ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ঘুরে আসুন মিনি কক্সবাজার মৈনট ঘাট

সোহাগ আশরাফ

প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ১২:০৪ পিএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বুধবার

­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­­চারদিকে বালু চিকচিক স্থলভূমি। সামনে রুপোর মতো চকচকে পানি। এটা পদ্মা, আমাদের প্রিয় পদ্মা নদী। মৈনট পদ্মাপাড়ের একটি খেয়াঘাট। এখান থেকে রোজ ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে ট্রলার ও স্পিডবোট চলাচল করে।যেখানে আসলে আপনি সত্যিই মুগ্ধ হবেন পদ্মা নদীর অপরূপ জলরাশি দেখে।

কী নেই এখানে। বিশাল জলরাশি। পদ্মায় হেলেদুলে ভেসে বেড়ানো জেলেদের নৌকা। আর পদ্মার তীরে হেঁটে বেড়ানো। সব মিলে কিছুক্ষণের জন্য আপনার মনে হবে আপনি ঢাকার দোহারে নয়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আছেন। মূলত এ কারণেই অনেকে মৈনট ঘাটকে বলে থাকেন ‘মিনি কক্সবাজার’।

একসময় মৈনট ঘাট থেকে ফরিদপুর যাতায়াতের জন্য কার্তিকপুর বাজার থেকে মৈনট ঘাট পর্যন্ত প্রশস্ত রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ফেরির প্ল্যানটা বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে এই রাস্তাটিও অবহেলায়-অযত্নে ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যায়। অনেকদিন এভাবে থাকার কারণে অপ্রয়োজনে কেউ ওই দিকটায় তেমন একটা পা বাড়াত না।

সম্প্রতি সড়কটি পুনরায় মেরামত করার ফলে আবার আসতে শুরু করছে পর্যটক। এদের বেশির ভাগই আসছে দোহার, নবাবগঞ্জ, শ্রীনগর, কেরানীগঞ্জ থেকে। মৈনট ঘাট এখনও ব্যাপকভাবে পরিচিত না হওয়ার কারণে ভ্রমণপিপাসু অনেক মানুষই বঞ্চিত হচ্ছেন মৈনট ঘাটের সৌন্দর্য উপভোগ করা থেকে।

খুব ভোরে মৈনট ঘাটেই বসে আপনি দেখতে পাবেন সারা রাত পদ্মা নদীতে জেলেদের শিকার করা মাছের বাজার। পদ্মা নদীর সেই নামকরা ইলিশসহ অনেক প্রজাতির মাছই আপনি কিনতে পারবেন এখান থেকে, একদম টাটকা। মৈনট ঘাট দর্শনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন রাস্তার দুই পাশের নিম্নভূমি, যেখানে বর্ষার আগে বিস্তীর্ণ ভূমিজুড়ে বাদামের চাষ করা হয়, আর সবই বর্ষায় পদ্মার পানিতে তলিয়ে যায়। সে এক দেখার মতো দৃশ্য। বর্ষার আগে এর সৌন্দর্যের কমতি নেই। তখন দেখা যাবে পদ্মা নদীর শান্ত রূপ। একটা সন্ধ্যায় পদ্মা নদীতে সূর্যাস্ত দেখলে পরবর্তী একশোটা সন্ধ্যার কথা মনে থাকবে আপনার।

স্পিডবোট, ট্রলার অথবা খেয়ানৌকা নিয়ে পদ্মার বুকে ভেসে বেড়াতে পারবেন। আপনি চাইলে দুপুরে পদ্মার জলে গোসলও করতে পারেন। তবে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

 

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে মৈনট ঘাটে আসার সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায়টি হচ্ছে গুলিস্তানের গোলাপ শাহর মাজারের সামনে থেকে সরাসরি মৈনট ঘাটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা যমুনা পরিবহনে চেপে বসা। ৯০ টাকা ভাড়া আর দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময়ের বিনিময়ে আপনি পৌঁছে যাবেন মৈনট ঘাট। ফেরার সময় একই বাসে আবার ঢাকা চলে আসবেন। মৈনট থেকে ঢাকার উদ্দেশে শেষ বাসটি ছেড়ে যায় সন্ধ্যা ৬টায়। গুলিস্তানের একই স্থান থেকে এন মল্লিক পরিবহনেও আসতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে নামতে হবে নবাবগঞ্জের মাঝিরকান্দায়। ভাড়া ৭০ টাকা। মাঝিরকান্দা থেকে লোকাল অটোতে দোহারের বাঁশতলা। ভাড়া ১৫ টাকা। চাইলে লক্ষ্মীপ্রসাদ নামক স্থানে নেমে পোদ্দারবাড়ি নামক পুরোনো বাড়িটিও দেখে নিতে পারেন। আর জজবাড়ি, উকিলবাড়ি, কোকিলপ্যারি দালান, খেলারাম দাতার বাড়ি যাকে স্থানীয়ভাবে আন্ধার কোঠা বলা হয়, এসব দর্শনীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে চাইলে মাঝিরকান্দার আগে কলাকোপা নামক স্থানেই নামতে হবে।

কোথায় থাকবেন

ট্যুরিস্টদের থাকার জন্য মৈনট ঘাটের আশপাশে কোনো হোটেল, রিসোর্ট, বোর্ডিং এখনো তৈরি করা হয়নি। স্থানীয় কোনো বাসিন্দার বাড়ি ম্যানেজ করতে না পারলে দিনে এসে দিনেই ফিরে যাওয়া ভালো।

কোথায় খাবেন

বেশির ভাগ মানুষেরই ইচ্ছা থাকে পদ্মার তীরে বসে পদ্মার সেই নামকরা ইলিশ খাওয়ার। মৈনট ঘাটে কিছু ভাতের হোটেল আছে। ইলিশ ৬০ থেকে ৯০ টাকা। বড় সাইজের ইলিশ খেতে চাইলে আগেই অর্ডার দিতে হবে। এ ছাড়া বোয়াল ৮০ থেকে ১০০ টাকা, চিংড়ি ৬০ থেকে আশি টাকা। ভাত ২০ টাকা প্লেট।

মনে রাখবেন অবশ্যই মিষ্টি খেয়ে আসবেন। নিরঞ্জন মিষ্টান্নভাণ্ডার, মুসলিম সুইটস, রণজিৎ মিষ্টান্নভাণ্ডারসহ আরো কিছু মিষ্টির দোকান আছে এখানে। চমচম ও কালোজাম ১৬০ টাকা কেজি।

সতর্কতা

একটি বিষয় সবার জানা দরকার। সাঁতার না জানলে গোসল করার সময় পদ্মার বেশি গভীরে যাবেন না। আপনার একটু অসচেতনতায় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।

//এআর