি মোকাবেলা করতে ব্যাংকের সর্বস্তরে অধিকতর সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই। হ্যাকারদের আক্রমণের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে আর্থিক ও ব্যাংকিং খাত। বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। সেক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোতে কর্মরত সবাইকে সাইবার আক্রমণের ধরন সম্পর্কে ধারণা লাভ ও এর প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

আরকে/ডব্লিউএন