রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির আহ্বান
প্রকাশিত : ০৭:০৯ পিএম, ২৯ নভেম্বর ২০১৭ বুধবার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংসতা ও গণহত্যা বন্ধ করে তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে মিয়ানমার সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক মাধ্যমে চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্ট নাগরিকরা। আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যায়ের সিনেট ভবনে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্স ইউনিট-রামরু আয়োজিত ‘Ending the Slow Burning Genocide of Rohingyas by Myanmar’ শীর্ষক এক সম্মেলনে বক্তারা এ আহ্বান জানান।
সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মানবতার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। খাবার-বাসস্থানেরও ব্যবস্থা করছে। তবে রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন থাকলে আমাদের দেশে নতুন সংকট তৈরি হবে। এ কারণে আন্তর্জাতিক ও কুটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে তাদের ফিরিয়ে নিতে বাধ্য করতে হবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি আন্তার্জাতিক চাপের মাধ্যেমে এর সুষ্ঠু সমাধ্যান সম্ভব।
তিনি বলেন, গত তিন মাস ধরে চট্টগ্রাম সীমান্ত জুড়ে উত্তর আরাকান বা রাখাইন রাজ্যের নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের পূর্ণাঙ্গ গণহত্যা অভিযান চালানো হয়েছে। বাংলাদেশ সমাজ এবং সরকার রোহিঙ্গা বাঁচাতে অসাধারণ সহানুভূতি দেখিয়েছে, আনুমানিক ৭ লাখ রোহিঙ্গা খাবার ও আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।
ঢাবির অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, পুঁজিবাদি স্বার্থের কারণে রোহিঙ্গার উপরে এমন গণহত্যা অভিযান চালিয়েছে মিয়ানমার। আর সাথে একমত প্রকাশ করছে চীন ও রাশিয়া। চীন ও রাশিয়া নিজেদের সুবিধা নিতে এমন কাজ করছে। চীন ও রাশিয়ার মিয়ানমারে অনেক বিনিয়োগ আছে।
মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ মিলিশিয়া মিলে রোহিঙ্গাদের উপর গণহত্যা চালিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেদেশেরই মানবাধিকার কর্মী মং জার্নি। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি । রোহিঙ্গা সংকট অবসানে আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে নিজের মতামত তুলে ধরেন তিনি। এসময় তিনি প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় ও খাদ্য দেওয়ায় বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
তিনি আরও বলেন, গত এক দশক ধরে রোহিঙ্গা জনগণের উপর অত্যাচার হচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমি রোহিঙ্গাদের কষ্ট বুঝতে পারছি। সেইসঙ্গে অনুমান করতে পারছি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। মিয়ানমার সরকারকে নিন্দা জানাতে ও তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে আমাদের ঐক্যমত্যে পৌঁছতে হবে। আমি মিয়ানমারকে অবিলম্বে তাদের জনগণকে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। এসময় রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো কয়েক যুগের রাষ্ট্রীয় নির্যাতন বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের পাশাপাশি তুলে ধরছেন আইনি ব্যাখ্যাও। বিশ্বে সব গণহত্যাকারীদের বিচারে জনমত গড়ে তোলারও তাগিদ আসে এ সম্মেলন থেকে।
অনুষ্ঠানে রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার প্রফেসর ড. তাশনিম সিদ্দিক, সমন্বয়ক প্রফেসর সি আর আবরারসহ বিভিন্ন দেশের আইনবিদ, ইতিহাসবিদ, সুশীল সমাজ ও মিয়ানমারের মানবাধিকার কর্মীরা অংশ নেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ মিলিশিয়াদের গণহত্যার মুখে এখন পর্যন্ত প্রায় সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা নতুন করে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। অব্যাহত এই গণহত্যায় কয়েক হাজার রোহিঙ্গা নিহত হয়েছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা নারী গণধর্ষণের শিকার হয়েছে।
/এমআর / এআর