ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ঘুরে আসতে পারেন খাগড়াছড়ির দর্শণীয় স্থানগুলো

সাদ্দাম উদ্দিন আহমদ

প্রকাশিত : ০৭:৪৪ পিএম, ২ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ১০:৩১ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০২১ শুক্রবার

নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি খাগড়াছড়ি জেলা। পাহাড়, নদী ও লেকবেষ্টিত দেশের বৈচিত্রময় জনপদ। পাহাড়ের কোলে গড়ে উঠা নির্মল প্রকৃতি। পর্যটকের মনে হবে, প্রকৃতি যেন নিজ হাতে এটিকে গড়ে তোলেছে। এ জেলার সর্বত্রই দর্শনীয় স্থান, যেদিকে তাকাবেন আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন, পর্যটকরা খাগড়াছড়ির কয়েকটি স্থানে ভিড় করে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলির অন্যতম হলো- আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র, আলুটিলার ঝর্ণা বা রিছাং ঝর্ণা, আলুটিলার সুড়ঙ্গ বা রহস্যময় সুড়ঙ্গ, দেবতার পুকুর (দেবতার লেক), শান্তিপুর অরণ্য কুটির, বিডিআর স্মৃতিসৌধ  

আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র-

ব্যতিক্রমধর্মী পর্যটক স্থান আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র। খাগড়াছড়ি যাওয়ার সময়ই আপনার চোখে পড়বে পর্যটন কেন্দ্রটি। পর্যটন কেন্দ্রটির সামনে দাড়ালেই আপনি ভিতরে প্রবেশের লোভ সামলাতে পারবেন না। পর্যটন কেন্দ্র থেকে দূরে তাকালেই দেখতে পাবেন খাগড়াছড়ি শহর, আকাশ আর পাহাড়ের সৌন্দর্য। এর সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে খাগড়াছড়ির সাবেক জেলা প্রশাসক লিখেছিলেন যা অনেকটা এ রকম-‘‘ক্লান্ত পথিক ক্ষণেক বসিও আলুটিলার বটমূলে, নয়ন ভরিয়া দেখিও মোরে চেঙ্গী নদীর কোলে।’’

 

পর্যটন কেন্দ্রটিতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, গুহায় যাওয়ার সিড়ি, বসার সুব্যবস্থা ও বিশ্রাম কক্ষ রয়েছে। আপনি যখন

পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠবেন খাগড়াছড়িকে দেখে দার্জিলিংয়ের কথা মনে পড়ে যাবে, মনে হতে পারে আপনি দার্জিলিং দেখছেন। বছরের প্রত্যেকটা দিনই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা যায় পর্যটন কেন্দ্রটিতে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভ্রমণপিপাসুরা ছু্টে যান সেখানে।

কিভাবে যাবেন- খাগড়াছড়ি সদর থেকে বাস, অটোরিক্সা কিংবা মোটরসাইকেলেও সল্প সময়ের মধ্যেই যাওয়া যায়।

রিছাং ঝর্ণা

ঝর্ণার জলরাশি উঁচু পাহাড় থেকে আছড়ে পড়ছে। জলধারা নীচে নেমে যাচ্ছে উচু পাহাড় গড়িয়ে। ঝর্ণার কাছে দাড়ালেই দেহ মন ভরে উঠবে পবিত্র স্নিগদ্ধতায়। সেখানে যাওয়ার আগে ঝর্ণার সৌন্দর্য সম্পর্কে যতটুকু কল্পনা করে থাকবেন তার চেয়েও অনেক সুন্দর জায়গা। ছর্ণা পর্যন্ত যাতায়াতের উচুনিচু রাস্তা আর পাশের তাকালেই দেখতে পাবেন পাহাড় আপনাকে এনে দিবে রোমাঞ্চকর অনুভুতি। মারমা ভাষায় ‘রি’ শব্দের অর্থ পানি আর ’ছাং’ শব্দের অর্থ ঝর্ণা। পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিনেই পর্যটকরা ভিড় করেন।

যেভাবে যাবেন- রাঙ্গামাটি শহর থেকে আলুটিলা থেকে সামান্য দূরত্বেই ঝর্ণাটির অবস্থান। যাতায়াতের জন্য রয়েছে চান্দের গাড়ি, কার এবং মোটরসাইকেল।

 

আলুটিলার সুড়ঙ্গ বা রহস্যময় সুড়ঙ্গ

পর্যটন কেন্দ্রটির প্রধান আকর্ষণই গুহা। আলুটিলা সুড়ঙ্গটি দেখতে হলে পাহাড়ের চূড়া থেকে ২৬৬টি সিড়ি বেয়ে নামতে হবে পাহাড়ের পাদদেশে। সুড়ঙ্গটি পাথর আর শিলা মাটির ভাঁজে গড়া। প্রায় ১৮ ফুট ব্যাসের গুহামুখ আর গুহাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২৮০ ফুট। সুড়েঙ্গের ভিতরে গা ছমছম অন্ধকার, গুহার তলদেশ দিয়ে গড়িয়ে চলেছে জল। গুহায় প্রবেশ করার জন্য ১০ টাকার বিনিময়ে মশাল কিনে নিতে পারেন  গুহার কাছে থেকেই। গুহার একদিক দিয়ে প্রবেশ করে অন্য দিক দিয়ে বের হতে সময় লাগবে প্রায় ১০/১৫ মিনিট।

যেভাবে যাবেন- পর্যটনকেন্দ্রটি অবস্থান খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পার্শ্বে ট্যাক্সিযোগ অথবা মোটরসাইকেলের মাধ্যমে যাতায়াত করা যায়।

দেবতার পুকুর (দেবতার লেক)

দেবতার পুকুরটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত। যার উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় এক হাজার ফুট ওপরে। পুকুরটিকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য নানা কল্প কাহিনি। পুকুরটির চারপাশের বন জঙ্গল দেখে মনে হবে দেবতা নিজ হাতে সুন্দর পরিবেশ তৈরি করেছেন। পুকুরের স্বচ্ছ জলরাশি এনে দিতে পারে প্রশান্তি, আবার কেউবা জলের দিকে তাকিয়ে হয়ে যেতে পারেন উদাস। পুকুরটি পরিগণিত হয় ত্রিপুরাদের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে। তীর্থ মেলা বসে প্রতিবছর চৈত্রসংক্রান্তিতে। কথিত আছে, স্থনীয়দের তৃষ্ণা নিবারণের জন্য স্বংয় দেবতা পুকুরটি খনন করেছিলেন। স্থানীয়রা পুকুরের পানিকে আশীর্বাদ মনে করে। প্রচলিত আছে পুকরের পানি কখনো কমে না, পুকরের তলায় লুকায়িত গুপ্তধন দেবতারা পাহাড়া দিচ্ছেন। অনেকের ধারনা এখানে এসে সৃষ্টিকর্তার কাছে কিছু চাইলে মনের আশা পুরন হয়।

যেভাবে যাবেন- খাগড়াছড়ি থেকে মহালছড়ি হয়ে রঙ্গামাটি সড়কে জেলা সদর থেকে ১১ কিলোমিটার দক্ষিণে মূল রাস্তা হতে চার কিলোমিটার পশ্চিমে নূনছড়িতে পুকুরটি অবস্থিত।

 

শান্তিপুর অরণ্য কুটির

বিশাল অরণ্যের মাঝে এক কুটির। জনশ্রুতি আছে ভিক্ষুরা নিরিবিলি পরিবেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে ধ্যান করার জন্য কুটিরটি ব্যবহার করতেন। এটি মূলত একটি বৌদ্ধ মন্দির। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় বুদ্ধ মূর্তিটি এখানেই রয়েছে। জায়াগটি সবার জন্যই উন্মুক্ত, সব ধর্মের লোকদের অবার যাতায়াত রয়েছে সেখানে। তীর্থ স্থানটি দর্শনীয় স্থান হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিনই পর্যটকরা ভিড় করেন সেখানে। কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠানে সমাগম ঘটে হাজার হাজার লোকের।

যেভাবে যাবেন- খাগড়াছড়ির পানছড়িতে অবস্থিত শান্তিপুর অরণ্য কুটির। বাসে পানছড়ি গিয়ে সেখান থেকে কার অথবা জীপে যেতে পারেন গন্তব্যে।

এছাড়াও বিডিআর স্মৃতিসৌধসহ আরও অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে খাগড়াছড়িতে।

 

এসএইচ/