ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে রংপুরে

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ০৩:৫৯ পিএম, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭ সোমবার | আপডেট: ০৮:১০ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ বুধবার

রংপুরে বাড়ছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ভিড়। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণ পিপাসুরা আসেন। সুপ্রাচীনকাল থেকেই উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী জনপদ রংপুরের রয়েছে গৌরবময় ও বৈচিত্র পূর্ণইতিহাস। রংপুরের মধ্যদিয়ে বয়ে চলেছে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ঘাগট,যমুনা, ধরলা প্রভৃতি নদ-নদী। রংপুর জেলায় ভ্রমণের জন্য উল্লেখযোগ্য স্থান ভিন্নজগৎ, হাতীবান্ধা মাজারশরীফ, তাজহাট জমিদারবাড়ি, কেরামতিয়া মসজিদ  ওমাজার, চিকলির বিল, টাউনহল, শ্বাশতবাংলা (মুক্তিযুদ্ধজাদুঘর)  ,রংপুরচিড়িয়াখানা ,মিঠাপুকুর তিনকাতারের মসজিদ, ইটাকুমারী জমিদারবাড়ি, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ,দেওয়ানবাড়ির জমিদারবাড়ি, বেগমরোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র, ঝাড়বিশলা (কবিহেয়াতমামুদেরসমাধি) , আনন্দনগর, প্রভৃতি।

হাতীবান্ধা মাজার শরীফ

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন, বাস, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, রিকশা, অটো রিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে করে প্রচুর মানুষ বেড়াতে আসেন। মাজারশরীফটিতে বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও বিভিন্ন ধরনের মানত করতে সারাদেশ থেকেমানুষ আসে। সবচেয়ে বেশিভীড় দেখা যায় শুক্রবারে । মাজারে রয়েছে অনেক বড় একটি পুকুর।

তাজহাট জমিদারবাড়ি

তাজহাট জমিদার বাড়িতে রয়েছে বিশাল আকারের চারটি পুকুর। প্রধান প্রাসাদটির ২য় তলায় ওঠা- নামার জন্য গ্যালারির মতো একটি বিরাট সিঁড়ি রয়েছে। জমিদারবাড়ির দ্বিতীয়তলায় উঠানামা করার জন্যে তিনটি অভিগমন পথ রয়েছে । তিনটি অভিগমন পথের মধ্যে মাঝখানটি তুলনামূলকভাবে প্রশস্ত ।অভিগমন পথের ধাপ গুলো সাদা ও ছাই রংয়ের পাথর দ্বারা মোড়ানো । ছাদনির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বড় বড় লোহার বীম ও লোহার ফালি। কক্ষের দরজাগুলি ও বিশালাকার ।জমিদারবাড়ির মধ্যভাগে প্রবেশপথ ও বর্হিগমন পথ রয়েছে । প্রাসাদের দ্বিতীয় তলায় উঠানামার জন্য লৌহনির্মিত নকশাকরা কাঠেরসিঁড়ি ও রয়েছে, সিঁড়ির রেলিং গুলি ও লোহার নকশা করা – যা দেখতে ফুল গাছের মতো। সিঁড়িটির ভূমি থেকে ভবনের ছাদ পর্যন্ত সাদা-কালো পাথরে মোড়ানো।

কেরামতিয়া মসজিদ ও মাজার

মসজিদটিতে রয়েছে তিনটি গোলাকার সুউচ্চ গম্বুজ । মসজিদটির প্রতিটি কোণে অষ্টভূজাকৃতি স্তম্ভ রয়েছে, যার শীর্ষদেশে শোভা পাচ্ছে কিউপলা ।মসজিদের দেয়ালে ও মসজিদের ছাদের কিণারায় মারলন অলংকরণ দেখাযায়।

চিকলিরবিল এবং চিকলী পার্ক

রংপুর শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে চিকলিরবিল । বিভিন্নরকমের পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে চিকলিরবিল। চিকলীবিল ঘেষে গড়ে উঠেছে চিকলী পার্ক, সেখানে রয়েছে সব বয়সের মানুষের বিনোদনের ব্যাবস্থা।

টাউনহল

রংপুর টাউনহল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র, সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধিচর্চারপ্রাণ কেন্দ্র, বহুসামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কৃতিক কর্ম কান্ডের সাক্ষী। শুধু চিত্ত বিনোদন কিংবা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূতিকাগার নয় ; বেদনা ও কষ্টের স্মৃতিধারণ করে আজ ও দাঁড়িয়ে আছে রংপুর টাউন হল । মুক্তিযুদ্ধের সময় এই টাউন হলকে পাকহানাদার বাহিনী `নারীনির্যাতন` কেন্দ্র বানিয়েছিল।

 শাশ্বত বাংলা (মুক্তিযুদ্ধজাদুঘর)

দেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত মূল্যবান নিদর্শন ও স্মারকচিহ্ন সমূহ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য বিভিন্নস্থানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে । তারই ধারাবাহিকতায় রংপুরে ও গড়েতোলা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর "শাশ্বত বাংলা"। জাদুঘরটিতে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত অস্ত্র,  মানচিত্র ,আলোকচিত্র,  সেসময় প্রকাশিত বিভিন্ন ধরনের পোস্টার ,পত্র-পত্রিকা, পুস্তক ও অন্যান্য দস্তাবেজ রয়েছে।

রংপুর চিড়িয়াখানা

রংপুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে বিনোদন উদ্যান, বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু ও পশু পাখি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সিংহ  ,রয়েল বেঙ্গল টাইগার ,চিতাবাঘ , জলহস্তী,  ভালুক, বানর, বেবুন, হায়েনা, হরিণ, ময়না ,টিয়া ,ঈগল, শকুন, সারস , বক, ঘড়িয়াল, অজগর সাপ প্রভৃতি । এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন বনজ, ফলজ এবং ঔষুধি গাছ ।আরো রয়েছে লেক ও শিশুপার্ক।

মিঠাপুকুর তিনকাতারের মসজিদ

মসজিদটিতে রয়েছে প্রবেশ তোরণ। মসজিদের চারকোণায় রয়েছে চারটি টাওয়ার। এছাড়া মসজিদের উপরে রয়েছে অর্ধগোলাকার তিনটি গম্বুজ। মসজিদে মোট পাঁচটি প্রবেশ পথ রয়েছে ।মসজিদের সামনের দেওয়ালের শিলালিপি থেকে জানা যায়, জনৈক শেখ মোহাম্মদ সাবেরের পুত্র শেখ মোহাম্মদ আছের কর্তৃক ১২২৬ হিজরীতে (১৮১০খ্রি.) মসজিদটি নির্মাণ হয়েছিল।

ইটাকুমারী জমিদারবাড়ি

অতীতঐতিহ্য-ইতিহাস সমৃদ্ধ বাংলাদেশের জনপদগুলোর মধ্যে অন্যতম জনপদ রংপুর। ইটাকুমারী জমিদারবাড়িটির অধিকাংশ ভবনই আজধ্বংস হয়ে গেছে। রয়েছে একটি ইঁদারাও দুটি ভবন। সাক্ষি হয়ে অবস্থান করছে বিশালাকার পুকুরদুটি ও।

রংপুর কারমাইকেল কলেজ

প্রায়৯শ’ বিঘা জমি জুড়ে অবস্থিত রংপুর কারমাইকেল কলেজটির মূল ইমারত ভবনটি। এর গম্বুজের অনন্য ব্যবহার,  বিভিন্ন স্থাপত্যিক সৌন্দর্য ও বৈশিষ্টাবলীর চমৎকার সন্নিবেশ-যা স্বভাবতই দর্শক সাধারণের মন কেড়ে নেয়।

দেওয়ান বাড়ির জমিদারবাড়ি

দেওয়ানবাড়ির জমিদারবাড়িতে ছোট্ট একটি ভবন রয়েছে ।প্রবেশ তোরণটি মোঘল আমলের দুর্গের দুয়ারের মতো। প্রবেশ তোরণটির দুপাশে রয়েছে দ্বাররক্ষীদের কক্ষ। জমিদার প্রথাবিলুপ্ত হওয়ার পরবাড়িটি নিলাম হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানে স্কুলও কয়েকটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।

বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্র

স্মৃতি কেন্দ্রটিতে রয়েছে দশহাজার গ্রন্থ ধারণ করার মতোগ্র ন্ধাগার।গ্র ন্ধাগারে এক সঙ্গে ৫০ জন পাঠ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে ।আরো রয়েছে শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ ২৫০ আসনের মিলনায়তন। সেমিনার কক্ষে রয়েছে একশত আসনের ব্যবস্থা। বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রটি বেগম রোকেয়ার নিজবাড়ির পাশে ৩.১৫ একর ভূমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। মূল ভবনটির আয়তন ১,৪৭,০১০বর্গফুট।

ভিন্নজগ

ভিন্ন জগতের ভিতরে যেন আরেকটি ভিন্ন জগৎ। এখানে রয়েছে প্লানেটোরিয়াম, রোবট স্ক্রিল জোন,  জল তরঙ্গ,  সিপ্যারাডাইস,  স্পেসজার্নি,  আজবগুহা,  নৌকাভ্রমণ,  শাপলাচত্বর, বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষা সৈনিকদের ভাস্কর্য,  থ্রিডিমুভি , ওয়াকওয়ে,  ফ্লাই হেলিকপ্টার,  মেরিলেক ড্রাইভ, গোরাউন্ড,  সুইমিং পুল স্পিনিং হেড ও মাছ ধরার সুব্যবস্থা । নৌ ভ্রমণের সুবিধা,  হাতি,  ঘোড়া, ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন ধরনের মূর্তি ও রয়েছে।  বিভিন্ন প্রজাতির গাছে গাছে বাসা বেঁধেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। থাকতে চাইলে কটেজ রয়েছে ৭টি, আপনি আপনার পছন্দেরটিতে উঠে যেতে পারেন। আরো রয়েছে থ্রিস্টার মডেলের ড্রিম প্যালেস ।ভিন্ন জগতের প্রবেশ মূল্য ২০টাকা এবং সেখানে যে কোনো রাইড৫০টাকার মধ্যেই।

রংপুর যেভাবে যাবেন

সড়ক পথ, রেলপথ এবং আকাশ পথেও যাওয়া যায় রংপুরে। সড়ক পথে যাতায়াতের জন্য ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর এবং মহাখালি বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন পরিবহনের বাস রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।সড়ক পথে প্রত্যেক দিন প্রায় ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে বাস রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও রেলপথে কিন্তু সপ্তাহে ছয়দিন নিদির্ষ্ট সময়ে রংপুর এক্সপ্রেসে যেতে হবে। আর আকাশ পথে যেতে হলে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজে ঢাকা থেকেসৈয়দপুর হয়ে রংপুর যেতে পারেন। সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে সৈয়দপুর যাতায়ত করে।

 

/ডিডি/