ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

‘চল পালাই’ দেখলে আমার প্রতি সবার ধারণা পাল্টে যাবে: শাহরিয়াজ

প্রকাশিত : ০৭:২৫ পিএম, ২২ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

ঢাকাই ছবির ব্যস্ততম নায়ক শাহরিয়াজ। ‘কি দারুণ দেখতে’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে পর্দায় তার অভিষেক ঘটে। বতর্মানে একের পর এক সিনেমা করে যাচ্ছেন। তার হাতে রয়েছে বেশ কিছু চলচ্চিত্র। পরিশ্রমী এই চিত্রনায়ক নিজেকে তৈরি করার জন্য নানান চরিত্রে অভিনয় করে যাচ্ছেন। আগামী ৮ ডিসেম্বর মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার অভিনীত একটি চলচ্চিত্র। খ্যাতিমান নির্মাতা দেবাশিষ বিশ্বাসের ‘চল পালাই’তে অভিনয় করেছেন শাহরিয়াজ। একুশে টিভি অনলাইনকে তিনি জানান সিনেমার পেছনের গল্প। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন আউয়াল চৌধুরী।    

‘চল পালাই’ সম্পর্কে কিছু বলুন?  

শাহরিয়াজ : শুরুতেই পরিচালক দেবাশিষ বিশ্বাসকে ধন্যবাদ জানাতে চাই আমাকে ‘চল পালাই’ সিনেমায় কাষ্ট করার জন্য। দেবাশিষ বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে আমি স্মরণ করছি তার পিতা দিলিপ বিশ্বাসকে। তিনি তারই সুযোগ্য উত্তরসুরী, সুযোগ্য সন্তান এবং সুযোগ্য ঢালিউডের একজন ডিরেক্টর। শুরুতে একটু বেশি ইন্ট্রোডাকশন দিচ্ছি তার কারন হলো, বতর্মানে আমাদের দেশে প্রপারলি খুব কমই সিনেমা তৈরি হচ্ছে। সেই দিক থেকে ‘চল পালাই’ ইজ এ ব্লাস্ট। এটা একটা প্রপার এন্টারটেইনমেন্ট সিনেমা। আমি এই ছবিটা করে খুব মজা পেয়েছি। আর এটা আমার দশম ছবি। সে কারনেও এটা আমার জন্য স্পেশাল। আমি খুবই খুশি। এই ছবিতে সবাই ভালো কাজ করেছে। আমি মনে করি এই ছবি দেখলে আমার প্রতিও সবার ধারনা পাল্টে যাবে। বলে বিশ্বাস করি। এর বেশি এখন আর বলছিনা। ছবি দেখেই বাকিটা জানা যাবে।

‘চল পালাই’ এর অভিজ্ঞতা শুনতে চাই?  

শাহরিয়াজ : আমরা ২০১৬ সালের শুরুর দিকে বান্দরবানে এ ছবির কাজ শুরু করি। চল পালাই করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হয়েছে। মজার বিষয় হলো আমি একেবারেই গাড়ী চালাতে জানিনা। আর সেই আমাকেই বলা হলো ট্রাক চালাতে হবে এবং সেটা নিয়ে পাহাড়ের ওপরে উঠতে হবে। কি ভয়ানক ব্যাপার! আসলে এটা আমার জন্য একটা বড় অ্যাডভেঞ্চার। আমি দুই থেকে তিন ঘন্টা প্র্যাকটিস করলাম। আসলে আমরা কাজের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজ করিনি। চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার। যে লোকটি গাড়ীই চালাতে পারে না, সে পাহাড়ের ওপরে ট্রাক চালিয়ে উঠেছে। এটা একটা বিশাল মজার অভিজ্ঞতা।   

শুনেছি বৃষ্টি আপনাদের কাজের সমস্যা করেছে?

শাহরিয়াজ : বান্দরবানে আমরা ১৬ দিন শুটিং করেছি। এর মধ্যে তিন দিন বৃষ্টির কারনে কোনো শুটিংই করতে পারিনি। পুরো ইউনিট শুধু পিকনিকই করেছি। এক পর্যায়ে আমি আর তমা হতাশ হয়ে যাই। তখন পরিচালককে বলি দাদা এভাবে কি বসে থাকা যায়। তখন তিনি আমাদেরকে ৭ থেকে ৮টি সিনেমার গল্প শুনালেন। এবং বললেন, শুধু তিন দিন না, সাত দিন, আট দিন, এগারো দিন এরকম বহু দিন বসে থাকতে হয়েছে। এরকম অনেক কাহিনী আছে। এখন তোরা যদি আমাকে সার্পোট করিস তাহলে এই তিন দিনও কাভার করা সম্ভব।   

তমার সঙ্গে আপনার কাজের রসায়নটা কেমন ছিল?   

শাহরিয়াজ : তমার সঙ্গে আমার কাজের রসায়ন খুবই ভালো। তার সঙ্গে এই ছবিসহ তিনটা মুভি করেছি। তম্মধ্যে প্রথম রিলিজ হচ্ছে ‘চল পালাই’। ওর সঙ্গে বোঝাপড়াটা বলতে গেলে দারুন। আমি এ পর্যন্ত যাদের সঙ্গে কাজ করেছি তাদের থেকে সে অনেক ভালো। আরেকটা বড় কথা হলো তমা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছে। সুতরাং ওর এবিলিটির জায়গা নিয়ে বলার কিছু নেই, এক কথায় আসাধারন। আর ও মানসিকভাবে খুবই ভালো। চল পালাইতে সেন্স অফ হিউম্যান এর জায়গাটা অনেক বেশি। অর্থাৎ উঁচু মানের কথাবার্তার একটা সম্মিলন আছে। রয়েছে হাসি আর থ্রিলিং। এসব জায়গায় তমা খুবই ভালো করেছে। এর বাহিরে শিপন ভাই’র কথাও বলবো। তার সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ।

একটি ছবিতে দুইজন হিরো থাকলে একটা পারস্পরিক দ্বন্ধ কাজ করে এ ক্ষেত্রে আপনাদের সম্পর্ক কেমন ছিল? 

শাহরিয়াজ : এক ছবিতে দুইজন হিরো থাকলে কখনো কখনো ঝামেলা তৈরি হয় কথাটা ঠিক। কে বড়, কে ছোট এ ধরনের একটা বিষয় মাথায় কাজ করে। কিন্তু শিপন ভাই‘র সঙ্গে এ ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। উল্টো আমরা বান্দরবানে যখন আউটডোর করি দেখা যায় সবাই আমার রুমে আসে আড্ডা দিতে। তমা আর শিপন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই তাদের প্রথম কফি পান ছিল শাহরিয়াজের রুমে। বলা যায় আমার রুমটা ছিল একটা ক্লাব ঘর। সবাই আমার রুমে এসে কফি খাবে। আসলে এটা খুবই মাজদার জার্নি ছিল। শিপন ভাই তিনি তার জায়গায় ভালো করেছে আর আমি কেমন করেছি সেটা দর্শকই বলবে। এবং তমাও অনেক ভালো করেছে।   

টিম সম্পর্কে কিছু বলুন?

শাহরিয়াজ : একজন ডিরেক্টরের সবচেয়ে বড় যোগ্যতা হচ্ছে তার টিমকে প্রপারলি হেন্ডেল করা। একটা গল্প বা শুটিংই সব কিছু না। শুটিংতো সিনেমার একটা অংশ মাত্র। তার আগে প্রয়োজন হয় প্রি- প্রোডাকশন, পোষ্ট প্রোডাকশন, অনেক কিছুই করতে হয়। শুধু শুটিং করে এনে ছেড়ে দিলেই কি সিনেমা হয়ে যাবে। না, এখানে প্রপার টিম কাস্টিংটা একটা ফেক্ট। এমনও হয়েছে আমরা বৃষ্টির কারনে শুটিং করতে পারছিনা, বসে আছি। শুধু পিকনিক করেছি। ইউনিটের ৬০জন সদস্য কাজ ছাড়া সময় পার করছে। এরপর যখন কাজ শুরু হলো তখন আমরা ছয়টার সময়ে মেকআপসহ কাজ শুরু করেছি। একটানা রাত পযর্ন্ত শুটিং করেছি। সময়ের কোনো হিসাব নাই। কাজ আর কাজ। সো ইউনিটের এ ধরনের একটা বিষয়ও আমার দেখার সুযোগ হয়েছে। ‘চল পালাই’ করতে গিয়ে বলা যায় একটা বিশাল অভিজ্ঞতা হয়েছে।  

….চল পালাই এর বেশ প্রশংসা করছেন, কেন?

শাহরিয়াজ : সিনেমার প্রশংসা করলেই যে বড় দাম্ভিকতা হবে তা কিন্তু নয়। চল পালাই করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হয়েছে আমি সেটাই শেয়ার করছি। এ ধরনের একটা অজিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমি গিয়েছি। যে অভিজ্ঞতাটা আমাকে আরো অনেক বেশি দায়িত্ববান করেছে। বর্তমান কাজের ক্ষেত্রে এটা আমাকে আরো বেশি শানিত করছে, গুছিয়ে দিচ্ছে। শেষ কথা বলতে গেলে আমরা ডিরেক্টরের আর্টিস্ট। আমি অমিতাভকে, শাকিব খানকেও বলতে শুনেছি এ ধরনের কথা। সে অনুপ্রেরণাটা আমি ধারন করি। দিনশেষে একজন আর্টিস্ট যদি ডিরেক্টরের না হয় তাহলে হবে না।    

শুটিংয়ে কোনো ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন?

শাহরিয়াজ : শুটিংয়ে আমার বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। তবে হঠাৎ করে একটা সমস্যা আমার সামনে এসে হাজির হয়। আমার প্রচণ্ড দাঁতের ব্যাথা উঠে। আর ওখানকার আবহাওয়াটা কখনো ঠাণ্ডা কখনো গরম। সো একদিকে আবহাওয়া খারাপ, গায়ে ব্যাথা, পায়ে ব্যাথা এসব থেকে বেশি ব্যাথা ছিল আমার দাঁতে। দাঁতের ব্যাথা যে কত বড় যন্ত্রনার সেটা বলে বুঝাতে পারবোনা। এক সঙ্গে ৭ থেকে ৮টা ব্যাথার ঔষুধ খেয়ে আমাকে শট নিতে হয়েছে। এবং সেখানে দেবাশিষদার আম্মা আমার জন্য অনেক করেছেন। তিনি আমার ঔষুধের ব্যাগ নিয়ে পাশে পাশে থাকতেন। আমার জন্য গরম পানি করে নিয়ে আসতেন। আমার অবস্থাটা  এতটা ভয়ানক খারাপ ছিল যে, সেখানে ভালো ট্রিটমেন্ট পাওয়ারও কোনো  সুযোগ ছিল না। বলতে পারি ‘চল পালাই’ আমাকে ভিষণ দাঁতের পেইন দিয়েছে।

দর্শক এ সিনেমা কেন দেখবে?

শাহরিয়াজ : এটা একটা থ্রিলার ধর্মী গল্প। রয়েছে টানটান উত্তেজনা। এ সিনেমার প্রতিটি বাঁকেই টুইষ্ট আছে। প্রতিটি বাক্যেই একটা মোড় আছে। মূলত গল্পটা হলো ভারতের বিখ্যাত সাহিত্যিক রজনীশ ঠাকুরের গল্পের ছায়া অবলম্বনে। এই সিনেমার হিরোই হচ্ছে গল্প। আবার বলছি, চল পালাই এর হিরো হচ্ছে চল পালাই এর গল্প। আমাদের দেশে দর্শক এখন গল্প দেখতে চায়। গল্পে শিপন-তমা তারা একে অপরকে ভালবাসে। পরিবার তাদের ভালোবাসা মেনে নিবে না। তাই তারা বাড়ী থেকে পালালো। শুরু হলো তাদের পালানোর জার্নি।  এই পালানোর শুরু থেকে আরেকজন তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। সে যুক্ত হওয়ার পর তাদের জার্নিতে অনেক কিছু ঘটতে থাকে। রাস্তায় যা যা ঘটে সেটাই হচ্ছে ‘চল পালাই’ এর গল্প।  

 

/ এআর /