ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জাতীয় বীর উপাধি’ খেতাব দেওয়ার দাবি

প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ১ ডিসেম্বর ২০১৭ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৩৪ পিএম, ৩ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার

১ ডিসেম্বরকে ‘মক্তিযোদ্ধা দিবস’ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ‘জাতীয় বীর উপাধি’তে ভূষিত করার দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার এবং মুক্তিযোদ্ধারা।

শুক্রবার সকালে রাজধানীর বুদ্ধিজীবী শহীদ মিনারে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ। একই সাথে যুদ্ধাপরাধীদের দেশের রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ, রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান এবং স্থাপনায় প্রবেশাধিকার না দেওয়াসহ ২৩টি দাবি উত্থাপন করা হয়। ‘মুক্তিযোদ্ধাদের দাবি বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’র পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়।

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভের পর বিএনপি-জামায়ত জোট সরকার গঠন করে। তখন জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কিছু নেতা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী হন। বর্তমানে তাদের অনেকেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় জামায়াত নেতাদের এমন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসাকে মেনে নিতে পারেনি মুক্তিযোদ্ধা সমাজ। তখন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উদ্যোগে গঠিত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধা দিবস উদযাপন জাতীয় কমিট। ২০০৪ সালে আয়োজিত এক মহা সম্মেলনের পর থেকে ১ ডিসেম্বরকে ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছে সংগঠনটি।

মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের উদ্যোগে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) আয়োজিত আলোচনা সভায় সংঠনের পক্ষ থেকে ২৩টি সুনির্দিষ্ট দাবি জানানো হয়। লিখিত আকারে দাবিগুলো পাঠ করেন সংগঠনের যুগ্ম সমাপদক এডভোকেট হাবীবুর রহমান সৈকত।

মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় বীর উপাধি দেওয়া, ১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি রোধ করা, বিশেষ তহবিল গঠন করে মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুর পর তাদের পরিবারকে এককালীন ১০লক্ষ টাকা করে প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের ২০লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদ মুক্ত ঋণ প্রদান দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।

পাশাপাশি বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে পাকিস্তানের অযাচিত হস্তক্ষেপ রোধ এবং বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা টাকা ফেরত আনার দাবিও জানিয়েছেন তারা।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দিয়ে আর কিছু অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো মানেই তাদের যথাযথ সম্মান দেওয়া নয়। তাদের সম্মানে প্রকৃত অর্থে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

দেশের বিরুদ্ধে এখনও ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা স্বাধীন হয়েছি মানে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে গিয়েছে তা কিন্তু নয়। আগেও হয়েছে, এখনও হচ্ছে। স্বাধীনতার দলিল স্বাক্ষরের সময়ও পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্র করে আসছিল। পাক বাহিনীর জেনারেল নিয়াজী স্বাধীনতার দলিলে স্বাক্ষর দেবার সময়ও তার পুরো নাম লেখেনি। আমি তখন ভারতের জেনারেল আরোরার নজরে বিষয়টি আনি। তখন জেনারেল নিয়াজী তার পূর্ণ নাম লিখে স্বাক্ষর করেন”।

এখনও ১ ডিসেম্বর ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে সাবেক এ সেনাপ্রধান আরও বলেন, “আজ তের বছর ধরে আমরা এ নিয়ে সংগ্রাম করছি। এখনও ‘মুক্তিযোদ্ধা দিবসের স্বীকৃতি পেলাম না। এখনও এ নিয়ে রাজনীতিবীদদের সাথে দেন দরবার করা লাগে। এখন এটা সামাজিক দাবিতে পরিণত হয়েছে।”

বিশেষ আলোচকের বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সহ-সভাপতি কর্নেল (অবঃ) আবু ওসমান চৌধুরী বলেন, “আমাদের দেশে রাজাকার এবং তাদের বীজ এখনও রয়ে গেছে। আমাদের দেশে রাজকারেরা ক্ষমতায় বসেছে। এ মাটির সন্তানেরাই এ মাটির বিরোধিতা করেছে। শাহ আজিজুর রহমানের কথা আমরা এখনও ভুলি নাই। আমাদের দাবি যেসব রাজাকার, আলবদর আর তাদের দোসররা আমাদের দেশের ক্ষমতায় বসেছেন তাদের নাম সরকারি গেজেট থেকে মুছে ফেলতে হবে।”

আলোচনা সভা শেষে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে এবং মুক্তিযোদ্ধা দিবস বাস্তবায়নে কাজ করে যাবার লক্ষ্যে শপথ পাঠ করান কে. এম. শফিউল্লাহ। এরপর শহীদ মিনারে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিতে পৃথক পৃথকভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাসদ।

 

এসএইচএস/টিকে