ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

আমার রিয়েল হিরো শেখ হাসিনা: আদম তমিজি হক

প্রকাশিত : ১০:০৭ পিএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৮:৪২ পিএম, ৩ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড় ঝাঁপ শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। আওয়ামী লীগ থেকে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আদম তমিজি হক।

ইউরোপে উচ্চতর রাজনীতি বিষয়ে পড়াশুনা শেষে দেশসেবায় মনোনিবেশ করতে ফিরে এসেছেন স্বভূমে। বিশ্বের একশটিরও বেশি রাষ্ট্রে ভ্রমণ করা আদম তমিজি হকের ঢাকা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন পরিকল্পনা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আগামি প্রজন্মের কথা মাথায় রেখে স্মার্ট সিটি করার পক্ষে তিনি। কিন্তু তা কীভাবে? সেসব কথাই তুলে এনেছেন একুশে টেলিভিশন অনলাইনের প্রতিবেদক আলী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে আপনার নাম খুব জোর আওয়াজে শোনা যাচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

আদম তমিজি হকঃ মেয়র আনিসুল হক সাহেবের মৃত্যু একটি অনাকাংখিত ঘটনা। এটার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। আমি দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সাহেব মাত্র, দুই বছরে যা করে গেছেন তা রেকর্ড। সততা, নিষ্ঠা ও সাহসের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন তিনি। তাঁর এসকল কাজের ধারাবাহিকতা যদি থাকে তাহলে অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকার নগর জীবনে একটা বড় পরিবর্তন আসবে। আমি আদম তমিজি হককে যদি আল্লাহ সেই সুযোগ দেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যেভাবে নির্দেশ করবেন আমি সেভাবে কাজ করব।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ যদি মনোনয়ন না পান সেক্ষেত্রে কী করবেন?

আদম তমিজি হকঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার জন্য কাজ করব। আমি আমার শুভাকাংখী, সমর্থক, কর্মী ভাইসহ সবাইকে বলেছি, নেত্রীর সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নেব।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনার দৃষ্টিতে ঢাকার প্রধান প্রধান সমস্যাগুলো কী কী?

আদম তমিজি হকঃ ঢাকার অনেক সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা রাজধানী। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখি, মাঝখানে অল্প কিছু সময় বাদ দিয়ে ঢাকা এ অঞ্চলের রাজধানী ছিল। কিন্তু ঢাকাকে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি।

বিশ্বের বিভিন্ন বড় বড় সংস্থাগুলোর জরিপে দেখা যায়, বাস অযোগ্য নগরীগুলোর তালিকায় ঢাকার নাম প্রথম দিকে থাকে। এটা আমাদের জন্য লজ্জার। এখানে পরিকল্পিত নগরায়ন হয়নি। নগরবিদরা বলছেন, আমাদের অধিকাংশ স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের পার্কগুলো এখন অর্ধমৃত। নদী ও খালগুলো প্রায় মৃত। আবাসিক এলাকা ও বাণিজ্যিক এলাকার মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা খুবই বাজে।

একটি আদর্শ নগরীর জন্য ২৫% রাস্তা, ১০% খোলা জায়গা, ১৫% বৃক্ষ থাকা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের এখানে তা মানা হয়নি। একদিনে নয়, দীর্ঘদিন ধরে এটা আস্তে আস্তে হয়েছে। আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থা খুব বাজে।  যানজট এখানে কমন একটি সমস্যা। এসব সমস্যাগুলোর ফলাফল স্বরূপ ঢাকা হয়ে উঠছে ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নগরী।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭ মাত্রার বড় ভূ-কম্পনে নগরীর ৮৫% ভবন ধসে যাবে। অর্থাৎ বলার অপেক্ষা রাখেনা আমরা কী ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছি। আর দৈনন্দিন জীবনে তো সমস্যা লেগেই আছে। পানির সমস্যা, বিদ্যুতের সমস্যা, স্যানিটেশন সমস্যা।

ঢাকার অন্যতম সমস্যা বস্তি। এগুলোতে বিদ্যুত - গ্যাস- পানি কোন কিছুর সুবিধা নেই। নেই স্যানিটেশন ব্যবস্থা। উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু সেই উন্নয়ন সঠিক জায়গায় সঠিকভাবে পৌঁছানো যাচ্ছেনা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনি সিটি মেয়র নির্বাচিত হলে কী এসব সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেবেন?

আদম তমিজি হকঃ না, একজন সিটি মেয়র ইচ্ছা করলেই রাতারাতি নগর পাল্টে ফেলতে পারেনা। পারা সম্ভব নয়। সিটি মেয়র যেটা করতে পারে সেটা হল একটা দীর্ঘমেয়াদী মাষ্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে কাজগুলো এগিয়ে নিতে। সেটা দশ- পনের- বিশ বছর মেয়াদী মাষ্টারপ্ল্যান হতে হবে। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক সাহেবের কাজে সেই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা দেখা গিয়েছিল। কম বেশী উন্নয়ন সব সেক্টরেই প্রচুর হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নটা পরিকল্পিত কি না? বা কতোটা ফলপ্রসূ?

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আজকের বাস্তবতায় সেই রূপকাঠামো কেমন হতে পারে?

আদম তমিজি হকঃ দীর্ঘমেয়াদী একটা পরিকল্পনা নিয়ে প্রশাসনের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করা যেতে পারে। অফিস, আদালত, সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন বিভাগীয় শহরগুলোতে নেওয়া যেতে পারে। এতে একদিকে রাজধানীর উপর চাপ কমবে, অন্যদিকে বিভাগীয় শহরগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পাবে।

শিল্পাঞ্চলগুলোকে অবশ্যই রাজধানীর বাইরে স্থানান্তর করতে হবে। রেসিডেন্সিয়াল এলাকা ও কমার্শিয়াল এলাকা একসঙ্গে থাকা যায়না। এতে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন জীবনের মান নষ্ট করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিন্তু তাই করছে। বাস টার্মিনালগুলোকে নগরের ভেতরে না রেখে বাইরে নিয়ে যেতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ অনেকে বলে থাকেন বহুতল ভবন ঘিঞ্জিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করছে। এনিয়ে আপনার মন্তব্য কী?

আদম তমিজি হকঃ আমি বহুতল ভবনের পক্ষে। তবে সেটা পরিকল্পিত। আমাদের এখানে পরিকল্পনাহীনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে স্থাপনা গড়ে উঠেছে। যা বিশ্বের উন্নত কোন রাষ্ট্রে হয়না। শহরের নির্দিষ্ট একটা এরিয়ায় একসাথে প্রয়োজন অনুযায়ী একশটি একশতলা ভবন নির্মিত হোক। তাহলে বাকি শহরটা ফাঁকা থাকবে। যেখানে রেসিডেন্সিয়াল এলাকা হতে পারে। তাহলে অন্তত আপনি নিঃশ্বাস নিতে পারবেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আমাদের পরিবহন ব্যবস্থাও কিন্তু অপরিকল্পিত।

আদম তমিজি হকঃ অবশ্যই। ব্যক্তিগত গাড়ির চাইতে পাবলিক পরিবহনের গুরুত্ব বাড়াতে হবে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমলে রাস্তা ফাঁকা হবে। পাবলিক পরিবহন তখন দ্রুত যাবে। অর্থ ও সময় দুটোই সাশ্রয়ী হবে। তাছাড়া পরিকল্পিত নগরায়ন হলে মানুষ হাঁটতে চাইত। কিন্তু আমাদের এখানে আমরা হাঁটার পরিবেশ দিতে পারিনি। ফুটপাত- ওভারব্রীজ সব দখলে। বেশীরভাগ মানুষ স্যানিটেশন সচেতন নয়। ফুটপাতে যেখানে সেখানে প্রসাব করা, কফ- থুথু ফেলা এখানে স্বাভাবিক ব্যাপার। অধিকাংশ ফুটওভার ব্রীজ ছিনতাইকারী ও মাদকাসক্তদের দখলে। আসলে সাধারণ মানুষের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। ওরা অনুকূল পরিবেশ চায়। আমরা দিতে পারছি না। সেটা আমাদের দোষ।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনি মেয়র নির্বাচিত হলে কোন পাঁচটি প্রধান সমস্যা নিয়ে কাজ করবেন?

আদম তমিজি হকঃ আমি আশ্বাস দেওয়ার পক্ষে নই। আবার ভোট বাড়ানোর জন্য কথার ফুলঝুড়ি ঝড়াতেও পছন্দ করিনা। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে যদি একটা বাসযোগ্য নগরী দিতে হয়, তাহলে তার উদ্যোগ আজকে এখনি নেওয়া উচিত। শুধু নির্বাচিত মেয়র উদ্যোগ নেবেন তা না। প্রত্যেকের নিজ নিজ জায়গায় সচেতন হয়ে এগিয়ে আসা উচিত। কর্তৃপক্ষের প্রধান হিসেবে মেয়র কাজগুলো সমন্বয় করবেন। জবাবদিহি ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন। যারা শত কোটি হাজার কোটি টাকার মালিক, তারা না হয় তাদের সন্তানদের জন্য বিদেশে নিরাপদ ভূমি নিশ্চিত করবেন। কিন্তু যারা সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ তারা যাবে কোথায়?

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ অনেক নগর পরিকল্পনাবিদ ও পরিবেশবিদরা দাবি করছেন, রাজধানী স্থানান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে। আপনি কী মনে করছেন?

আদম তমিজি হকঃ প্রয়োজন হতে পারে নয়, বরং বলি প্রয়োজন। এটা এখন সময়ের দাবি। রাতা রাতি সম্ভব নয়। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় করা প্রয়োজন।

ঢাকায় যত মানুষ বাস করে, কাজের প্রয়োজনে আরো সেই পরিমাণ বা তার কাছাকাছি সংখ্যার মানুষ ভাসমান অবস্থায় ঢাকায় নিয়মিত আসে। যদি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করা যায় তাহলে সেই চাপ কমবে। ঢাকা কিন্তু জনসংখ্যার চাপ আর নিতে পারছেনা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ ঢাকার সম্ভাবনাময়ী দিকগুলো কী কী?

আদম তমিজি হকঃ এশিয়ার অন্যতম সম্ভাবনাময়ী নগরী ঢাকা। আমাদের এখানে সব আছে। বিদ্যুৎ- গ্যাস- পানি সব। আমাদের এখানে যত সহজে শ্রম পাওয়া যায় বিশ্বের অন্য কোথাও তা পাওয়া যায়না।

ঢাকা পর্যটনের নগরী। বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র পর্যটন খাত কাজে লাগিয়ে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে। কিন্তু দীর্ঘ বিশ ত্রিশ বছর ঢাকায় বাস করে ও লালবাগের কেল্লা বা আহসান মঞ্জিল চিনেন না বা দেখার আগ্রহ হয়নি এমন লোকের সংখ্যাও কিন্তু আমাদের এখানে কম নয়। কারণ, আমরা আমাদের পর্যটন খাতগুলোকে সেভাবে উন্নত করতে পারিনি। সেগুলোর যত্ন বা বিকাশে কোন উদ্যোগ নিতে পারিনি। একটা নগরীতে পার্ক বা খোলা জায়গা খুব বেশি দরকার। কিন্তু আমাদের এখানে দেখবেন পার্কগুলো মারা যাচ্ছে। মানুষ পার্কে যেতে ভয় পায়। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এখন ভাসমান মানুষ ও মাদকাসক্তদের দখলে। মাথা বালির মধ্যে রেখে সমস্যা থেকে পার পাওয়া যাবেনা।

পৃথিবীতে যে কোন সভ্যতা গড়ে উঠে নদীর তীরে। অথচ আমাদের সেই নদী বুড়িগঙ্গা এখন অর্ধমৃত। খালগুলো সব শুকিয়ে গেছে। খেয়াল করলে দেখবেন, হাতিরঝিল প্রজেক্টে ওয়াটার বাস সার্ভিস একদিকে যেমন সড়কে যাত্রীদের চাপ কমিয়েছে তেমনি অন্যদিকে পানি থেকে টাকা আয় হচ্ছে। এতে রাষ্ট্র লাভবান হচ্ছে। সেখানে আমরা আমাদের সব খাল মেরে ফেলেছি। খালগুলো একইভাবে কাজে লাগানো সম্ভব।

আমরা যদি ঢাকাকে বাসযোগ্য নিরাপদ নগরী করতে চাই, তাহলে প্রশাসনের অনেকগুলো সেক্টর ঢাকার বাইরে স্থানান্তর করতে হবে। শিল্প-কারখানা ঢাকার বাইরে সরিয়ে নিতে হবে। বাণিজ্যিক এলাকা ও আবাসিক এলাকা আলাদা করতে হবে। বাস টার্মিনালগুলো শহরের একপ্রাণ্তে নিতে হবে। নয়তো আগামী দশবছরের মধ্যে ঢাকা অচল হয়ে যাবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

আদম তমিজি হকঃ প্রথম জীবনে আমার কাছে আমার হিরো ছিলেন আমার বাবা ব্যারিষ্টার তমিজুল হক। আর বর্তমানে আমার লাইফে রিয়েল হিরো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেখুন, এ জাতি গর্ব করার মত খুব বেশি কিছু পায়নি। আমি চারদিকে অন্ধকার দেখি। কিন্তু একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে আলো দেখি। এই হতভাগা জাতির ভাগ্য পরিবর্তনে তাঁর কোন বিকল্প নেই। এত অল্প সময়ে এত বেশি কাজ পৃথিবীর অনেক উন্নত রাষ্ট্রও করতে পারেনা। ঘরে বাইরে সব জায়গায় শত্রু। তিনি ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছেন। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য, সর্বোপরি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই। শেখ হাসিনার সরকার বারবার ক্ষমতায় আসা যুগের সন্ধিক্ষণে আজ সবচেয়ে বড় দাবি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আমাদের সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

আদম তমিজি হকঃ একুশে টেলিভিশন অনলাইনের জন্য শুভকামনা। সাহসী সাংবাদিকতায় আপনাদের পথচলা দীর্ঘজীবী হোক।