ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ফিরতে পারবেন মাত্র ৭৫৪৮ জন রোহিঙ্গা!

প্রকাশিত : ০৬:৪১ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০৪:২৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি যে শর্ত দিয়েছেন তাতে মাত্র ৭ হাজার ৫৪৮জন নিজ দেশে ফিরতে পারবেন। কারণ রোহিঙ্গাদের ফেরাতে সু চি বাংলাদেশের সঙ্গে স্বাক্ষরিত ১৯৯২ সালের চুক্তির দিকে ইঙ্গিত করেছেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী যাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড বা এনভিসি রয়েছে তারাই ফিরতে পারবেন। কিন্ত বাংলাদেশে অবস্থানকারী প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র ৭ হাজার ৫৪৮ জনের এনভিসি কার্ড রয়েছে।

এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৫ হাজার ৮০০ জন নিবন্ধন করেছেন। সু চি’র কথা অনুযায়ী তাদের এনভিসি না থাকলে তারাও ফিরতে পারবেন না।

ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের ২০১৫ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী রাখাইনে তখন থাকা ১০ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড পেয়েছিলেন ৭৫৪৮জন। এর বাইরে আর কোনো কাগজপত্রই রোহিঙ্গাদের নেই। তাই ৭৫৪৮ জনের বেশি মানুষের নিবন্ধন সত্ত্বেও মিয়ানমারে ফেরার সুযোগ নেই।

সহিংসতাকে কেন্দ্র করে ১৯৯২ সালেও হাজার হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে। ওই বছর রোহিঙ্গাদের ফেরাতে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে।

সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সু চি বলেছেন, সেই চুক্তি অনুসরণ করেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে আনা যেতে পারে।

অষ্ট্রেলিয়াভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের দাবি, এতে করে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের ৯৯ শতাংশই এই চুক্তিতে পড়বেন না। এক বাংলাদেশি কর্মকর্তার বরাতে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, নতুন ৪ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৮০০ জন নিবন্ধন করেছেন। কিন্ত তাদের ক’জনের মধ্যে  এনভিপি আছে তা খতিয়ে দেখার বিষয়।

এদিকে সু চির প্রতিশ্রুতিকে ‘মিথ্যে আশা’ বলে মনে করেছেন বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। এবিসি নিউজ কথা বলেছে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। খুব অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গাই দেশে ফিরতে চেয়েছেন। ইসলাম হুসেন নামে এক রোহিঙ্গা এবিসি নিউজকে বলেন, ‘এখানে থাকা হয়তো সত্যি কঠিন। কিন্তু আমাদের কেউ ধর্ষণের শিকার হচ্ছে না। হত্যার আতঙ্কে থাকতে হচ্ছে না আমাদের।’

১৯৮২ সালের বিতর্কিত বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। এতে মিয়ানমারে বসবাসকারীদের Citizen, Associate এবং Naturalized পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এমনকি দেশটির সরকার তাদের প্রাচীন নৃগোষ্ঠী হিসেবেও স্বীকৃতি দেয়নি। ১৮২৩ সালের পরে আগতদের Associate আর ১৯৮২ সালে নতুনভাবে দরখাস্তকারীদের Naturalized বলে আখ্যা দেওয়া হয়। ওই আইনের ৪ নম্বর প্রভিশনে আরও শর্ত দেওয়া হয়, কোনো জাতিগোষ্ঠী রাষ্ট্রের নাগরিক কি না, তা আইন-আদালত নয়; নির্ধারণ করবে সরকারের নীতি-নির্ধারণী সংস্থা ‘কাউন্সিল অব স্টেট’। এ আইনের কারণে রোহিঙ্গারা ভাসমান জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত হয়।

২০১২ সালে রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হোয়াইট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালে গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যেই তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। সে সময় প্রেসিডেন্ট দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ওই কার্ড মার্চ থেকে আপনাআপনিই বাতিল হয়ে যাবে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার টাইমসের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার ওই কার্ড ছিল।

সে সময় নাগরিকত্ব না থাকা ব্যক্তিদের এনভিসি করার প্রস্তাব দেয় প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের দফতর। তবে ফ্রন্টিয়ার মিয়ানমারের সেই সময়ের এক প্রতিবেদন বলছে, কেবল ৩৫ হাজার ৯৪২ জন ওই আবেদন করেন। আর গোটা রাখাইন রাজ্যে নাগরিকত্বহীন ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ওই কার্ড দেওয়া হয় সাত হাজার ৫৪৮ জনকে। এদের সবাই যদি রোহিঙ্গাও হয়, তাহলে এই সাড়ে সাত হাজার মানুষের বাইরে আর কোনও রোহিঙ্গার বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই।

 

ডব্লিউএন