ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ফেসবুক ব্যবহারের আদবকেতা

প্রকাশিত : ০১:০৫ পিএম, ২ আগস্ট ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৯:১৬ পিএম, ৪ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার

ফেসবুক হাল সময়ে সারাবিশ্বে সামাজিক যোগাযোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে প্রায় সব বয়সী মানুষের কাছে এটি একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী প্রায় সবাই জনপ্রিয় এ মাধ্যমে নিজেকে যুক্ত রাখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কাজের ফাঁকে, আড্ডায় কিংবা ভ্রমণে ফেসবুকে একটু ঢুঁ না দিলে যেন চলেই না।

কিন্তু আজকাল এই ফেসবুকেই অনেকের ব্যক্তিগত জীবনের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন কেউ কেউ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় পর্যন্ত সব কর্মকাণ্ডের খতিয়ান দেন ফেসবুকে। অথচ আমরা ভুলে যাই এটা শুধু একটা যোগাযোগের মাধ্যম। এখানে ব্যক্তিগত সব কথা জানানোর কোনো প্রয়োজন আছে কি? এই মাধ্যমে এমন মানুষও আপনার বন্ধুর তালিকায় থাকতে পারেন যিনি আপনার ব্যক্তিগত ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিষয়গুলো ফেসবুকে প্রত্যাশা কিংবা পছন্দ করেন না।

লাইফস্টাইলবিষয়ক ওয়েবসাইট নিউ মিডিয়া রকস্টারস ডটকমে সম্প্রতি ফেসবুক ব্যবহারের শিষ্টাচারের কিছু দিক তুলে ধরা হয়েছে। জেনে নিন ফেসবুক ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আদবকেতা সম্পর্কে-

* ফেসবুকে প্রোফাইল আপডেটের জন্য অনেকেই প্রয়োজনীয় সব তথ্য দিয়ে থাকেন। তবে এখানে আপনার সুযোগ রয়েছে নিজের বিশেষ কোনো তথ্য গোপন করার। এছাড়া এমন কোনো তথ্য দেবেন না, যা পরে অন্য কেউ আপনারই বিরুদ্ধে ব্যবহার করার সুযোগ পায়। মনে রাখবেন, এ ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত সব তথ্যের বিষয়ে উদার না হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

* অনেকেই আছেন, যারা সঙ্গীর সঙ্গে একটু রাগারাগি বা কথা কাটাকাটি হলে তা প্রকাশ করতে ফেসবুককেই মুখ্য মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন। অথচ আমরা ভুলে যাই সম্পর্কের মধ্যে মন কষাকষি, ঝগড়া তো হবেই। আবার মিটেও যাবে। এটি পোস্ট করে ফলাও করে সবার কাছে বলার প্রয়োজন নেই। এতে সঙ্গীর সঙ্গে আপনার সম্পর্কের তিক্ততা স্থায়ী রূপ নিতে পারে। তাই এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকুন।

* ফেসবুকে আপনার বন্ধু বা পরিচিত কারও সম্পর্কে এমন কিছু বলবেন না, যাতে তার চাকরির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের সমস্যা হয়। হয়তো আপনি নিছক মজার ছলেই কিছু একটা আপনার বন্ধুর ওয়ালে লিখে ফেললেন; যা আপনার বন্ধু বিশেষ কারণে কর্মস্থলে গোপন করেছেন। সুতরাং সাবধান। আপনার সামান্য ভুলে আরেকজনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

* অফিসে কাজের সময় ফেসবুক ব্যবহার না করাই ভালো। এতে যেমন কাজের মনোযোগ নষ্ট হয়, তেমনি সহকর্মীরাও সুযোগ পেয়ে যায় আপনাকে নিয়ে সমালোচনা করার। এমনকি ফেসবুক ব্যবহারের কারণে একটা সময়ে আপনি কর্মক্ষেত্রে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও পড়তে পারেন।

* প্রেম, বিয়ে অথবা নিজের সম্পর্ক নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা ফেসবুকে না লেখাই ভালো। কী দরকার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় সবাইকে জানান দেয়ার?

* সব সময় ফেসবুকে ইতিবাচক কথা বলার চেষ্টা করবেন। আপনি চাইলেই আপনার ফেসবুক বন্ধুদের ওয়ালে নিজের মনমতো কিছু লিখে তার ক্ষতি করতে পারেন। কিন্তু এটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এখানে সততা না থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে। তাই নিজে সৎ থাকুন, তাহলে অন্যরাও আপনার ক্ষতি করার সুযোগ পাবে না।

* ফেসবুক বন্ধুর ওয়ালে কোনো কিছু শেয়ার করার আগে তার মনোভাব বুঝার চেষ্টা করুন। তিনি পছন্দ করেন না, এমন কিছু শেয়ার করা ঠিক হবে না।

* কেউ কেউ আছেন যারা ঘন ঘন সঙ্গী পাল্টান। আবার ফেসবুকে বারবার সম্পর্কের স্ট্যাটাস বদলে মানুষকে তা দেখিয়ে বাহবা পাওয়ারও চেষ্টা করে। নিজেকে এতটা আধুনিক ভাবারও কোনো কারণ নেই। এতে উল্টো আপনার প্রতি বাজে ধারণার সৃষ্টি হতে পারে।

* কেউ যদি আপনার পোস্ট করা ছবি বা স্ট্যাটাস নিজের ওয়াল থেকে মুছে দেয়, তাহলে কোনো প্রয়োজন নেই সেটিকে আবার রিপোস্ট করার। কারণ হয়তো সে আপনার পোস্টের কারণে বিরক্ত। তাই সে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে তাকে আর পোস্ট বা ট্যাগ না করাই ভালো।

* সম্পর্ক ভাঙলে ফেসবুকে পরস্পরের প্রতি বিষোদ্গার করবেন না। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভাঙন ফেসবুকে আপডেট করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

* ভুলেও সঙ্গীর সঙ্গে তোলা আপনার ব্যক্তিগত সম্পর্কের অন্তরঙ্গ ছবি ফেসবুকে পোস্ট করবেন না। এতে আপনার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ফেসবুকের সব বন্ধুই নিজের কাছের মানুষ এমন ভাবা ঠিক নয়। তাই একটু সাবধানে থাকাই নিজের জন্য ভালো।

* কেউ যদি ফেসবুকের লেখায় কাউকে প্রশ্ন করে তাহলে তার উত্তর দেয়া উচিত। এটা এক ধরনের ভদ্রতা। এমনকি লেখাটা যদি একান্ত আপনাকে নিয়েই হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার সেই লেখার নিচে কমেন্ট দেয়া উচিত।

* সব পোস্টেই যে কমেন্ট করতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিছু কিছু পোস্ট প্রয়োজন না মনে হলে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

* অনেকেই মনে করেন যত বেশি ফেসবুক বন্ধু, তত বেশি অনলাইন জগতে জনপ্রিয় হওয়া সম্ভব। তাই কেউ বন্ধুত্বের আবেদন করলেই তাকে ফেসবুক বন্ধু বানিয়ে ফেলেন। অথচ না জেনে অপরিচিত কাউকে ফেসবুক বন্ধু না বানানোটাই ভালো।

//এআর