ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, বাস্তবিক জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে হবে

প্রকাশিত : ০৬:০৯ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ০৩:৪৬ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার

বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছে ভারতের ম্যানেজমেন্ট টিচার্স কনসোর্টিয়াম বা এমটিসি গ্লোবাল। কোয়ালিটি এডুকেশন বা গুণগত শিক্ষা প্রসারে কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ভোলানাথ দত্ত বাংলাদেশ সফর করেন। এসময় একুশে টেলিভিশন কার্যালয়ে আসেন তিনি। এসময় কোয়ালিটি এডুকেশন বিষয়ে ইটিভি অনলাইনের সাথে কথা বলেন। তার সঙ্গে কথপকথনের মূল অংশগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। ইটিভি অনলাইনের হয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন তমাল আব্দুল কাইয়ুম।  

ইটিভি অনলাইন : কেমন আছেন আপনি?

ভোলানাথ দত্ত : বেশ ভালো আছি।

ইটিভি অনলাইন : আপনি তো বিশ্বব্যাপী উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছেন।  কোয়ালিটি এডুকেশন (গুণগত শিক্ষা) সম্পর্কে যদি সংক্ষেপে বলতেন।

ভোলানাথ দত্ত :  কোয়াটিলটি এডুকেশন বলতে ওই শিক্ষা ব্যবস্থাকে বোঝায় যা মানুষকে আত্ম-চিন্তনের মাধ্যমে কর্মমুখী হিসেবে গড়ে তোলে। এই কোয়ালিটি এডুকেশনের কয়েকটি ফিচার (মাপকাঠি) রয়েছে। যেমন জ্ঞান, স্কিল, মনোভাব, মূল্যবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদির উন্নয়ন ঘটানো। শুধু একাডেমিক শিক্ষার মাধ্যমে সীমাবদ্ধ থাকলেই হবে না। বরং বাস্তবিক পর্যায়ের জ্ঞান আহরোণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : কোয়ালিটি এডুকেশন সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আপনার কেমন ধারণা?

ভোলানাথ দত্ত : কোয়ালিটি এডুকেশন বলতে যা বোঝায় তা বাংলাদেশে খুব বেশি নেই বললেই চলে। বাংলাদেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু নলেজ (জ্ঞান) বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের স্কিল (দক্ষতা) তৈরি হচ্ছে না। স্কিল তৈরি হলেও তা অল্প পরিমাণে হচ্ছে। আর এ কারণেই আপনি লক্ষ করবেন বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। শুধু শিক্ষিত নয়, উচ্চ শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বেশি। যারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি তাদের মধ্যে কিন্তু বেকারের সংখ্যা এতো প্রকট নয়। তারা একটা না একটা কিছু করছে।

ইটিভি অনলাইন :  কোয়ালিটি এডুকেশন নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ কী কী পদক্ষেপ নিতে পারে?

ভোলানাথ দত্ত : আমার মনে হয় কর্মমূখী শিক্ষার উপরে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। তাই শিক্ষার্থীদের নলেজ (জ্ঞান) বিতরণের পাশাপাশি স্কিল বা দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। সেই সাথে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিকাশ ঘটাতে হবে। একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে যদি পজিটিভ (ইতিবাচক) মনোভাব থাকে তবে তাকে কিন্তু কখনো বসে থাকতে হয় না বা পিছু ফিরে তাকাতে হয় না। শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর উদ্যোক্তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্য করতে হবে। সহজ ফান্ডিং ব্যবস্থা, ফ্রি ও সহজ পদ্ধতির রেজেস্ট্রেশন, নির্ধারিত একটা সময় পর্যন্ত ট্যাক্স মওকুফ রাখতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে ভারত কীভাবে অগ্রসর হচ্ছে ?

ভোলানাথ দত্ত :  বর্তমান মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতে স্কিল ডেভেলপমেন্টের (দক্ষতা বৃদ্ধি) জন্য ‘মিনিস্ট্রি অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি মন্ত্রণালয় চালু করা হয়েছে। প্রতি বছর লাখ লাখ তরুণ-তরুণীকে এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে ভারত বর্তমানে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে বেশ উন্নতি করছে।

ইটিভি অনলাইন : তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ভারতের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা কখন শুরু হয়েছে?

ভোলানাথ দত্ত:  তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে ভারতের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয় ২০০০ সালের দিকে। বিজনেস প্রসেস আউট সোর্সিং (বিপিও) ইন্ডাস্ট্রিগুলো যখন ভারতে বিকশিত হয় তখনই প্রযুক্তি খাতের উন্নয়নটা শুরু হয়। এর পর থেকে আইটি (তথ্য-প্রযুক্তি) খাতকে কেন্দ্র করে বহু উদ্যোক্তা তৈরি হয়। আর এসব উদ্যোক্তাদের বেশির ভাগই তরুণ ছিল। এইসব তরুণদের উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

ইটিভি অনলাইন : স্কিল ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কোন বিষয়টার প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?

ভোলানাথ দত্ত:  আমি বলবো স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য একাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি অবশ্যই বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রশিক্ষণ একাডেমিক ভাবে দেওয়া যেতে পারে বা আলাদা কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমেও হতে পারে। শুধু সরকারি চাকরির জন্য শিক্ষার্থীদের তৈরি করলে চলবে না। শিক্ষার্থীরা পড়াশুনা শেষে যাতে আত্ম-কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে বা উদ্যোক্তা হতে পারে সেই বিষয়টি সব সময় মাথায় রাখতে হবে।

ইটিভি অনলাইন : জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার একটি লক্ষে কোয়ালিটি এডুকেশেনের কথা বলা হয়েছে। সেই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ কী কী ভূমিকা নিতে পারে?

ভোলানাথ দত্ত:  জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৪ নম্বর গোলে কোয়ালিটি এডুকেশনের কথা বলা হয়েছে। আর এই কোয়ালিটি এডুকেশনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি স্কিল ডেভেলপ (দক্ষতা বৃদ্ধি) করতে হবে। সেই সাথে শিক্ষার্থীদের ইতিবাচক মনোভাব তৈরি মাধ্যমে মূল্যবোধ ও নৈতিকতার উন্নয়ন ঘটাতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বাস্তবিক পর্যায়ের জ্ঞান আহরোণ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে। বাংলাদেশকে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে আরও বেশ জোর দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্যোগ বেশ প্রশংসার দাবিদার।

ইটিভি অনলাইন : আপনাকে ধন্যবাদ।

ভোলানাথ দত্ত :  আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।