ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘তারুণ্যের সম্ভাবনা ধ্বংস করছে ইয়াবা’

প্রকাশিত : ০৫:৪১ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১০:৩৯ এএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শনিবার

যেকোনো নেশা ও মাদকদ্রব্যের চেয়ে ভয়ঙ্কর নেশাজাতীয় উপাদান হচ্ছে ইয়াবা। মিথাইল অ্যামফিটামিন বা মেথামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সমন্বয়ে গঠিত মিশ্রণ হলো ইয়াবা ট্যাবলেট। ক্যাফেইন আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি পদার্থ। চা ও কফিতে ক্যাফেইন থাকে। কিন্তু মিথাইল অ্যামফিটামিন অত্যন্ত শক্তিশালী নেশা সৃষ্টিকারী একটি মস্তিষ্ক উত্তেজক বা উদ্দীপক পদার্থ। যা গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কে এক ধরনের উন্মাদনা এবং শরীরে সাময়িক শক্তির সঞ্চার করে। ‘ক্ষণিকের’ উত্তেজনা কিংবা ভালো লাগার মোহে পড়ে তরুণ সমাজ ভয়াবহ এ নেশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে। এভাবে দেশের যুব সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ ধ্বংসের মুখে নিমজ্জিত হচ্ছে। এর ফলে ইয়াবা সেবনকারী-ই যে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছে তা নয়, গোটা পরিবারকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। পারিবারিক শান্তি, বন্ধন বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাক্তি (ইয়াবা সেবনকারী) হয়ে পড়ছে পরিবার-সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। পরিবার থেকে টাকা না পেয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে সে। এভাবে সে ধীরে ধীরে সামাজিক নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়ায় ইয়াবা সেবকরা। অন্যদিকে ইয়াবার ক্ষতিকর উপাদানগুলো ক্রমান্বয়ে তার শারীরিক সক্ষমতা নষ্ট করে দেয়, একপর্যায়ে মৃত্যু-ই হয়ে উঠে তার অনিবার্য পরিনতি।   

করালগ্রাসী ইয়াবার বিভিন্ন দিক নিয়ে একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইনের  সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ । স্বাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন তমাল আবদুল কাইয়ূম।   

 

ইটিভি অনলাইনকেমন আছেন আপনি?

 

ড. মুনীরউদ্দিন :  আমি ভালো আছি। আশা করি আপনিও ভালো আছেন?

 

ইটিভি অনলাইন: ভয়স্কর একটি মাদকদ্রব্য ইয়াবা। যা বর্তমানে বাংলাদেশে ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। তো এই ইয়াবার উদ্ভব ও এর ব্যবহার সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন

 

ড. মুনীরউদ্দিন:  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানিতে প্রথম ইয়াবার উদ্ভব হয়। জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর অ্যাডলফ হিটলার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রসায়নবিদদের একটি রাসায়নিক পদার্থ তৈরি করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা সৈন্যদের শরীরে উদ্দীপক হিসেবে কাজ করবে। যাতে করে যুদ্ধরত সৈন্যরা বা যুদ্ধবিমান চালকরা সহজে ক্লান্ত না হন। তারা যেন টানা ২৪ ঘণ্টা যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারেন। দেশটির রসায়নবিদেরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে অ্যামফিটামিন তৈরি করেন। অ্যামফিটামিনের সঙ্গে একটি মিথাইল গ্রুপ যোগ করে মিথাইল অ্যামফিটামিন তৈরি করা হয়। হিটলারের সৈন্যরা এই মিথাইল অ্যামফিটামিন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় যুদ্ধ চালাতে সক্ষম হন।

 

পরবর্তীতে এই  মিথাইল অ্যামফিটামিনের সঙ্গে ক্যাফেইনের সংমিশ্রণে ইয়াবা তৈরি হয়। থাইল্যান্ডে সত্তরের  দশক পর্যন্ত ওষুধ হিসেবে ইয়াবার ব্যবহার বৈধ ছিল। ফিলিং স্টেশনের আশপাশের দোকানে ইয়াবা কিনতে পাওয়া যেত। কারণ দূরদূরান্তে গমনকারী লরি ও বাসচালকরা এ পিল খেয়ে রাতে না ঘুমিয়ে সারা রাত গাড়ি চালাতে পারত। কিন্তু বেশকিছু ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটার পর ইয়াবা নিষিদ্ধ করা হলো। এতে করে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হলো। ইয়াবা চলে গেলে আন্ডারগ্রাউন্ডে। দামও বেড়ে গেল বহুগুণে।

 

ইটিভি অনলাইন: বাংলাদেশে কখন ইয়াবার ব্যবহার শুরু হয়?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: মূলত ২০০৭ সালের দিকে নেশা জাতীয় দ্রব্য হিসেবে বাংলাদেশের মাদকসেবীরা ইয়াবার ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু করেন। এর আগে ইয়াবার স্থলে মাদকসেবীরা ফেনসিডিল বা হেরোইন  সেবন করতেন।

 

ইটিভি অনলাইন: মাদক সেবীদের আকর্ষণ ফেনসিডিল বা হেরোইন থেকে ইয়াবার দিকে শিফট হওয়ার কারণ কী?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: মাদক সেবনকারীদের কাছে ইয়াবা বেশি চাহিদার। কারণ হেরোইন সেবন করলে মাদকসেবীদের শরীর খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। কিন্তু ইয়াবা শরীরকে চাঙ্গা করে। ইয়াবা গ্রহণকারীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইউফোরিয়া বা আনন্দদায়ক অনুভূতিতে ডুবে থাকে। ইয়াবা গ্রহণের পর মাদকসেবীর মনে হয়, শরীরের চামড়ার নিচ দিয়ে পোকা চলাচল করছে এবং তার ফলে অদ্ভুত এক ‘সুড়সুড়ির’ সুখ অনুভব করে থাকে সে।

 

ইটিভি অনলাইন: ইয়াবা কী কী উপাদান দিয়ে তৈরি করা হয়?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: ইয়াবা মিথাইল অ্যামফিটামিন বা মেথামফিটামিন ও ক্যাফেইনের সমন্বয়ে গঠিত একটি মিশ্রণ। ক্যাফেইন আমাদের কাছে অতি পরিচিত। আমরা যে চা ও কফি পান করি তাকে ক্যাফেইন রয়েছে। এই ক্যাফেইন মৃদু কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বা সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে উত্তেজনার সৃষ্টি করে। সাধারণত তন্দ্রা দূর করতে, কর্মক্ষমতা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে আমরা ক্যাফেইনসমৃদ্ধ চা বা কফি পান করি। কিন্তু মিথাইল অ্যামফিটামিন অত্যন্ত শক্তিশালী নেশা সৃষ্টিকারী পদার্থ। একটি মস্তিষ্ক উত্তেজক বা উদ্দীপক পদার্থ।

 

ইয়াবা সাধারণত ট্যাবলেট বা পিল আকারে প্রস্তুত করা হয়। ট্যাবলেটের রং হয় অত্যন্ত উজ্জ্বল ও আকর্ষণীয়। ট্যাবলেটে মূলত লাল, গোলাপি ও সবুজ রং ব্যবহার করা হয়। ট্যাবলেটের আকর্ষণ ও কাটতি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ফলের সুগন্ধি যোগ করা হয়। ইয়াবা ট্যাবলেটে ‘আর’ এবং ‘ডব্লিউওয়াই’ লোগো ব্যবহার করা হয়।

 

ইটিভি অনলাইন: কোন বয়সের ছেলে-মেয়েরা ইয়াবায় বেশি আসক্ত হচ্ছে?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: মার্কিন ক্যাবল টেলিভিশন সিএনএনের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ইয়াবা ব্যবহারকারীদের ৮৮ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের কম। ৫৫ শতাংশ মাদকসেবীর বয়স ২২ থেকে ২৯ বছরের মধ্যে। যা হলো একজন মানুষের জীবন গড়ে ওঠার এবং পরিবার ও সমাজকে কিছু দেওয়ার সবচেয়ে সঠিক সময়।

 

ইটিভি অনলাইন: ইয়াবা সেবনের নেতিবচাক প্রভাবগুলো কী কী?

ড. মুনীরউদ্দিন: ইয়াবা গ্রহণের ফলে শারীরিক, সামাজিক, অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে।  ইয়াবা গ্রহণের ফলে প্রচণ্ড নেশার উদ্রেক হয়। এই নেশাই মানবদেহের মূল ক্ষতির কারণ। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত ইয়াবা গ্রহণ করলে কিডনি ও ফুসফুস নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে অত্যধিক। ইয়াবা সেবনের ফলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ও শরীরের মারাত্মক নেচিবাচক প্রভাব পড়ে। ইয়াবার উপাদান মিথাইল অ্যামফিটামিন রক্তনালিকে সংকুচিত করে দেয়। এর ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি ও রক্তচাপ বেড়ে যায়। নিয়মিত ইয়াবা সেবনের ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা প্রবণতা বেড়ে যায়।

ইয়াবা হেলুসিনেশন সৃষ্টি করে। যার মাধ্যমে দৃষ্টিভ্রমের ফলে মাদকসেবীর মস্তিষ্কে কল্পিত কিছু দেখার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইয়াবা যৌন উত্তেজনা বৃদ্ধি করে বলে সামাজিক অনাচার বৃদ্ধি পায়। হঠাৎ করে ইয়াবা সেবন ত্যাগ করার কারণে প্রচণ্ড বিষণ্ণতা দেখা দিতে পারে, এতে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়।

 

ইয়াবার ভয়ঙ্কর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হচ্ছে-চরম উত্তেজনা, শরীরের তাপ বৃদ্ধি পাওয়া, খিটখিটে মেজাজ, অনিদ্রা, হাত-পা কাঁপা, দুশ্চিন্তা, দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া, চোখে ঝাপসা দেখা, আক্রমণাত্মক আচরণ এবং প্রচণ্ড খিচুনির কারণে মৃত্যু হওয়া।

এছাড়া ইনজেকশনের মাধ্যমে ইয়াবা গ্রহণ করতে গিয়ে অনেকেই এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি ও সি’তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। দীর্ঘসময় ধরে সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম বা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে উত্তেজক ও নিস্তেজক ব্যবহার বিপজ্জনক। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা শরীরের বিভিন্ন মেটাবলিক প্রক্রিয়াসহ সুষ্ঠু চিন্তাধারায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। ফলে জীবনের প্রতিটি কার্যক্রমই হয়ে পড়ে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন ইয়াবা গ্রহণ করার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হলে ইয়াবাসেবনকারী অতি সহজে মৃত্যুবরণ করে।

 

ইটিভি অনলাইন: এতো নেতিবাচক প্রভাব থাকার পড়েও যুব সমাজ কেন ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: মূলত হতাশা থেকেই যুব সমাজ ইয়াবায় আসক্ত হচ্ছে। বর্তমানে বেকারত্বের কারণে যুব সমাজে সবচেয়ে বেশি হতাশা বিরাজ করছে। এছাড়া পারিবারিক সুসম্পর্কের অভাবের কারণে সন্তানরা তাদের সমস্যার কথা পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে পারছে না। মূল্যবোধ, নীতি নৈতিকতা ও সুশিক্ষার অভাবেও ইয়াবার দিকে যুব সমাজ আসক্ত হচ্ছে।

 

ইটিভি অনলাইন: ইয়াবার এ করাল গ্রাস থেকে কীভাবে যুব সমাজকে রক্ষা করা যায়?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: মানুষের মধ্যে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে সজগণকে সচেতন করতে হবে। সন্তানদের প্রতি কঠোর না হয়ে পারিবারিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধি করতে হবে। সন্তানদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলতে হবে। মাদক সেবীদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ইয়াবার বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। ইয়াবার বিরুদ্ধে কঠোর আইন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োগ করতে হবে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে এই আইনের যেন আবার অপপ্রয়োগ না হয়।

 

ইটিভি অনলাইন: কত ধরনের ইয়াবা পাওয়া যায় এবং এসবের মূল্য কেমন?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: উপাদানভেদে ইয়াবা বিভিন্ন মূল্যের হয়ে থাকে। যারা ইয়াবার প্রমোটার বা ব্যবসায়ী তারা প্রথমে ইয়াবাতে যুব সমাজকে আসক্ত করার জন্য বিনা মূল্যে ইয়াবা সরবারহ করে থাকে। যখন ইয়াবা সেবনকারীরা ইয়াবাতে ভালোভাবে আসক্ত হয়ে যায় তখন আর ফ্রিতে  ইয়াবা দেয় না। তখন বাধ্য হয়ে ইয়াবা সেবনকারীরা টাকা দিয়ে ইয়াবা কিনে। কয়েক রকরে ইয়াবা বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এর মধ্যে ‘পিংক চাম্পা’র দাম সবচেয়ে কম। এটি দুইশ’ টাকা থেকে সাড়ে তিনশ টাকার মধ্যে বিক্রি করে থাকে।  ‘আর-৭’ নামের ইয়াবার মূল্য নয়শ’ টাকা, এবং কন্ট্রোলার নামের ইয়াবার মূল্য সবচেয়ে বেশি। এটির মূল্য দুই হাজার টাকা। 

 

ইটিভি অনলাইন: কোথা থেকে বাংলাদেশে এই ইয়াবার যোগান আসছে?

 

ড. মুনীরউদ্দিন:  বাংলাদেশের ইয়াবার যোগানটা মূলত মিয়ানমার থেকে আসে। বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে প্রায় ৬০টি ইয়াবা তৈরির ফ্যাক্টেরি রয়েছে। এসব ইয়াবা তৈরির কারখানা বন্ধের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

 

ইটিভি অনলাইন: প্রতিদিন কী পরিমাণ ইয়াবা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে আপনি মনে করেন?

 

ড. মুনীরউদ্দিন:  আমার পক্ষে এই পরিমাণ নিদির্ষ্ট করে বলা মুশকিল। দেশের গোয়েন্দা সংস্থা হয়তো বা কাছাকাছি একটা ধারনা দিতে পারবে। তবে মার্কিন ক্যাবল টেলিভিশন সিএনএনের অনলাইন সংস্করণের ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী এবং দেশের সংশ্লিষ্ট অনেকেরই ধারণা যে, দেশে প্রতিদিন এক কোটি বা তারও বেশি ইয়াবা প্রবেশ করছে।

 

ইটিভি অনলাইন: এসব ইয়াবার চোরচালান বন্ধে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এসব কারখানা বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে পারে বাংলাদেশ । প্রয়োজনে যৌথ তদন্তের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও অন্যান্য বাহিনীকে চোরাচালান রোধে আরও বেশি কার্যকর করতে হবে। সম্প্রতি আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ইয়াবা কারবারের সঙ্গে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমরা এ আশ্বাসের দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। এ ব্যাপারে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা উচিত।

 

ইটিভি অনলাইন: ইয়াবার প্রভাবে ভবিষতে আর কী কী ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে বলে আপনি মনে করেন?

 

ড. মুনীরউদ্দিন: এ সর্বনাশা প্রবণতা রোধ করা না গেলে অচিরেই দেশের উন্নয়নে ধস নামবে। নেশাগ্রস্ত রুগ্ন তরুণরা নানাভাবে সমাজ ও দেশের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সারা দেশে ইয়াবা সেবন করে কোটি কোটি তরুণ নিজেদের ধ্বংস করছে। ইয়াবা হল সবচেয়ে ক্ষতিকর মাদক। আসক্তদের এটি দ্রুত মৃত্যুর দিকে টেনে নিয়ে যায়। এদের হিতাহিত জ্ঞান কমে যায়। নেশার অর্থ সংগ্রহের জন্য তারা করতে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। এমনকি নিজের মা-বাবা, ভাইবোন, আত্মীয়স্বজনকে হত্যা করার মতো ঘটনাও তারা নির্দ্বিধায় ঘটাতে পারে। চড়া দামে নিয়মিত মাদক কেনার পয়সা না পেলে মাদকসেবীরা খুনখারাবি, হত্যা, হাইজ্যাক, চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কৃত অপরাধের জন্য তাদের কোনো অনুশোচনা থাকে না। বিভিন্ন অপরাধীচক্র নানা অপরাধ কাজে তরুণ-তরুণীদের নিয়মিত ব্যবহার করে থাকে। ফলে সমাজ কলুষিত হয়, অপরাধ দ্রুত বাড়তে থাকে। আইনশৃঙ্খলার দ্রুত অবনতি ঘটে।

 

ইটিভি অনলাইন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার সবাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।

 ড. মুনীরউদ্দিন: আপনাকেও ধন্যবাদ। ইটিভি অনলাইনের প্রতি রইল শুভ কামনা।

 

//এআর