ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

কী খাবো, কেনো খাবো?

জেবু নেসা

প্রকাশিত : ০৮:৪৭ পিএম, ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০৩:৪৭ পিএম, ৭ জুন ২০২১ সোমবার

সুস্থতা ছাড়া স্বাস্থ্যের আরেকটি অর্থ হচ্ছে সুখ। রোগ হলে সুখ চলে যায়, তাই রোগকে বলা হয় অসুখ। অসুখ যাতে না হয়, কিংবা হলেও কীভাবে ভালো হওয়া যায় এবং ভালো থাকা যায়, তা জানা ও মেনে চলা খুব দরকারী। বিশেষ করে অল্প বয়সে। তা হলে সহজে অসুখ হবে না এবং নিরোগ দেহে দীর্ঘ জীবন লাভ করা যায়। স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ম ভালো করে জানার আগে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে শরীর ও মন একসাথে জড়িত। কাজেই দুটোকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

শরীরকে যদি যন্ত্রের সাথে তুলনা করা হয় তাহল দেখা যায় যন্ত্রের যেমন তেল, গ্যাস কিংবা বিদ্যুৎ দরকার হয়, শরীরেরও তেমনি দরকার খাদ্য, পানীয় ও বাতাস। বাতাস দূষণমুক্ত হলেই চলে, কিন্তু খাদ্য ও পানীয় নিয়ে অনেক কিছু ভাবার আছে।

প্রথম কথা, আমরা বাঁচার জন্য খাই না খাওয়ার জন্য বাঁচি? খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে ঠিক সময়ে ভালো মানের খাবার ও পানীয় উপযুক্ত পরিমাণে গ্রহণ করা। পেট কখনও বেশি ভরাতে নেই, তাতে হজমের গন্ডগোল হয়। প্রতিদিন একই সময়ে খাওয়া উচিত। রাতের খাওয়া আটটার মধ্যে সেরে ভালো, কারণ বিকেল থেকে হজমশক্তি কমতে থাকে।

সহজে হজম হয় এমন খাবারই সব সময়ে খাওয়া উচিত। এতে হজমশক্তির ওপর বেশি চাপা পড়ে না বলে পেট খারাপ হয় না এবং খাবার থেকে পুষ্টি ভালোভাবে শরীরে যোগ হয়।

অতিরিক্ত তেল, চর্বি, লবণ ও মশলযুক্ত এবং ভাজা-পোড়া খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। খাবারের একটি উপকারী উপাদান হচ্ছে আঁশ যা অন্ত্র পরিষ্কার রাখে। খাবার বেশি ঘষে-মেজে কিংবা রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে সাদা, মসৃণ ও উপাদেয় করা হলে মৃত আঁশ চলে যায়। এরকম খাবারের মৃত খাদ্য বলা হয়। ময়দা ও সাদা চিনি মৃত খাদ্য। এগুলো দিয়ে তৈরি খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ ময়দায় যেমন ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে তেমনি চিনি আমাদের হাড় পর্যন্ত ক্ষয় করে।

কিন্তু এটা ঠিক যে মিষ্টি জিনিস খেতে মজা। কাজেই মিষ্টি কিছু খেতে হলে চিনি ছাড়া অন্য কোনো উৎসের সন্ধান করা যেতে পারে। যেমন গুড় কিংবা মধু অল্প পরিমাণে খাওয়া চলে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে মিষ্টি ফলমূল। চিনির তৈরি পানীয় দ্রব্যও খারাপ, বিশেষ করে কোলাজাতীয় পানীয়গুলো। সেই সাথে ময়দা, তেল মাখন ইত্যাদি দিয়ে তৈরি নানারকম মজাদার খাবার যেমন পরোটা, পাউরুটি, বিস্কুট, চিপ্‌স্‌, নুড্‌ল্‌স্‌, সেমাই, কেক, পেস্ট্রি, প্যাটিস, চানাচুর, বার্গার ও বিভিন্ন ‘ফাস্ট ফুড’ খাওয়ার অভ্যাস মারাত্মক সব রোগ, যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, বহুমাত্র বা ডায়াবিটিসের জন্ম দিচ্ছে। এশিয়ায় অল্প বয়সীদের মধ্যে ডায়াবিটিসের হার অনেক বেড়েছে এবং বেড়েই চলেছে।

শতকরা হিসেবে খাবারের ৪০ ভাগ শ্বেতসার অর্থাৎ ভাত-রুটি-আলু, ১৫ ভাগ আমিষ অর্থাৎ মাছ-মাংস-ডিম-ডাল এবং বাকি ৪৫ ভাগ শাক-সবজি-ফলমূল হওয়া উচিত। গরু-খাসির মাংসে চর্বি থাকে বলে তা বিপজ্জনক এবং বেশি খেলে বড় বড় রোগ হয়। দিনে অন্তত আধ কেজি সবজি খাওয়া ভালো। নাস্তায় কাঁচা পেঁপে বেশ কিছুটা থাকতে হবে। আর থাকতে হবে যে কোনো ধারনের ফল। প্রতিদিন সাত রকম ফল ও সাত রকম সবজি খাওয়া উচিত। সবজি তিন বেলাই খাওয়া যায়। তবে শাক, সিম ও কপি জাতীয় সবজি রাতে খেলে পেটে বায়ু জমে। খাওয়ার জন্য দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে সকাল, তারপর দুপুর, তারপর রাত। অনেকে এটা না জেনে সকালের চেয়ে দুপুরে এবং দুপুরের চেয়ে রাতে বেশি খেয়ে অসুস্থ হয়।

টাটকা খাবার থেকে বিশুদ্ধ রক্ত তৈরি হয় যা শরীরের জীবকোষগুলোকে সুস্থ রাখে। এজন্য বাসী খাবার খাওয়া উচিত নয়। ফ্রিজেও খাবার বেশি সময় রাখলে এর গুণাগুণ ও স্বাদ নষ্ট হয়। শরীরের অধিকাংশ পানি বলে তা পূরণের জন্য দিনে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। এর মধ্যে সকালে খালি পেটে কুসুম গরম ৬৫০ গ্রাম (২ থেকে ৩ গ্লাস) পানি পান করার পর ৪৫ মিনিট পানাহার বন্ধ রাখলে সহজে পায়খানা হয় এবং অম্লতাসহ বহু জটিল রোগ সারে। ডাবের পানিও ভাল, তবে দিনে একটার বেমি নয়। দুধ-চিনি ছাড়া হালকা চা উপকারী।

লেখক : স্বেচ্ছাসেবী সমাজ কল্যাণ সংস্থা হীল’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং বাংলাদেশ বিমান এর প্রাক্তন পার্সার।

একে/টিকে