‘গণতন্ত্র মানে শুধু ব্যালট বাক্সে ভোট দেওয়া না’
প্রকাশিত : ০৫:৩৮ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৬:৪০ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৭ মঙ্গলবার

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, গণতন্ত্র মানে শুধু ব্যালট বাক্সে ভোট দেওয়া না। নির্বাচনের আগে যা হয়, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পর যা হয় সবকিছুই গণতন্ত্রের অংশ। এমনকি এই ভোটের মাধ্যেমে যা ফলাফল আসবে তা মেনে নেওয়ার মানুষিকতা তৈরি করতে হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল লেকশোরে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, শক্তিশালী গণন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সবার মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। সবাই যাতে চাপমুক্ত হয়ে স্বাধীনতাভাবে ভোট প্রদানে করতে পারে সে সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র মানে শুধু ব্যালট বাক্সে ভোট দেওয়া না। নির্বাচনের আগে যা হয়, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পর যা হয় সবকিছুই গণতন্ত্রের অংশ। এমনকি এই ভোটের মাধ্যেমে যা ফলাফল আসবে তা মেনে নেওয়া মন মানুষিকতা তৈরি করতে হবে।
ওই সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট আরও বলেন, একটা কার্যকর গণতন্ত্রে সব রাজনৈতিক দলের মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ থাকতে হবে। নাগরিকদের ভোটার হওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। কোন ধরনের বাধা বা চাপ মুক্ত থেকে ভোট প্রদানের সুযোগ থাকবে হবে। একটি শক্তিশালী গণন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হলে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।
বার্নিকাট বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে দৃঢ় করতে নারীদের নিরাপদ অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখনও বেশ কয়েকজন নারী নেত্রী থাকার পরও রাজনৈতিক দলে ও নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ-প্রক্রিয়া পিছিয়ে রয়েছে।
গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা বলেন, নারীরা একটানা ৩১ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। ১৯৮৬ সালে জাতীয় সংসদে প্রথবারের মতো নারী হিসেবে বিরোধী দলের নেতার ভূমিকা রাখেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ১৯৯১ সালে দেশে প্রথমবারের মত নারী প্রধানমন্ত্রী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর থেকে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েই চলছে। বর্তমানে সংসদে স্পিকার, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলের নেতা সবাই নারী। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে সব স্থানীয় সরকারেও নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। কাজেই রাজনীতিতে নারীদের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশের থেকে আমরা এগিয়ে।
তিনি বলেন, দেশে একটানা ৩১ বছর ধরে নারীরা ক্ষমতায় রয়েছে। তাই আজ প্রমাণ হয়েছে নারীরা যেমন ঘরও গোছাতে পারেন, তেমনি রাজনীতিও গোছাতে পারেন। প্রশাসনে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরে সিইসি বলেন, দেশে বর্তমানে ১০ জন নারী সচিব রয়েছে। এছাড়া এক জন বিভাগীয় কমিশনার, ছয় জেলা প্রশাসক, ১৬ জন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নারীরা কর্মরত আছেন।
আলোচনা অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, বিশ্বে সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নের ঢেউ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বাংলাদেশে প্রথম নারী সেনাবাহিনী অফিসার, পুলিশ অফিসার, জেলা প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছেন। আমি গর্বের সঙ্গে বলছি ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা ভালো কাজ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান নারীর সংরক্ষিত আসনের বিরোধিতা করে বলেন, নারীদের যদি আমরা মেইনস্ট্রিমে না আনতে পারি তাহলে সংরক্ষিত আসন দিয়ে তাদের ক্ষমতায়নে কোনো কাজই হবে না। তিনি বলেন, আমরা যদি গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি তাহলে অন্যকে কথা বলতে দিতে হবে। গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের কথা চলবে তবে সংখ্যালঘিষ্ঠের মতামতকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হবে।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন,বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে দুর্বল দিক হলো ঘৃণার রাজনীতি। অনেক রাজনৈতিক দলের মিলন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। রাজনীতি যে একটি ব্রত তা আর অনেকেই মানেন না। বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনীতিকে এখন প্রটেকশনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সরকারের কাজের গঠনমূলক সমালোচনা হওয়া উচিত।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা রশীদ চৌধুরী বলেন, নারীর মূল্যায়ন অনেক সময় করা হয় না। কিন্তু হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তার সময়ে নারীর ক্ষমতায়ন শুরু করেন। তার ফল আজ আমরা পাচ্ছি।
বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন।
এসএইচ/