ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

চাকরি ছেড়ে কাদের এখন পিঠা বিক্রেতা

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ১১:৪১ পিএম, ৬ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০১:৩৯ পিএম, ৮ জানুয়ারি ২০১৮ সোমবার

আবদুল কাদের। বয়সে যুবক। পাঁচ বছর আগে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় আসেন চাকরির খোঁজে। লেখা-পড়া তেমন জানেন না। তাই চাকরিও পাচ্ছিলেন না। বেশ কিছুদিন তাকে বেকার থাকতে হয়। পরে মাসে আড়াই হাজার টাকা বেতন রাজধানীর কারওয়ান বাজারের অবস্থিত একটি ভবনের নিরাপত্তাকর্মীর চাকরি পান। বাবা, ভাই, স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে তার সংসার। থাকেন কারওয়ান বাজার বস্তিতে।

অল্প বেতনের চাকরি দিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কাদের। তাই দুই বছর পর চাকরির ছেড়ে দিলেন। ২০ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করলেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। অল্প পুঁজিতে বেশি লাভ হওয়ায় শীতের মৌসুমে এলেই তিনি পিঠা বিক্রি শুরু করেন। এছাড়া বছরের অন্য সময়ে ফল এবং ঝাল মুড়িও বিক্রি করেন।

কারওয়ান বাজারে ভ্রাম্যমান পিঠাঘরে পিঠা বিক্রি করেন কাদের। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন তিনি। সব খরচ বাদে দিন শেষে ৫০০-৬০০ টাকায় আয় হয় তার। পিঠা বিক্রির আয় দিয়ে বর্তমানে ৬ জনের সংসার বেশ ভালোভাবেই চলছে বলে জানান তিনি।

শনিবার বিকেলে কাদেরের পিঠার দোকানে তার সঙ্গে কথা হয়। বলেন, ‘অফিস ছুটির পর বড় বড় স্যারেরা আহে, আমি পিডা বানাইনা দেই, মজা কইরা খাইতে থাহে। আমার বালাই লাগে।’

পিঠা খেতে খেতে কথা হয় আবদুল কাদেরের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন বিকালে এসে দোকানে বসেন। এখানে তিনি চিতই আর ভাপা পিঠা বিক্রয় করেন। চালের গুড়া, খেজুরের পাটালি, নারিকেল ও লবণের মিশ্রণে তৈরি হয় এ পিঠা। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি চাউলের গুড়া, ৩ থেকে ৫ কেজি খেজুরের পাটালি ও ৫ থেকে ৬টা নারিকেল পিঠা তৈরির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রতিটি চিতই পিঠা ৫ টাকা এবং ভাপা ১০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার টাকার চিতই-ভাপা পিঠা বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে তার রোজ লাভ হয় ৫শ থেকে ৬শ টাকা।

ক্রেতা সাধারণরা অনেক সময় পিঠা খেতে অপেক্ষায় থাকতে হয়। ক্রেতার উপর নির্ভর করে চুলার সংখ্যা। দোকানির সঙ্গে কথা বলার সময় পিঠা খেতে আসেন দু’জন শিক্ষার্থী। এখানে এসে পিঠা খেতে কেমন লাগে জানতে চাইলে-সিএ অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান বলেন, শীতের পিঠা আমার খুবই প্রিয়। চিতই পিঠার সঙ্গে এতসব ভর্তা বাসায় বানাতে গেলে সেটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। নানান ঝামেলার কারণে সাধ থাকলেও বাসায় পিঠা বানানো হয়ে উঠে না। তাই এখানে পিঠা খেতে আসলাম।

পাশে দাঁড়িয়ে ইসরাতের বান্ধবী সানজিদা বলেন, আমি পিঠা খেতে ভীষণ পছন্দ করি। শীতের পিঠা আসলে খুবই মজাদার। গ্রামে গিয়ে যে পিঠা খাবো সে সময় তো পাওয়া যাবে না। তাই অনেকটা প্রাণের টানে প্রতিদিন ছুটে আসি। তিনি কাদেরের পিঠার প্রশংসাও করেন।

কাদেরের বানানো পিঠা আশেপাশের বড় বড় অফিসে যায়। এছাড়া যেকোনো অনুষ্ঠানে বড় বড় অর্ডারও তিনি পান বলে জানান। পিঠা বিক্রি করে যা আয় হচ্ছে তা দিয়ে ভালোমতোই সংসারের ব্যয় নির্বাহ করতে পারছেন কাদের।

 কেআই/টিকে