ঢাকা, মঙ্গলবার   ২১ মে ২০২৪,   জ্যৈষ্ঠ ৭ ১৪৩১

হৃৎপিণ্ড ঘাড়ে নিয়ে ঘুরেন এই নারী!

প্রকাশিত : ০৭:৫৬ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৮:২৭ পিএম, ৫ জানুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

হৃৎপিণ্ড। মানব দেহের অপরিহার্য অংশ। আমাদের সবার হৃৎপিণ্ডই থাকে শরীরের ভেতরে। কিন্তু পৃথিবীতে একজন নারী আছেন যিনি তার হৃৎপিণ্ড ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান। শুনতে অবাক লাগছে? অবাক লাগলেও ঘটনা সত্যি।

ব্রিটেনের ৩৯ বছর বয়সী সেলওয়া হুসাইন তার হৃৎপিণ্ড নিজেই ঘাড়ে করে ঘুরে বেড়ান। তবে হৃৎপিণ্ডটি কৃত্তিম। এই কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডই বাঁচিয়ে রাখছে সেলওয়া হুসাইনকে।

দুই সন্তানের জননী সেলওয়া ছয় মাস আগে খুবই মুমূর্ষু অবস্থায় তার পারিবারিক চিকিৎসকের সরনাপন্ন হন। সেখান থেকে তাকে নেওয়া হয় এসেক্সের একটি স্থানীয় হাসপাতালে। সেখানে তিনি জানতে পারেন তার হার্ট শরীরে রক্ত সঞ্চালন করতে পারছে না।

এর চারদিন পর তাকে নেওয়া হয় হেয়ারফিল্ড হাসপাতালে। বিশ্ব বিখ্যাত এ হাসপাতালের হৃদ বিশেষজ্ঞদের রীতিমত যুদ্ধ করতে হয় সেলওয়াকে বাঁচিয়ে রাখতে। তিনি এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে, তার হৃৎপিণ্ড স্থানান্তরের ধকল সহ্য করার অবস্থায়ও ছিল না।

সবশেষে, তার স্বামী আল হুসাইনের অনুমতি নিয়ে ছয় ঘণ্টা অস্ত্রপচার শেষে তার দেহে বসানো হয় কৃতিম হৃৎপিণ্ড। সরিয়ে ফেলা হয় দেহের প্রাকৃতিক হৃৎপিণ্ড। এরপর থেকেই সেলওয়াকে বয়ে বেড়াতে হয় এ কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডটি।

কৃত্তিম এ অস্ত্রোপচার স্থাপনের নেতৃত্ব দেন সার্জন ডা. ডায়ানা গার্সিয়া সাইজ। সার্বিক সহায়তায় ছিলেন হেয়ারফিল্ড হাসপাতালের হৃৎপিণ্ড প্রতিস্থাপন বিভাগের প্রধান ডা. অ্যান্ড্রে সাইমন। আর হৃদপিণ্ডটি প্রস্তুত করেন যুক্তরাষ্টের একটি প্রতিষ্ঠান।

সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যমের কাছে নিজের অনুভূতির কথা জানান সেলওয়া হুসাইন। তিনি বলেন, “অস্ত্রপচারের আগে ও পরে আমি এতটাই অসুস্থ ছিলাম যে, পুরোপুরি সুস্থ হতে আমার এতটা (প্রায় ৬ মাস) সময় লাগল।” এসময় নতুন বছরের প্রাক্কালে নিজের পরিবারের সাথে থাকতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান উল্লেখ করে সেলওয়া বলেন, “হেয়ারফিল্ড খুবই চমৎকার কাজ করেছে। তারা এমন একটি সমাধান বের করেছে যার কারণে আজ আমি আমার পরিবারের সাথে নতুন বছরের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে পারছি।”

সেলওয়ার এই কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডটির ওজন ১৫ পাউণ্ড। আর এর জন্য খরচ হয়েছে ৮৬হাজার পাউণ্ড বা এক লক্ষ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার। যা বাংলাদেশি টাকায় ৯৬ লক্ষ ২৮হাজার টাকা।

সব সময়েই নিজের এ কৃত্তিম হৃৎপিণ্ডটিকে নিজের সাথে রাখতে হয় সেলওয়ার। পাশাপাশি সেলওয়ার সাথে তার স্বামী অথবা একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই সঙ্গে থাকতে হবে। কারণ যদি কোনো কারণে যন্ত্রটিতে ত্রুটি দেখা দেয় তাহলে ব্যাকাপ যন্ত্র চালু করতে হবে সেই সঙ্গীকে। আর সেলওয়াকে জীবিত রাখতে এ কাজটি করতে হবে ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে।

যেভাবে কাজ করে যন্ত্রটি

সেলওয়ার ঘাড়ে ঝুলানো ব্যাকপ্যাকের মধ্যে থাকা যন্ত্রটির সাথে যুক্ত আছে দুইটি প্লাস্টিক পাইপ। পাইপগুলোর সংযোগ দেওয়া হয়েছে সেলওয়া’র বক্ষ গহবরের সাথে। আর ব্যাকপ্যাকের যন্ত্রটিতে আছে একটি ব্যাটারি এবং একটি বৈদ্যুতিম পাম্প মেশিন। এই পাম্প মেশিনের সাথে পাইপের ভিতর দিয়ে বাতাস ঢেলে হৃদপিন্ডে প্রবেশ করানো হয়। আর সেখান থেকেই পুরো শরীরে রক্ত প্রবাহ সঞ্চালিত হয়।

তবে কৃত্তিম হৃৎপিণ্ড বহনকারী সেলওয়াই প্রথম ব্যক্তি নন। তবে প্রথম নারী। এর আগে ইংল্যান্ডেই ৫০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহেও সংযোজন করা হয় কৃত্তিম হৃৎপিণ্ড। ক্যামব্রিজশায়ারের পাপওয়ার্থ হাসপাতালে ২০১১ সালে এ অস্ত্রোপচারটি করা হয়।

 

সূত্র: মেট্রো ইউকে/ডেইলি মেইল

 এসএইচএস/টিকে