ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে কাঁদলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৫০ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

মিরাজ মিজু : রোহিঙ্গাদের দুর্দশা দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নৃশংসতা, নির্বিচারে হত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণের বর্ণনা শুনে নিজেকে লুকাতে পারেননি তিনি। অশ্রুসজল নয়নে তিনি নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের বুকে জড়িয়ে ধরেন। নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কথা শুনে তাদের সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে ৭১-এর কথা স্মরণ করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমি বাবা হারিয়ে উদ্বাস্তু জীবন যাপন করেছি। আমি বুঝি রোহিঙ্গাদের কষ্ট। ’

রোহিঙ্গা নারীরা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে জানান, তারা এক বস্ত্রে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে এসেছেন। সঙ্গে করে কিছুই আনতে পারেননি। খুব কষ্টে তারা জীবনযাপন করছেন। এ সময় নারী ও শিশুদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে। ভিজে যায় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চোখ। তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাকেও চোখ মুছতে দেখা যায়।

রোহিঙ্গা এক শিশু প্রধানমন্ত্রীকে তার পরিবারের উপর সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কথা জানান। শিশুটি জানায়, তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে আগুন দেয়া হয়। তার বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিষ্ঠুর নির্যাতনের হাত থেকে রেহােই পায়নি শিশুটিও। তার নাকে আঘাত করে থেঁতলে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে সান্ত্বনা দেন।

সেখানে দেওয়া সংক্ষিপ্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে যা ঘটছে, সেটি ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ঘটনা দেখে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না। মানুষ মানুষের মতো বাঁচবে। মানুষের কেন এত কষ্ট!

তিনি বলেছেন, মিয়ানমার সরকারের কাছে আমরা অনুরোধ করব, তারা যেন নিরীহ মানুষের উপর নির্যাতন বন্ধ করে। প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে শাস্তির ব্যবস্থা করে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে যা যা সাহায্য করা দরকার, আমরা তা করব।

রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দিকটি তুলে করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘নাফ নদীতে শত শত নারী শিশুর লাশ ভাসছে, এটা ‘মানবতাবিরোধী’ কাজ । আমরা আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানবতার খাতিরে এই দুঃস্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানবিক দিক বিবেচনা করে তাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছি। যতদিন মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে না যাবে, ততদিন আশ্রয়ের ব্যবস্থা করব।”

মিয়ানমার সরকারকে উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন,‘তারা (মিয়ানমার) আইন পরিবর্তন করে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করছে। আইন পরিবর্তন করে কেন এই ঘটনার সৃষ্টি করা হল?’

রোহিঙ্গাদের কারো কারো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর ব্যাপারে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দিলেও এ দেশের ভূমি ব্যবহার করে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানো হলে তা বরদাশত করা হবে না।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে মঙ্গলবার সকালে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে প্রথমে কক্সবাজার এবং সেখান থেকে সড়কপথে উখিয়ায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা দুর্ভাগা নারী, পুরুষ, শিশুদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা, পুত্রবধূ আইওএম কর্মকর্তা পেপ্পি সিদ্দিকও এ সময় সঙ্গে ছিলেন।

ডব্লিউএন