ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জীবনে অপ্রাপ্তি নেই, ক্ষোভও নেই: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

প্রকাশিত : ১১:৩১ এএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার

অ্যামিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, আমার এ জীবনে কোন অপ্রাপ্তি নেই, ক্ষোভও নেই। আমি শিক্ষক হতে চেয়েছি, প্রাপ্যের অধিক পেয়েছি। ছোটবড় সবার ছাত্র হতে চেয়েছি, সেখানেও শিখেছি। আমি বহু ছাত্রছাত্রীকে শিক্ষা দিয়েছি, আবার তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছিও। বাংলাদেশের মাটিতে জন্মিনি, তবে এখানেই যেন অন্তিম আশ্রয় হয়, এ আমার প্রার্থনা।‘অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আশি বর্ষপূর্তি উদযাপন’ উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে এসব বলেন কালজয়ী এ সাহিত্যিক।

বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে চন্দ্রাবতী একাডেমির উদ্যোগে ও এবি ব্যাংকের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অশীতিবর্ষপূর্তি উদযাপন কমিটি।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম।

আনিসুজ্জামান বলেন, জীবনের শুরুতে কমিউনিস্ট পার্টির সাথে যুক্ত থাকার সুযোগ হয়েছিল বলেই হয়তো আজকের আনিসুজ্জামান হয়ে উঠতে পেরেছি।

অশীতিবর্ষপূতির এ অনুষ্ঠানে পিছনে ফিরে তাকালে দেখি অনেকের কাছেই ঋণী উল্লেখ করে এ মনিষা বলেন, সবার মতোই সর্বাগ্রে তিনিও তাঁর মা-বাবার কাছে ঋণী। বাবা তাঁকে সময় সচেতন হওয়া আর মা তাঁকে সত্যানুবর্তি হতে শিখিয়েছেন। দেশ ও ভাষার প্রতি মায়ের প্রচন্ড অনুরাগ থাকায় ভাষা আন্দোলনের সময় তাঁর মা তাঁকে ও তাঁর কয়েকজন বন্ধুকে পেটপুড়ে খাইয়ে রণক্ষেত্রে পাঠিয়েছিলেন এবং পুলিশ ধরলে কি বলতে হবে সেটিও শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এ আলোকিত মানুষ তাঁর আনিসুজ্জামান হয়ে উঠার পিছনে অধ্যাপক অজিত গুহ, মুনীর চৌধুরী ও অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকসহ আরো যাদের অবদান রয়েছে, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাদের কথাও স্মরণ করেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাদের বাতিঘর। তিনি এ দেশ ও সমাজের আলোকবর্তিকা।

অর্থমন্ত্রী আরোও বলেন, লেখক ও অধ্যাপকের যে চরিত্র হওয়া উচিত আনিসুজ্জামান তা হয়েছেন। তবে তাঁর আরো একটি চরিত্রের গুণ আমরা পাই, সেটি হলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। এতে কেউ কষ্ট পেলেও তিনি তাঁর ‘সত্য’ বলা থেকে বিচ্যূত হন না।

তিনি বলেন, এ জন্যই আনিসকে নিয়ে বাংলাদেশ, বাংলাদেশের সাহিত্য, কৃষ্টি, ঐতিহ্য গর্ববোধ ও তৃপ্তিবোধ করতে পারে। আমরাও তাঁকে নিয়ে গর্ব করতে পারি, কারণ তিনি আমাদের এসবের প্রতিনিধি।

বাংলাদেশের এ বাতিঘরকে নিয়ে আরো আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান, নারীনেত্রী মালেকা বেগম, মানবাধিকার ব্যক্তিত্ব ও আইনজীবী সুলতানা কামাল, বাংলাদেশ শিশু একাডেমীর চেয়ারম্যান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ও প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। এ গুণীজনের উদ্দেশে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন জাহিদ রেজা নূর।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মাঙ্গলিক সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরের ধারার শিল্পীবৃন্দ। এর পরেই চন্দ্রাবতী একাডেমি প্রকাশিত ‘আনিসুজ্জামান সম্মাননা গ্রন্থ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ৩২০ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটির মূল্য ৫০০ টাকা। তবে অনুষ্ঠানস্থলে গ্রন্থটি ৩০০টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।

এ গুণী ব্যক্তিত্বকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন বই, উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

সূত্র:বাসস

/ এম / এআর