ঢাকা, মঙ্গলবার   ৩০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

পাহাড়ের কোলে অপরূপ নৈস্বর্গ

প্রকাশিত : ০১:৩৫ পিএম, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০৫:৩৫ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

সবুজ পাহাড়ে ঘেরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি। শহরের  কোলাহল আর যান্ত্রিকতা থেকে দূরে অবস্থিত এ ক্যাম্পাস যেন প্রকৃতির কোলে গড়ে উঠা এক অপরূপ ও অনন্য নৈস্বর্গ। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এ বিদ্যাপীঠ যেন প্রকৃতি আর মানব প্রাণের মেলবন্ধন। সবুজ বৃক্ষসারির উপর উড়ন্ত বিচিত্র রঙের হরেক রকম পাখি, সবুজ পাহাড়ের কোলে থাকা হরিণ, অজগর কিংবা বিচিত্র আর দুর্লভ প্রাণীর জীবন্ত জাদুঘর চবি ক্যাম্পাস। ঝুলন্ত সেতু,ঝর্ণাধারা, উদ্ভিদ উদ্যান, জাদুঘর, রহস্যময় চালন্দা গিরিপথ কিংবা সুবিশাল মাঠ কি নেই চবি ক্যাম্পাসে! এসবের মায়াবী সৌন্দর্য উপভোগ করতে ঘুরে আসুন চবি ক্যাম্পাসে।

ষড়ঋতুর পালাবদল হৃদয় দিয়ে অনুভব করা যায় চবি ক্যাম্পাসে। গ্রীষ্মের আগমনে রুক্ষ প্রকৃতি। হঠাৎ সবুজ পাহাড় ঘিরে কালো মেঘের আনাগোনা আর কালবৈশাখী ঝড়, বর্ষার আগমনে প্রকৃতির সতেজতা লাভ, শরতের কাশফুল, হেমন্তের সোনালী ধান কিংবা ঋতুরাজ বসন্তে ফোঁটা ফুল সবই দেখা যায় চবি ক্যাম্পাসে থেকে কিংবা গিয়ে।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই বিশ^বিদ্যালয় ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর হাটহাজারিতে ১৭৫৩ একর পাহাড়ি এবং সমতল ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। চবির প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক আজিজুর রহমান মল্লিক। বর্তমান উপাচার্য ডক্টর ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। আয়তনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় এটি।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি

প্রকৃতি তার অপার মহিমায় সাঁজিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে। চবি ঝর্ণা, ঝুলন্ত সেতু, কাটাপাহাড়সহ মানবসৃষ্ট স্থাপনাগুলোও যে কাউকে আকৃষ্ট করবে।

*চবি ঝর্ণা

 

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন এক পাহাড়ি ঝর্ণা। পাহাড় থেকে নেমে আসা জলরাশির খেলা ও ঝরনার পাশের নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আসা প্রকৃতিপ্রেমিদের পদচারণায় মুখরিত থাকে এই স্থানটি।

 

*ঝুলন্ত সেতু

 

রাঙামাটির সৌন্দর‌্যও দেখা যায় চবি ক্যাম্পাসে। রাঙামাটির ঝুলন্ত সেতুর মত চবিতেও রয়েছে হৃদয়কাড়া এক ঝুলন্ত সেতু। সেতুটি সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের কাছে অবস্থিত।

*ক্যাফেটেরিয়া

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। একটি চাকসু ভবনের নিচ তলায় আরেকটা আইটি ফ্যাকাল্টিতে। সারাদিন ছাত্রছাত্রীদের কোলাহলে ব্যস্ত থাকে ক্যাফেটেরিয়াগুলো।

 

শাটল ট্রেন

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হলো শাটল ট্রেন। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে আছে এটি। ক্যাম্পাস শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দুরে হওয়ায় ছাত্রদের যাতায়াতের জন্য শাটলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোজ ১৫-১৬ হাজার শিক্ষার্থীর যাতায়াতের মাধ্যম এই শাটল ট্রেন। পৃথিবীতে একমাত্র চবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গামী শাটল ট্রেন এখনও চলাচল করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ বলা হয় শাটল ট্রেনকে।

চবি শিক্ষার্থীদের ছাত্রজীবনের অপরিহার্য অংশ এই শাটল ট্রেন ভ্রমণ। ঘুরতে আসা অনেকেই প্রথম দর্শনেই শাটলের প্রেমে পড়েন। শাটল ট্রেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা করেছে। শাটল নিজেই একটা বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রন, যা দিয়ে যাত্রাপথে অবিরত ড্রাম বাজিয়ে গানের ছন্দের তালে তালে পাড়ি জমায় শিক্ষার্থীরা। গান, আড্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় এই শাটল। এই ট্রেনের বগিতে গান করে অনেকেই হয়েছেন বিখ্যাত গায়ক। আইয়ুব বাচ্চু, এইআই টুটুলদের মত বড় বড় কন্ঠশিল্পীর স্মৃতি বিজরিত এই শাটল ট্রেন।

চলন্ত শাটল ট্রেনের জানালার ফাঁকে দেখা যায়, মানুষের বিচিত্র জীবন, অপরূপ প্রকৃতি কিংবা রেললাইনের পাশে থাকা শুভ্র কাশফুলে হাতের স্পর্শ লাগানো সবই সম্ভব কেবলমাত্র চবিতে অধ্যয়ন করলেই।

 

কাটাপাহাড়

প্রধান ফটক থেকে সামনের দিকে বিশাল পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বিস্মৃত পিচঢালা রাজপথ, যার নাম কাটা পাহাড়। দুপাশে সুউচ্চ পাহাড় মাঝখান দিয়ে রাস্তা, একটু পরপর যাত্রী ছাউনি এবং পাহাড়ের উঁচু উঁচু টিলাতে, গাছ-গাছালিতে নানা প্রজাতির বণ্যপ্রাণী এবং মায়া হরিণের লুকোচুরি সত্যিই দর্শনার্থীর মুহূর্তেই নজর কেড়ে নিতে সক্ষম। কাটা পাহাড় দিয়ে সামনে হাঁটলে প্রথমে রাস্তার বাম পাশে তাকালে চোখে পড়বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটির অফিস। ঠিক তার ডান পাশে নান্দনিক নকশায় গড়া বাণিজ্য ভবন এবং সামনের দিকে একে একে শহীদ মিনার, বুদ্ধিজীবী চত্বর, গ্রন্থাকার চত্বর, আইটি ভবন, জাদুঘর, মুক্তমঞ্চ, কলা অনুষদ, জারুলতলা, চাকসু এবং জনপ্রিয় কলা অনুষদের ঝুপড়ি।

ঝুপড়ির মধুর আড্ডা

চবির বিভিন্ন অনুষদ ও হলগুলোর পাশে রয়েছে সারি সারি অনেক দোকান। এসব দোকানকে ঝুপড়ি নামে ডাকা হয়। চবি শিক্ষার্থীদের আড্ডার অন্যতম জায়গা এই ঝুপড়িগুলো। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সুস্বাদু আর রুচিশীল খাবারগুলোর উৎস হলো এসব ঝুপড়ি। হরেকরকম ভর্তা আর নানা মজাদার খাবারের জমজমাট আয়োজন করে বিভিন্ন অনুষদের সঙ্গে থাকা পাহাড়ের কোলঘেঁষে টিনের ছাউনিতে নির্মিত এই ঝুপড়িগুলো। অপেক্ষাকৃত অল্প দামে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সকালের নাস্তা, দুপুরের খাবার, গরম ভাত কিংবা ভর্তার জন্য অপেক্ষমাণ শত শত শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখর এই ঝুপড়িগুলো। যেন ধনী, মধ্যবিত্ত, নি¤œ মধ্যবিত্ত এবং গরিব শিক্ষার্থীদের এক মিলনমেলা। যেখানে সবাই সমান, সহযাত্রী  সবাই রাজা, সবাই বাদক, গায়ক কিংবা আড্ডাবাজ। কলা অনুষদের ঝুপড়ি, সমাজ বিজ্ঞানের ঝুপড়ি, লেডিস হলের ঝপড়ি এদের মধ্যে অন্যতম।

স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভ

 বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথেই এই ভাস্কর্যটি অবস্থিত। স্মৃতিস্তম্ভটির স্থপতি অধ্যাপক সৈয়দ সাইফুল কবির। স্বাধীনতা যুদ্ধে চবির ১জন শিক্ষক, ১১ জন ছাত্র ও ৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিহত হন। তাঁদের আত্মত্যাগ আর বীরত্বের স্মৃতিস্বরূপ ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। ভূমি থেকে স্মরণের মূল বেদি পর্যন্ত মোট চারটি ধাপ, যার প্রতিটি ধাপ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। প্রথম ধাপ বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় ধাপ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, তৃতীয় ধাপ সত্তরের নির্বাচন ও চতুর্থ ধাপে প্রতিফলিত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্মৃতিস্তম্ভে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ছবি রয়েছে, তারা হলেন- প্রকৌশল দফতরের চেইন ম্যান বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেন, চাকসুর জিএস আব্দুর রব, শিক্ষার্থী ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, ফরহাদ-উদ-দৌলা, নাজিম উদ্দিন খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রভাষ কুমার বড়ূয়া এবং প্রহরী সৈয়দ আহমদ।

বুদ্ধিজীবী চত্তর      

বাণিজ্য অনুষদের সামনে ও শহীদ মিনারের বিপরীত পাশে বুদ্ধিজীবী চত্তরের অবস্থান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ১৯৮৫ সালে এটি স্থাপন করা হয়। স্মৃতিস্তম্ভটিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মের সূতিকাগার হিসাবে ভাবা হচ্ছে।

শহীদ মিনার

বুদ্ধিজীবী চত্তরের বিপরীত পাশে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার অবস্থিত। এটা ১৯৯৩ সালে স্থাপন করা হয়।

 

স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরাল

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে ভাস্কর্যটির অবস্থান। খ্যাতিমান শিল্পী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যায়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক মুর্তজা বশীরের একক প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ সাইফুল কবীর ভাস্কর্যটির নকশা করেন। ভাস্কর্যটিতে ৪টি পাখির প্রতীকী নির্মাণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির ছয়দফা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রমধারা। পাখির ম্যুরালের ডানায় ২১টি পাথরের টুকরায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি। ভাস্কর্টির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার ওপর।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর

এই জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৭৩ সালে। এতে মধ্যযুগের চারটি কামান রয়েছে। জাদুঘর ভবনটি পাঁচটি গ্যালারিতে বিভক্ত, যেখানে রয়েছে সমসাময়িক আর্ট গ্যালারি, প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রতœতাত্তিক আর্ট গ্যালারি, ভাস্কর্য গ্যালারি, লোকশিল্প গ্যালারি এবং ইসলামিক আর্ট গ্যালারি।

মুক্তিযুদ্ধে চবি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাঙালী জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাকর্মচারীরা অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ সালের ৮ মার্চ উপাচার্য ড. এ.আর মল্লিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষক, ১১ জন ছাত্র এবং ৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী শহীদ হন। যুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেন বীর প্রতীক  খেতাবে ভূষিত হন।

সমুদ্র সম্পদ যাদুঘর

বিশ্ববিদ্যালয় ভিত্তিক দেশের একমাত্র সমুদ্র সম্পদ জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর নাম সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট। এখানে ৫৫০টির মতো সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাঙ্গর থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক মাছ, আজব বাণাকেল, অক্টোপাস, শামুক, সাপ সহ রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর জীব বৈচিত্র।

ফরেস্ট্রি এলাকা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকটা দৃষ্টিনন্দন করেছে ফরেস্ট্রি এরিয়া। ইনস্টিটিউট অফ ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের উদ্যোগে করা সবুজ বনায়ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসকে একটি আকর্ষনীয় পর‌্যটন স্পটে পরিণত করেছে। ৫০ একর ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত ফরেস্ট্রি এরিয়া সৌন্দর্যের এক অনন্য নিদর্শন। এখানে রয়েছে হেলিপ্যাড, লেক, সুইমিংপুল, মেমোরিয়াল গার্ডেন ইত্যাদি।

জীববৈচিত্র

পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠা এ বিশ^বিদ্যালয়ের আকাঁবাকাঁ পথ, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা ও বন্যপ্রাণী যে কাউকে আকৃষ্ট করবে। চবি ক্যাম্পাসে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী। কাটা পাহাড়ে, বাণিজ্য অনুষদের পেছনে কিংবা ফরেস্টিতে দেখতে পাওয়া যায় বাদামী রংয়ের হরিণ। হরিণগুলো বেশ লাজুক ও মায়াবী

রহস্যঘেরা চালন্দা গিরিপথ

অগণিত লুকায়িত আকর্ষণের ভিড়ে চবি ক্যাম্পাসে রয়েছে রহস্যময় চালন্দা গিরিপথ। প্রাকৃতিক ঝরনা, পাহাড়ের প্রাণজুড়ানো রূপে বহুদিন ঢাকা পড়েছিল চালন্দা গিরিপথের সৌন্দর্য। কলা অনুষদের ঝুপড়ির ছড়ার পানি দিয়ে ৫০মিনিট পশ্চিমে হাটার পর ছড়ার বামে বা দক্ষিণে এই রহস্যময় মায়াবী সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সেখানে হাটু পরিমাণ পানি আছে কিছু কিছু জায়গায়। পাহাড়ের বিশুদ্ধ পানি সমৃদ্ধ এ গিরিপথ ধরে এগুতে থাকলে দেখা যাবে সেখানে পাহাড়ের আদা-সরিষাসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদের অভূতপূর্ব দৃশ্য। প্রকৃতিপ্রেমী শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রতিদিনই উপভোগ করতে যায় নয়নাভিরাম সেই সৌন্দর‌্য। চালন্দা গিরিপথ হয়ে উঠেছে অন্যতম দর্শনীয় স্থান।

হল জীবনের হইহুল্লোর

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে ১১টি আবাসিক হল। এর মধ্যে ৭টি ছেলেদের জন্য আর ৪টি মেয়েদের। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে একটি হল নির্মাণাধীন রয়েছে। এছাড়া বৌদ্ধ ছাত্রদের জন্য রয়েছে গোবিন্দ গোণালংকার ছাত্রাবাস।

প্রায় ২৫হাজার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আবাস ১২টি আবাসিক হল। আড্ডা, মজার অনুভুতিগুলো ও শেয়ার করা, রাত জেগে পড়াশোনা, ঘুমাতে গেলে ছাড়পোকার সঙ্গে যুদ্ধ সবই উপভোগ করা যায় হলগুলোতে। রুমমেট অসুস্থ হয়ে পড়লে নির্ঘুম রাত জেগে সেবা করা এগুলো হল জীবনের নিত্য নৈমত্যিক ঘটনা। সুখে দুঃখে একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলো কাঁটে এখানকার শিক্ষার্থীদের। হলে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হল জীবন জুড়ে জড়িয়ে থাকা হাজারো আবেগ ও অনুভুতির কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হল জীবনের হাজারো সমস্যাকে নিত্যদিনের সঙ্গী করেই শিক্ষার্থীরা তাদের অধ্যায়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। এতো ক্লান্তি আর পরিশ্রমের মাঝেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পায় এক ধরনের সুখের সন্ধান। এ সুখকে পুঁজি করেই ক্যাম্পাসের আনান্দঘন মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করেন তারা। এর ফলে শিক্ষাজীবন শেষ করেও অনেকে আবার ফিরে আসেন ফেলে যাওয়া স্মৃতির টানে। হয়তো তাই ভেবেই কেউ কেউ গেয়ে উঠেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিনগুলি যায় হারিয়ে যায়, উজ্জ্বল বর্ণালী দিনগুলি মিলিয়ে যায় হাওয়ায়।’

//এআর