ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

বিশ্বব্যাপী চিন্তা-চেতনা তুলে ধরতে ঢাকা লিট ফেস্ট:শামসুজ্জামান

প্রকাশিত : ০৬:৩৩ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৭:১৫ পিএম, ১৯ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার

অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান একাধারে বিশিষ্ট ফোকলোরবিদ, গবেষক ও বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক। ১৯৪০ সালের ২৯ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। অধ্যাপনা দিয়ে তার কর্মজীবনের সূচনা ঘটে। তবে বিভিন্ন সময়ে বাংলা একাডেমির পরিচালক, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তার ফোকলোর বিষয়ক গবেষণা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির নানা বিষয়ে তার রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় একশত। তিনি একুশে পদকসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গনে আয়োজিত ‘সপ্তম ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৭’আসরে তার মুখোমুখি হয় একুশে টেলিভিশন অনলাইন। সাহিত্য উৎসব আয়োজনের প্রাসঙ্গিতাসহ নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে বিস্তারিত কথা হয়। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইন প্রতিবেদক রিজাউল করিম।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের সাহিত্যাঙ্গনের সমৃদ্ধিতে এ ধরণের আয়োজন কতটুকু অবদান রাখছে?

শামসুজ্জামান খান: বিদেশি সাহিত্যের অনুঘটকদের সঙ্গে নানা রকম ভাষা ও ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে আমাদের অনুবাদ সাহিত্য ক্রমশ বিশ্বমানের হচ্ছে। এরই মধ্যে মীর মোশাররফ হোসেনের `বিষাদ সিন্ধু`র অনুবাদ হয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাদের ওপর অনুবাদ আমরা করে ফেলেছি। ফকরুলের ওপর গুরুত্বপূর্ণ বই আমরা করেছি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের ওপর ইংরেজি ভাষায় বই করেছি। এ বইগুলো কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গুরুত্ব পাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ ধরণের আয়োজন বিশ্বব্যাপী আমাদের বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। পাশাপাশি আমাদের সাহিত্যধারাকে আরও গতিশীল করবে।

 একুশে টেলিভিশন অনলাইন: ভাব ও ভাষার আদান-প্রদান বা চিন্তা-চেতনার পরিচিতির কথা আপনি বলছেন, সেটা বাংলা একাডেমী অন্যভাবে নিতে পারতো। এ আয়োজন কেন?

শামসুজ্জামান খান: বর্তমানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের একটা বড় জায়গাতে দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি পৌঁছে গেছে। দেশের সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে আমাদের প্রচেষ্টার একটা সহায়ক প্রচেষ্টা `ঢাকা লিট ফেস্ট`। এত দিন ভেবেছিলাম আরও বড় আকারে করবো। সরকারের সহায়তাও থাকবে বড় ধরণের। কিন্তু খরচসহ বিভিন্ন কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

একবার একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক বলেন, ‘বাংলাদেশ মে বি ওয়ান অফ দি পুওরেস্ট কান্ট্রি ইন দি ওয়ার্ল্ড, বাট ইটস রিয়েল এডুকেশন অ্যান্ড রিয়েল সোসিয়্যাল সিচুয়েশন ইজ এক্সপানসার, স্পেশেয়ালি ইটস কালচারাল এক্সপানসার ওয়ান অফ দি রিসেস।’

স্বনামধন্য ওই সাহিত্যিকের কথাটি আমাদের মনে ধরেছে। সেখান থেকে আমরা চিন্তা করলাম আমাদের সাহিত্য ও রিচ কালচারকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরতে আর কী কী করা দরকার? এটার জন্য আমাদের কী কী ভাষার জ্ঞান থাকা দরকার? যে ভাষায় আমরা আমাদের বই প্রকাশ করতে পারবো, আমাদের চিন্তা–চেতনা তুলে ধরতে পারবো? ওই ভাবনার জায়গাতে কিন্তু `ঢাকা লিট ফেস্ট` বড় একটা সহায়ক হয়েছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : বরাবরই একটা অভিযোগ আছে যে, এ ফেস্টে সমাজের উঁচু শ্রেণিকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বা সাহিত্যের একটা শ্রেণিকরণ করা হয়, সে ব্যাপারে কী বলবেন?

শামসুজ্জামান খান : আমি বলবো, প্রথম দিকে আমাদেরও তাদের সঙ্গে চিন্তা-চেতনা ও পরিবেশনায় একটা দ্বিমত ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে ধাপে ধাপে তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়ে এনেছি। যার ফলে বঙ্গবন্ধুর ওপর একটা অনুষ্ঠানও কিন্তু তারা করতে শুরু করেছে। আমাদের কবি গান থেকে শুরু করে লোকজ ও সংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। কারণ আমাদের সংস্কৃতির মধ্যে কিন্তু দেশের মানুষের প্রাণ নিহিত। এক সময় মৈমনসিংহ গীতিকা বাঙালিকে বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছিল। এ উৎসবের মধ্য দিয়ে সেই জায়গাতে আমরা নতুন করে পৌঁছাতে পারবো। তারই পথ হিসেবে আমরা সাহিত্য উৎসবকে দেখছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : এবারের ফেস্টে ২০০ দেশি-বিদেশি কবি-সাহিত্যিক থাকবেন। যেখানে সেশন রাখা হয়েছে ৯০টি। অথচ ফেস্টের সময় রাখা হয়েছে তিন দিন। এতো বড় পরিসরের বিষয়ে কেন এতো কম সময়ের আয়োজন?

শামসুজ্জামান খান : এ সেশনগুলো গভীর কোনো আলোচনার জন্য সহায়ক নয়। যেমন আমি জার্মানির একটা বই মেলায় গেলাম। যেখানে সাড়ে চার হাজার অনুষ্ঠান, যা ভাবাই যায় না। এমন কম সময়ের আয়োজনে অনেকে বঞ্চিত হয়, সেটাও ঠিক। কিন্তু উপায় তো নেই। তিন দিনে সবকিছু যদি আমরা না করি, তো ১৫ দিন করার জন্য যে খরচ সেটা বহন করা কঠিন ব্যাপার। তাছাড়া বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিরা তিন দিন ধরে বাংলাদেশে এসে থাকবে না। আপাতত আমাকে বেছে নিতে হবে আমার সবচেয়ে পছন্দের কোন সেশনে আমি থাকবো।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

শামসুজ্জামান খান : আপনাকে ও একুশে টেলিভিশন পরিবারের সব সদস্যকে ধন্যবাদ ।

 

এসএইচ/