ঢাকা, রবিবার   ০৩ আগস্ট ২০২৫,   শ্রাবণ ১৯ ১৪৩২

‘ডাক্তার আপা কইছে বাচ্চা দুইডা এখন তারও সন্তান’

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ১১:০১ পিএম, ৩ আগস্ট ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৬:২২ পিএম, ৪ আগস্ট ২০১৭ শুক্রবার

‘তারা এখন বেশ ভালো আছে। কিছুক্ষণ আগে আমি তাদেরকে দেখে এসেছি।’ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে টায় দিকে তৌফা ও তহুরার মা শাহেদা বেগম এই প্রতিবেদককে একথাগুলো বলছিলেন।

শাহেদা বেগম আরও জানান, আমার বাচ্চাদের জন্মের ৮ দিন পর থেকেই ডাক্তার শাহানুর আপা তাদের চিকিৎসা করতাছেন। তিনিই ওদেরকে অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করেছেন। অপারেশনের পর আপা আমাকে কইছে “এই বাচ্চা দুটি এখন থেকে আমারও সন্তান, তোমার একার সন্তান নয়।” আপা ওদেরকে অনেক ভালবাসেন। আমি আপার জন্য অনেক দোয়া করি।

কথাগুলো যখন তিনি বলছিলেন তখনই তার মোবাইলে কল আসলো। ফোনে কথা শেষ করেই তিনি বললেন, ‘ভাই আমি অহন যাই। ডাক্তার আপা আমাকে ডাকতাছেন। বাচ্চাদেরকে দুধ খাওয়ান লাগবো।’

শাহেদা বেগমে দেখে যে কেউই বুঝতে পারবে তিনি কতটা আনন্দিত। কোমরে জোড়া লাগানো জমজ শিশু তৌফা ও তহুরাকে গত মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আলাদা করেন। এখন দুই শিশুই আইসিইউতে রয়েছে ।

শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শাহানুর ইসলাম ইটিভি অনলাইনকে মুটোফোনে বলেন, তৌফা ও তহুরা দুজনেই এখন বেশ ভাল আছে। তবে এখনো ঝুঁকি মুক্ত বলা যাবে না।

কবে নাগাদ ওরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে জানতে চাইলে শাহানুর ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চারা আরও একটু সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে এবং আমরা যদি নিরাপদ মনে করি তাহলে তাদেরকে ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হবে। এরপর অপারেশনের মাধ্যমে তাদের পায়খানার রাস্তা ও যোনি পথ তৈরি করতে হবে। এখনও অনেক অনেক কাজ বাকি আছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক হতে বেশ সময়ের প্রয়োজন। গতকাল থেকে ওদেরকে মায়ের দুধের পাশাপাশি সাধারণ খাবারও দেয়া হচ্ছে ।’

হাসপাতলেই ছিলেন তৌফা ও তহুরার নানা সহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নাতনি দুইটা আমার বাড়িতে হইছে। হওয়ার পরে বাচ্চা দুটিকে জোড়া লাগানো দেখে মন খারাপ হইছিলো। তবে এখন আমি খুব খুশি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি ওরা যাতে ভালো থাকে।

তৌফা ও তহুরা নানি সখিনা বেগম মুঠোফোনো এই প্রতিবেদককে বলেন, নাতনিদের দেখার জন্য মনটা খুব আনচান করছে। আমার বাড়িতে টিভি নাই। তাই অনেক দূরে গিয়েছিলাম টিভিতে ছবি দেখার জন্য। কিন্তু গিয়েও দেখতে পাইনি। আমার দুই নাতনিকে অপারেশন করে আলাদা করা হয়েছে। এ খবর শুনে আমরা সবাই খুবই খুশি হয়েছি।

তিনি আরও বলেন, তৌফা ও তহুরার খবর নিতে আশপাশের মানুষ এসেছে। সফলভাবে অপারেশন সম্পন্ন হওয়ায় আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া। আমি সবসময় চাই ওরা যেন ভালো থাকে।

অপারেশনের আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম তৌফা ও তহুরাকে দেখতে হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি তৌফা ও তহুরার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। তাদের চিকিৎসা ও পরিচর্যার সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনের নির্দেশ দেন।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রামে কোমরে জোড়া লাগানো অবস্থায় নানার বাড়িতে জন্ম হয় তৌফা ও তহুরার।

কেআই/টিকে