দিঘীতে ড্রামের ভেতর লাশ : সন্দেহভাজন অমিতের স্বীকারোক্তি
প্রকাশিত : ১০:৫৫ পিএম, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৩:৫৯ পিএম, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সোমবার

চট্টগ্রামে দিঘীতে ড্রামে লাশ পাওয়ার ঘটনায় মূল সন্দেহভাজন অমিত মুহুরী হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের সহকারি কমিশনার (কোতোয়ালি) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আজ রোববার বিকেলে চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম মেহনাজ রহমানের আদালতে অমিতকে হাজির করা হলে তিনি ‘হত্যাকাণ্ডে তার দায় স্বীকার করে’ জবানবন্দি দেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।
এর আগে গতকাল শনিবার কুমিল্লার একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে সন্দেহভাজন অমিত মুহুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশের সূত্র মতে, হত্যাকাণ্ডের পর অমিত চট্টগ্রাম ছেড়ে কুমিল্লায় আদর মাদক নিরাময় কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নেয়। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে চুল কেটে, বেশভূষা পালটে সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। কিন্তু গলায় ও হাতে আঁকা উল্কির কারণে শেষ রেহাই হয় না খুনের দায়ে অভিযুক্ত অমিতের।
গত ১৩ আগস্ট নগরীর কোতোয়ালি থানার এনায়েত বাজার এলাকার রানীর দিঘী থেকে সিমেন্ট ঢালাই করা ড্রামের ভেতর থেকে একটি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তখন পরিচয় পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে লাশের পরিচয় পায় পুলিশ। নিহত ব্যক্তি আটক অমিতেরই বন্ধু ইমরানুল করিম ইমন। এরপর গত ৩১ আগস্ট তদন্তের সূত্র ধরে শিশির ও শফি নামের দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশের অমিতের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়। ইতোমধ্যে, খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন শিশির ও শফি। তবে শিশিরের বক্তব্য অনুযায়ী অমিত নিজেই খুন করেন ইমনকে। তবে আজকের স্বীকারোক্তিতে আদালতকে ইমন বলেন, ইমনের গলায় ছুরি চালিয়েছিল শিশির। আর সে মারধর করেছিল। এছাড়াও ইমন তার জবানবন্দিতে বলেন, তার স্ত্রীকে প্রায়ই উত্যক্ত করতেন ইমন। এ কারণেই ইমনকে হত্যা করা হয়।
ইমন ও অমিত বন্ধু হবার সুবাধে অমিতের বাসায় যাতায়াত ছিল ইমনের। পুলিশ বলছে, ইমনের সাথে অমিতের স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক আছে এমন সন্দেহ থেকেই ইমনকে খুন করে অমিত। এর আগে শিশির ও শফি তাদের দেয়া জবানবন্দিতে বলেছেন, ৮ তারিখ রাতে ইমন নগরীর নন্দনকান ৩ নম্বর গলির হরিশদত্ত লেইনে বেঙ্গল হোল্ডিংসের ষষ্ঠ তলায় অমিতের বাসায় এলে তাকে আটকে রাখেন অমিত। এরপর আরও কয়েকজনকে ডেকে আনেন তার বাসায়। সারা রাত পরিকল্পনা করে ৯আগস্ট ভোরে কুপিয়ে ইমনকে হত্যা করে অমিত। প্রথমে লাশ পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা করলেও তা না পেরে অমিত ও তার সহযোগিরা ড্রামে লাশ ভরে তার মুখ এসিড, চুন ও সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে ১২ আগস্ট রাতে দিঘীতে ফেলে দেয়া হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই মো. হারুন বলেন, “ইমন দায় স্বীকার করলেও আরও অধিকতর তদন্তের প্রয়োজন। আটককৃত ব্যক্তিরা ছাড়াও এর সাথে আরও ব্যক্তি জড়িতে থাকতে পারে।”
পুলিশ অধিকতর তদন্তের জন্য আসামী ইমনের ১০দিন রিমান্ড আবেদন করেন। আদালতের বরাত দিয়ে এসআই মো. হারুন বলেন, রিমান্ড শুনানি পরে হবে এই মর্মে আসামীকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
নিজেকে যুবলীগ ‘নেতা’ পরিচয় দেয়া অমিত কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবরের অনুসারী। ইমন হত্যাকাণ্ডসহ অমিতের বিরুদ্ধে আরও ১২টি মামলা দায়ের করা আছে। এরমধ্যে সিআরবি’তে রেলের দরপত্র নিয়ে জোড়া খুন, গত ১৪ এপ্রিল ডিসি হিলে পুলিশের উপর হামলা, বাকলিয়াতে ছাত্রলীগ নেতাকে গুলি করা মামলা অন্যতম। সিআরবি হত্যাকাণ্ড মামলার অন্যতম আসামী এই অমিত।
এসএইচ/ডব্লিউএন