ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

নগরে এলো নবান্ন

প্রকাশিত : ১১:১৯ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ১১:২০ পিএম, ১৫ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

নগর জীবনে ব্যস্ততার ভিড়ে গ্রাম-বাংলার ফসল তোলার ‘নবান্ন উৎসব’ উদযাপনের কথা কজনেই বা মনে রাখে। ইট কাঠের দালানে বেড়ে উঠা  তরুণ প্রজন্মকে দেশজ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে এবং লোকজ উপাদানগুলোকে নাগরিক জীবনে আরও বেশি কি করে আপন করে নেওয়া যায় সেই প্রত্যয় এসেছে এবারের জাতীয় নবান্নোৎসবে।

আজ পহেলা অগ্রহায়ণ বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এই জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজন করে ২০তম নবান্ন উৎসবের। প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সাড়ম্বরে জাতীয় নবান্ন উৎসব ১৪২৪ উদযাপিত হয়।

সকাল ৭টা ১ মিনিটে প্রথমে হান মিয়া বেহালা এবং পরে গাজী আবদুল হাকিমের বাঁশীর সুরে উৎসবের শুরু হয় চারুকলার বকুলতলায়।  সকালে নবান্ন শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে টিএসসি চত্বর প্রদক্ষিণ করে চারুকলায় গিয়ে শেষ হয়।

এরপর মঞ্চে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহিন সামাদ, শামা রহমান, ফারিদা পারভিন ও সুমা রানী রায়। সকালের  আয়োজনে সম্মেলক গান পরিবেশন করে উদীচী, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী এবং দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে কাদাঁমাটি, নৃত্যম, নটরাজ, নৃত্যজন, নন্দন কলাকেন্দ্র, আচিকসহ প্রভৃতি সংগঠন।

সাংস্কৃতিক পর্বে লোকগানের সঙ্গে নৃত্যের পাশাপাশি অগ্রহায়ণে গ্রাম বাংলার প্রধান ফসল ধান কাটা নিয়ে ছিল বিভিন্ন গান। পটগান, ধামাইয়া গানসহ বিভিন্ন ধরনের লোকগানের সঙ্গে শিল্পীরা গেয়ে শোনান দেশের গান ও লালনগীতি আর রবীন্দ্র সংগীতের মূর্ছনায় আগত অতিথিদের মাতিয়ে রাখেন।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, “হাজার বছরের চিরায়ত এ উৎসবটি নগরায়নের প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছিল। নাগরিক তরুণরা আমাদের এ সর্বজনীন উৎসবের সঙ্গে পরিচিত নয়। গ্রামীণ পিঠাপুলি তো তারা অনেকেই চিনে না। তরুণদের শেকড়ে ফেরাতে হলে আমাদের এ গ্রামীণ উপাদানগুলো নগরে আরও বেশি করে তুলে ধরতে হবে।”

জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদের সভাপতি লায়লা হাসান বলেন, “এই বৃষ্টির মধ্যে এখনও অনুষ্ঠান চলছে, মানুষ অনুষ্ঠান দেখছে, এই থেকে প্রমাণিত হয় নবান্ন উৎসবের সঙ্গে আমাদের শেখরের টান রয়েছে।এ উৎসবে আমরা লোকজ সংস্কৃতি উপস্থাপনের পাশাপাশি এ অস্থির সময়ে বাঙালিকে আমরা সম্প্রীতির বন্ধনে বাঁধতে চাই। এ আয়োজন ১৯ বছর ধরে চলছে। আমি মনে করি বাঙ্গালির এ আয়োজন সার্থক হয়েছে।”

নবান্ন উৎসব উদ্বোধন করে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, “এই নবান্ন উৎসব একটি উদার, সর্বজনীন ও অসাম্প্রদায়িক উৎসব। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মানুষের এ উৎসব গণমানুষের উৎসব, খেটে খাওয়া মানুষের উৎসব। আশ্বিন মাসকে আমাদের এলাকায় বলা হত দারুণ আশ্বিন, এ মাসে অভাব অনটন লেগেই থাকত। গুটিকয়েক ধনাঢ্য পরিবার ছাড়া আর কারো ঘরে ধানই থাকত না। পরে আসত অগ্রহায়ণ। সবার ঘরে সোনালী আমন ধান। সে ধান সার্বজনীন।”

অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, “গণমুখী,মানবতাবাদী মানুষ হতে গেলে, একটি উদার-নৈতিক সমাজ গড়তে গেলে আমাদের গণমানুষের উৎসব নবান্নে সামিল হতেই হবে।”

অনুষ্ঠানটি সকাল ১০টায় শুরু হয় বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে নবান্ন বিষয়ক আর্ট ক্যাম্প চলে রাত অবধি। এতে  আর্ট ক্যাম্পে সমরজিৎ রায় চৌধুরী, আবদুশ শাহ, আবদুল মান্নান, রেজাউল নবী, কামাল পাশা চৌধুরী, মনিরুজ্জামান, জাহিদ মুস্তফা, অশোক কর্মকার, এফ আর ভূটান, শামসুল আলম আজাদ, নাসিম কুইনি, হিরন্ময় চন্দ, কিরিটি বিশ্বাসসহ বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীরা অংশ নেন।

বিকেল ৩টায় চারুকলার বকুলতলার মঞ্চে অনুষ্ঠান শুরু হয় ঢাক-ঢোলের মাধ্যমে। বিকেলের পর্বে চারুকলার বকুলতলায় মানিকগঞ্জের চানমিয়া ও তার দলের লাঠিখেলা, নড়াইলের পটগান, নেত্রকোনার দিলু বয়াতি ও তার দলের মহুয়ার পালা ছাড়াও সঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন করেন বুলবুল মহলানবীশ, আবদুল ওয়াদুদ, অনিমা মুক্তি গোমেজ, মহাদেব ঘোষ, নাসিম মাহীন ফেন্সি, মাহমুদুল হাসান, কল্পনা রাজবংমী, খগেন্দ্রনাথ সরকার, শান্তা সরকার, কাননবালা সরকারসহ নবীন ও বিশিষ্ট  শিল্পীরা। সম্মেলক গানে অংশ নেন  মুক্তধারা, ঢাকা স্বরকল্পন, তামান্না তিথি, রেজিনা ওয়য়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, আজিজুল বাশার প্রমুখ।