ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

শাকিব-অপুর বিচ্ছেদের নেপথ্যে

প্রকাশিত : ০৫:২৬ পিএম, ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ১১:২৬ এএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার

ঢালিউডের সুপারস্টার শাকিব খান। তার সন্তানের মা চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। দেশীয় শোবিজ অঙ্গনে সময়ের আলোচিত দুই তারকা এখন তারা। আলোচিত এই তারকা জুটির বিচ্ছেদ এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। কিন্তু কি কারণে ঢাকাই সিনেমার সফল এই জুটির বিচ্ছেদ ঘটতে যাচ্ছে তা অনেকটা অন্ধকারেই রয়ে গেছে। যদিও গণমাধ্যম ও মিডিয়া সমালোচকরা বিচ্ছেদের বিভিন্ন কারণ চিহ্নিত করেছেন। তবে সবকিছুর মধ্যে একটি কারণ ঘুরে ফিরে সবার সামনে এসে উপস্থিত হচ্ছে। আর সেই কারণের নেপথ্যে রয়েছে একটি নাম। যদিও তারকা জুটির কেউই এই নামটিকে বিচ্ছেদের কারণ হিসেবে মন্তব্য করেননি। তবে সব অভিযোগ ও ক্ষোভের সূত্র ধরে এগিয়ে গেলে অন্ধকারের সেই ভুতটিই সামনে এসে উপস্থিত হয়।

২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল। এদিন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে হয়। ওই সময় বিয়ের ব্যাপারটি কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে রাখা হয়। দুজনার ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা করেই তা করা হয়। গেপনেই ঘটে যায় অনেক কিছু। পর্দার প্রেম বাস্তবে রূপ নেয়। প্রেম থেকে কাছে আসা। এরপর বিয়ে করতে বাধ্য হওয়া। অনেকটা বাধ্য হয়েই অপুকে বিয়ে করতে হয় শাকিবকে। কারণ সম্পর্ক বিয়েতে না গড়ালেও দুজনের গভীরতা অনেক দূরে পৌছে গেছে তখন। তাই অপুর চাপে বাধ্য হয়ে বিয়ে করতে হয় শাকিবকে। তবে তা দুজনের সম্মতিতে মধুর পরিণতিতে একটি সুন্দর সমাধান হিসেবেই দেখা যায়। ওই সময় তারা দুজনই শুটিং অব্যাহত রাখেন। সেই সময় কোন ঝামেলার কথা শোনা যায়নি দুই তারকার সম্পর্কের মধ্যে।

বিয়ের পর অনেক বছর গেপন থাকে দুজনার সম্পর্কের কথা। এরই মধ্যে তিনবার গর্ভধারণ করেন অপু। তিনবারই গর্ভপাত ঘটাতে হয় শাকিবের নির্দেশে। চতুর্থবার যখন জয় পেটে আসে তখন আর সম্ভব ছিলো না। তাই সন্তান জন্মলাভের সিদ্ধান্ত নিতে হয় অপুকে। তবে শাকিব এ সন্তানটিকেও চাননি। এসব নিয়ে শুরু হয় দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য। সেই থেকে শুরু। দীর্ঘ সময় গোপনিয়তার পর সন্তানসম্ভবা অপু বাধ্য হয়ে অভিনয় থেকে দূরে সরে যান। কিন্তু শাকিব চালিয়ে যান নতুন নতুন সিনেমার কাজ। নতুন নতুন নায়িকাদের সঙ্গে জুটি বাধেন শাকিব। কিন্তু অপু কখনই চাননি তার বাইরে শাকিব কারও সঙ্গে জুটি প্রতিষ্ঠিত করুক। কারণ সে সন্তান জন্মনেওয়ার পর আবারও মিডিয়াতে কাজ শুরু করবেন। এমন চুক্তিই হয়েছিলো শাকিবের সঙ্গে। সন্তান জন্মনেওয়া নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝামেলা চললেও তখন সবকিছুই গোপন রাখা হয়। কারণ সব কিছু সামলে আবারও অপু-শাকিব জুটি হয়ে ফিরবেন এমনটাই আশা। তাই ওই সময় কোনো নায়িকাই শাকিবের সঙ্গে একটি বা দুটির বেশি সিনেমাতে অভিনয় করতে পারেননি। এরই মাঝে চলে আসে ঢালিউডে নতুন মুখ শবনম বুবলী। শুরুতে তেমন কোন ঝামেলা করেননি অপু। কিন্তু শাকিব-বুবলীর নতুন জুটি পর্দায় আসতেই চারিদিকে গুঞ্জন ওঠে। যখনই বুবলীর সঙ্গে দ্বিতীয়বার শাকিব সিনেমাতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন, তখনই শাকিবের কাছে স্ত্রীর মর্যাদা চাইলেন অপু। সন্তানের স্বীকৃতি চাইলেন তিনি।

১০ এপ্রিল বিকালে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে ছয় মাস বয়সের ছেলে আব্রামকে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হন অপু। সেদিন অপু বলেন, ‘আমি শাকিবের স্ত্রী, আমাদের ছেলে আছে।’ আট বছর আগের সে বিয়ের খবর জনসমক্ষে আসার পর দুজনের সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি হয়। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছে যে, শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস নিজেদের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ করে দেন। কিন্তু মিডিয়া ও সিনিয়রদের চাপে শাকিব কিছুটা ঠান্ডা হন। সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে অল্প সময়ের জন্য মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হন শাকিব। তবে সেটা লোক দেখানো। পরিস্থিতি সামাল দিতেই শাকিবের এই অভিনয় এমনটাই অভিযোগ চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের।

ঠিক ওই সময় শবনম বুবলীর সঙ্গে শাকিবের ঘরোয়া পরিবেশে একটি ছবি প্রকাশ পায়। ছবিটিতে ‘ফ্যামিলি টাইম’ ক্যাপশন লিখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেন বুবলী। এরপরই অপু বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে শাকিব খানের। ছবিটি প্রকাশের পর পরই গণমাধ্যমে দীর্ঘদিন গোপনে থাকা বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি খোলাসা করেন অপু। ওই সময় ইঙ্গিতপূর্ণ স্ট্যাটাসে বুবলী ও অপুর ফেসবুক গরম হয়ে ওঠে। যদিও সরাসরি কেউ কাউকে নিয়ে কিছু বলেননি। তবে হঠাৎ করে শাকিবের এই পরিবর্তন গুঞ্জনের সূত্রপাত ঘটায়। এরপর হাফ ডজন সিনেমায় শাকিব-বুবলী অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন।

অপরদিকে অপু আবারও ফিরতে চাইছেন চলচ্চিত্রে। কিন্তু শাকিব চাইছেন না অপু ফিরে আসুক। অপু সিদ্ধান্ত নিলেন যেহেতু শাকিব তার সঙ্গে কোনপ্রকার যোগাযোগ রাখছেন না তাই অন্য হিরোদের সঙ্গে কাজ করবেন। সেই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি কিছু নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন অপু। এরপরই শুরু হয় শাকিবের উত্তেজনা। কোনভাবেই অপুর এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। সন্তানকে রেখে অপুর এই মিডিয়ামুখি হওয়াকে শাকিব সহ্য করতে পারেননি। সম্প্রতি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অপুর উপস্থিত, টিভিতে দাম্পত্য জীবন নিয়ে বক্তব্য, চলচ্চিত্রে সরব হওয়া, সন্তানকে রেখে কলকাতায় যাওয়া সহ বেশ কিছু কারণ শাকিবকে আঘাত করে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে অপুর সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।

এরই মধ্যে হঠাৎ করেই অপু বিশ্বাসের বয়ফ্রেন্ডের প্রসঙ্গে টেনে শাকিব বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠায় অপুর বাড়িতে। কিন্তু এই বিচ্ছেদ চাইছেন না অপু। কারণ তার বক্তব্য সে সংসার করতে চায়। সন্তান-স্বামীকে নিয়ে সুখের ঘর রচনা করতে চায়। সম্পর্ক ঠিক রাখতে এবং সমঝোতার পথ খুঁজতে অপু এখনও মিডিয়ার সামনে শাকিবের বিপরিতে তেমন কোন অভিযোগ আনেননি। এখন দেখা যাক সামনে কি হয় এই তারকা দম্পতিদের জীবনে।

 

এসএ/