ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাখাইনে নিরীহ মানুষের ওপর নির্যাতন করা হয়নি : মিয়ানমার সেনাবাহিনী

প্রকাশিত : ১১:৪১ এএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ১২:১০ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

মিয়ানমার সেনাবাহিনী এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান নির্যাতনে নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে। শুধু তাই নয়, গত আগস্ট মাস থেকে বিদ্যমান সংকটে কোনো বেসামরিক রোহিঙ্গা নিহত হয়নি বলেও দাবি করা হয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে। গত সোমবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে চলমান সংকটকে “অর্থহীন” হিসেবে উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে “কোনো নিরপরাধ ব্যক্তির মৃত্যু হয়নি” বলেও দাবি করা হয়।

সেনাবাহিনীর মতে, বিগত ২৫ আগস্ট পুলিশ চৌকিতে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩৭৬জন ‘সন্ত্রাসী’ নিহত হয়েছে। যদিও বাস্তব চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের কারণে লাখ লাখ মুসলিম রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৬ লক্ষ বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা আরো বেশি।

বাংলাদেশ অংশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেয়া শরণার্থীরা সংকটের শুরু থেকেই অভিযোগ করে আসছেন তাদের রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনী গণহত্যা, নির্যাতন এবং ধর্ষণের মত গুরুতর অপরাধ করে আসছে। তাদের অত্যাচার থেকে নারী কিংবা শিশু কেউই রেহাই পায়নি।

অন্যদিকে এমন গুরুতর অভিযোগের পরেও মিয়ানমারের সরকারের নীরব ভূমিকা এবং সেনাবাহিনীর এমন প্রতিবেদনে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। শরণার্থী শিবির পর্যবেক্ষণ করেছেন এমন সংগঠন পরিস্থিতিকে ‘পৃথিবীর সবচেয়ে শোচনীয় শরণার্থী শিবির’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। মিয়ানমার সরকার এবং সেনাবাহিনীর এমন বিতর্কিত ভূমিকার পর মানবাধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মাধ্যমে পরিস্থিতির তদন্ত করতে জোর দাবি জানানো হচ্ছে।

গতকাল মঙ্গলবার জাতিসংঘের মুখপাত্র জেরেমি লরেন্স এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা খুব পরিষ্কারভাবেই জানি রাখাইন প্রদেশে কী হয়েছে। জাতিগত নিধন, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন এবং অন্য সব অত্যাচারের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেয়েছি আমরা। সেখানকার অধিবাসীরা বারবার আমাদেরকে এমন লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইউএস হলোকাস্ট মিউজিয়াম দাবি করেছে যে, তাদের কাছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর অত্যাচারের অনেক প্রমাণ রয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার এ অঞ্চলে প্রায় এক বছর তদন্ত করে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের নজিরবিহীন পরিকল্পিত গণহত্যা, ধর্ষণ এবং নির্যাতনের প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছে সংগঠনটি।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, বার্মিজ কর্তৃপক্ষ আরও একবার প্রমাণ করল যে, তারা পরিস্থিতির সমাধান চায় না। এমনকি তারা ঘটনার তদন্তও করতে চায় না। এমন অবস্থায় স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রয়োজন। পুরো বিষয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের তদন্ত করার সময় এসেছে বলেও মনে করেন তারা।

সূত্রঃ আলো জাজিরা, রয়টার্স

এস এইচ/এমআর