ঢাকা, শনিবার   ০৪ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২০ ১৪৩১

গুপ্তছড়া ঘাটে জেটি পুনঃনির্মাণের উদ্বোধন

প্রকাশিত : ১০:৫০ পিএম, ১৮ নভেম্বর ২০১৭ শনিবার

সন্দ্বীপের নৌ-যাতায়াতে দুর্ভোগ দীর্ঘদিনের সমস্যা। অবশেষে বহুল প্রতীক্ষার পর যাতায়াত সমস্যা লাঘবে সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ঘাটে ৪৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আর সি সি জেটি পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। আজ শনিবার ১৮ নভেম্বর  নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।এরপরে গুপ্তছড়া ঘাটে আওয়ামীলীগ আয়োজিত এক জনসভার আয়োজন করা হয়।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে নৌ পরিবহনমন্ত্রী বলেন-``অতি দ্রুত সন্দ্বীপের নৌ যাতায়াতের সকল সমস্যা নিরসন করা হবে। ডিসেম্বর মাসে ২টি সি ট্রাক দেয়া হবে এবং ভাড়া ১০০ টাকার মধ্যে রাখা হবে। আগামী জুনের মধ্যে সন্দ্বীপের মানুষের জন্য ৫০০ আসন বিশিষ্ট নতুন একটি আধুনিক জাহাজ এ রুটে চালু হবে।

এছাড়া অতি দ্রুত সদরঘাট টু বাংলা বাজার, বাংলা বাজার টু হাতিয়া নৌ রুট চালু করা হবে।স্পীড বোটের ভাড়া এখন থেকে ৩০০ টাকার পরিবর্তে ২০০ টাকা। নতুন জেটি হলে এই রুটে দুর্ভোগ কমবে বলে মনে করি। সন্দ্বীপের মানুষের যাতায়াত নিরাপদ করতে যা যা করা দরকার আমি করবো।``

সন্দ্বীপের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, দীর্ঘদিন এ জনপদে কাজ হয়নি।এখন থেকে নৌ রুটে আর আগের মতো সমস্যা থাকবে না। সাংসদ মিতার দাবিগুলি দ্রুত সমাধান করা হবে। জেটির কাজের মান যথাযতভাবে   নিশ্চিত করতে বুয়েট টিম ও ঠিকাদারকে নির্দেশ প্রদান করেন।সন্দ্বীপ চ্যানেলের বাউরিয়া এবং গাছুয়া ঘাট চালু করতে ড্রেজিং করার আশ্বাস দেন। এছাড়া সন্দ্বীপকে পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা বলেন- `স্বাধীনতার ৪৬ বছর পার হলেও আধুনিক হয়নি সন্দ্বীপের যাতায়াত ব্যবস্থা।সন্দ্বীপের নৌ যাতায়াত দীর্ঘদিনের  সমস্যাগুলি লাঘবে এই আর সি সি জেটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে বলে মনে করি।

সন্দ্বীপের নৌ রুটে যাত্রীদের কাছে রক্তচোষা ভাড়া আদায় করা হয় বলে এমপি অভিযোগ করেন। স্পীডবোট ভাড়া জটিলতা,ঘাটে অনিয়ম,জেলা পরিষদের উদাসীনতা, যাত্রী সেবার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাংসদ মিতা নৌ পরিবহনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।`` 

২০১২ সালে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ অংশে আলাদা দুটি জেটি নির্মাণ করা হলেও মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় জেটির একাংশ ভেঙে পড়ে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জাহাজ থেকে লালবোটে নেমে কোমর সমান কাদামাটি মাড়িয়ে উপকুলে উঠতে হয়। এছাড়া গত ২ এপ্রিল সন্ধ্যায় সি ট্রাক থেকে  থেকে  নামার  সময় লালবোট ডুবিতে ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটে।

জেটি পুনঃনির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।আগে বিআইডব্লিউটিএ মাটির ৬০ ফুট গভীরে ভিত্তি গড়ে জেটি নির্মাণ করেছিল।নতুন জেটির ভিত্তি নির্মিত হবে ১৫০ ফুট গভীরে।এবারকার জেটিতে জোয়ার-ভাটা উভয় ক্ষেত্রে যাতে যাত্রীরা ওঠানামার সুবিধা পায় সেটিতে নজর দিয়ে নকশা করেছে বুয়েটের একটি বিশেষজ্ঞ দল।এছাড়া জেটিতে ভাটার সময় ওঠানামারও সুবিধা ছিল না।

২০১২ সালে দুটি জেটি নির্মাণ করা হলেও ঢেউয়ের আঘাতে  কয়েক মাসের মধ্যেই কিছু অংশ ভেঙে যায়। এবার সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আগে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ টিম প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাদের পরামর্শে ভিত্তিতে নতুন জেটি নির্মাণ করা হবে।

বিআইডব্লিউটিএর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান জানান, নতুন জেটিটি হচ্ছে এল আকৃতির। ফলে এটির সঙ্গে সরাসরি নোঙর করতে পারবে জাহাজ কিংবা স্পিডবোট। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএমবিইএল অ্যান্ড এসএসআরআই যৌথ অংশীদারিত্বে জেটির নির্মাণ কাজ শেষ করবে। ১৮ মাসের চুক্তিতে জেটির মূল অংশের কাজ শেষ হবে ৪২ কোটি টাকায়। বাকি টাকা নদীতীর সংরক্ষণসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হবে।

জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ইসরাফিল আলম এমপি, এম এ লতিফ এমপি,জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এম এ সালাম, সচিব, আব্দুস সামাদ, কমডোর এম মোজাম্মেল হোসেন প্রমুখ।

বক্তব্য রাখেন- ছাত্র লীগ সভাপতি মাহফুজুর রহমান সুমন, যুব লীগ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, কৃষক লীগ সভাপতি কামরুল হাসান আলাল, আওয়ামীলীগ সভাপতি মাস্টার শাহজাহান বি এ ।এছাড়া উপস্থিত ছিলেন নানা শ্রেণী পেশার হাজারো মানুষ।