ঢাকা, সোমবার   ২৯ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা

প্রকাশিত : ০৩:৫৫ পিএম, ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৯:১১ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ রবিবার

অসচেতনতার কারণে হোক বা দৈব-দুর্বিপাকে হোক আগুনে পুড়ে প্রাণহানিসহ সর্বস্বান্ত হয় মানুষ। আমাদের দেশে বিভিন্ন কারণে মানুষ আগুনে দগ্ধ হন। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানেন না পুড়ে গেলে কী করতে হবে। আর কি করলে আরাম মিলবে। অধিকাংশ সময় বিভিন্ন ভ্রান্ত ধারনার কারণে এটা ওটা করে পোড়ার ক্ষত আরও বাড়িয়ে ফেলেন অনেকে।

একুশে টেলিভিশনের (ইটিভি) ‘দি ডক্টরস্’ অনুষ্ঠানে ‘আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা ও সচেতনতা’ শীর্ষক আলোচনায় এ বিষয়ে কথা বলেছেন- ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন (সহকারী অধ্যাপক, প্লাস্টিক ও কসমেটিক সার্জন, বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ)। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেছেন- অধ্যাপক ডা. ইকবাল হাসান মাহমুদ। অনুষ্ঠানটি শুনে প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- সোহাগ আশরাফ

প্রশ্ন : শীতকালে সাধারণত আগুনে পোড়া রোগী বেশি দেখা যায়। এর কারণ কি?

উত্তর : আসলে এই দুর্ঘটনার যে বিষয়টা সেটা শীতকাল বাদেও বছরের অন্যান্য সময় হয়। তবে শীতের সময় অন্যান্য সময়ের থেকে একটু বেশি রেগী আসে। এ বছর শীতের প্রকোপ অনেক বেশি। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনও শীতার্ত থাকেন। যাদের পর্যাপ্ত পরিমানের শীতের কাপড় থাকে না। এছাড়াও গ্রামের মানুষদের মধ্যে একটা অভ্যাস আছে তারা আগুন জ্বালিয়ে তাপ নেয়। এ কারণেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

শুধু আগুনে পোড়া রোগীই যে আসছে তা কিন্তু নয়, গরম পানিতে দগ্ধ হওয়া রোগীও আসে। এ সময়টাতে গরম পানিতে দগ্ধ হওয়া রোগীর সংখ্যাটাই বেশি। কারণ অনেকেই আছেন যারা পানি গরম করে গোসল করেন। চুলায় পানি গরম করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

তাছাড়া সিগারেটের আগুনেও অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। যদিও গরমের সময় এটি বেশি দেখা যায়।

এ ক্ষেত্রে সচেতনতাই জরুরী। আগুনে তাপ নিতে গেলে কাপড় ঠিকঠাক রেখে বসতে হবে। গরম পানি বহনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সিগারেট খেয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলতে হবে।

প্রশ্ন : আগুন লেগে গেলে তাৎক্ষনিক ভাবে কি করতে হবে?

উত্তর : আমরা প্রথমেই যেটা বলে থাকি- যদি সরাসরি আগুন লেগে যায় তাহলে কয়েকটি পদ্ধতি আছে। যদি পাশে মোটা কোন কাপড় থাকে সেটা দিয়ে চাপা দিয়ে নিভিয়ে ফেলতে হবে। অথবা শুয়ে পড়ে গড়াগড়ি করতে হবে। আবার যদি সম্ভব হয় গায়ের কাপড় খুলে ফেলতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। যদি কাপড়ের কোন অংশ চামড়ার সঙ্গে লেগে যায় তা ওঠানো যাবে না।

প্রশ্ন : আগুনে যদি পুড়ে যায় বা আগুন লাগে তবে পানি দেওয়া যাবে কি?

উত্তর : এটি গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আমাদের শরীর কেনো পুড়ে যায়? অতিরিক্ত তাপের কারণে। তাই পুড়ে গেলে নেচারাল পানি দিতে হবে। অনেকে ঠান্ডা পানি বা বরফ দিয়ে থাকেন। তা ঠিক নয়। এতে করে অপকারই বেশি হতে পারে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট সাধারণ পানি ঢালুন।

প্রশ্ন : কেউ কেউ ডিম ভেঙ্গে দেয়, পেস্ট মেখে দেয়। এটা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?

উত্তর : এটা আরও বেশি ক্ষতিকারক। এমন রোগী আমরা অনেক পাই। যারা পুড়ে যাওয়ার পর সারা শরীরে ডিম মেখে আসে। দেখা যায় এটা যখন আমরা শরীর থেকে তুলতে যাই তখন স্কিন লস হয়। এটা করা যাবে না। এগুলো উপকার তো করেই না বরং এগুলো থেকে সাবধান থাকতে হবে।

প্রশ্ন : আগুনে পোড়া চিকিৎসা কোন কোন হাসপাতালে বেশি হয়?

উত্তর : বাংলাদেশে একটা জাতীয় বার্ণ ইউনিট আছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্লাষি্টক সার্জারী ও বার্ণ ইউনিট। এখানে অনেক রোগী আসেন। এছাড়াও আমাদের পুরাতন ৮টি মেডিকেল কলেজ রয়েছে, যেখানে এই চিকিৎসা দেওয়া হয়। নতুন মেডিকেলগুলোতেও রয়েছে।

প্রশ্ন : যারা বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে পোড়েন তাদের ক্ষেত্রে কি করণিয়?

উত্তর : এটি একটি ভয়ংক ব্যপার। এতে তাৎক্ষনিক মৃত্যুও হতে পারে। বিদ্যুৎ এর বার্ণ এতোটাই ভয়াবহ যে অনেক সময় রোগীর হাত পা কেটে ফেলতে হয়। শুধু জীবনটাকে বাঁচিয়ে রাখা। এই দুর্ঘটনা সাধারণত বাচ্চা ও তরুণদের মধ্যেই ঘটে।

এ বিষয়ে বিস্তারিত আরও জানতে বা দেখতে চাইলে ভিডিওটি ক্লিক করুন :

এসএ/