ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

অবশেষে সান্ত্বনা পেয়েছেন ক্যাথরিন মাসুদ

প্রকাশিত : ১০:২৪ এএম, ৪ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার

দীর্ঘ পাচঁ বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে সান্ত্বনা পেয়েছেন প্রয়াত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ। রায়ের পর ক্যাথরিন মাসুদ বলেছেন, আমি তারেককে তো আর পাব না। তবে আজকে সান্ত্বনা পাচ্ছি আমার সাত বছরের ছেলের জন্য, যে তার বাবার ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলো। সান্ত্বনা পাচ্ছি তারেকের মায়ের জন্য, যিনি বড় ছেলেকে হারিয়েছেন এবং সান্ত্বনা লাগছে ওইসব হাজারো মানুষের জন্য, যারা রোজ তাদের কাছের মানুষকে হারাচ্ছেন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায়।

সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক মাসুদের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ক্ষতিপূরণ মামলায় ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রোববার এমন মন্তব্য করেন ক্যাথরিন মাসুদ।

এই রায়ের মধ্য দিয়ে আইনগতভাবে স্বীকৃত হচ্ছে যে, এই তথাকথিত দুর্ঘটনা আসলে কোনো দুর্ঘটনা নয়। এই দুর্ঘটনাগুলোতে ড্রাইভারদের দায় আছে, কোম্পানির দায় আছে, বাস কোম্পানির দায় আছে, এমনকি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিরও দায় আছে।

এ আইনে প্রথম বারের মতো প্রতিকার পেয়েছেন উল্লেখ করে ক্যাথরিন মাসুদ বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো এ আইনের অধীনে প্রতিকার চেয়েছি। আশা করছি এখন থেকে নিয়মিতভাবে অনেকে এ ধরনের ক্ষতিপূরণ পাবে।

রায়ের পরে ব্যারিস্টার সারাহ হোসেন বলেন, ক্ষতিপূরণ দাবি করে পাচঁ বছর আগে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ, ছেলে নিশাদ মাসুদ, তারেক মাসুদের মা নুরুন্নাহার বেগম মামলা করেছিল। আজকে মহামান্য হাইকোর্ট থেকে এ রায় পেয়েছি। রায়ে মর্মান্তিক এ মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদেরকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৫২ টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে গাড়ির চালককে ৩০ লাখ, ইন্সুরেন্স কোম্পানিকে ৮০ হাজার টাকা বাদ বাকি টাকা গাড়ির মালিকদের দিতে হবে।

তিনি বলেন, আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, ক্ষতিপূরনের দাবি সকলের জন্য থাকা উচিত। এর মাধ্যমে অন্যরাও ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারবেন। তবে আদালত এটাও বলেছেন, স্নেহ-ভালবাসা থেকে কেউ যদি বঞ্চিত হয়, তাহলে সবার জন্য একই মাপকাঠিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করার অধিকার থাকবে। রায়ে আদালত গাড়ির চালকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, গাড়ির চালকদেরও ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিপূরণের দায় নিতে হবে। তা না হলে তারা সতর্ক হবেন না।

রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স কোম্পানির পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মো. মনির বলেন, এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পরে বিশ্লেষণ করে পরবর্তী আইনি (আপিলের বিষয়ে) পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার জোকা এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মিশুক মনিরসহ মাইক্রোবাসের পাঁচ আরোহী নিহত হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে।

২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জ জেলা জজ আদালতে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাস মালিক, চালক এবং ইন্সুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ চেয়ে পৃথক দুটি মামলা করেন।

একে//এআর