ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

প্রকাশিত : ০৭:৩০ পিএম, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ বুধবার | আপডেট: ০৪:০০ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৪ সোমবার

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার রক্ষা করতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন এ দেশের বীর সন্তানরা। মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য যে ক`জন ভাষা সৈনিক প্রাণ দিয়েছেন তাদের মধ্যে আবুল বরকত অন্যতম। শহীদ আবুল বরকতের জন্ম ১৯২৭ সালের ১৬ জুন ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলায়। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে আবুল বরকত ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে। ভাষা আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন তিনি স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।

সেই সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিলে সামিল হয়। বায়ান্ন সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে বর্তমান শহীদ মিনার এলাকায় পাকিস্তানি পুলিশ মিছিলকে লক্ষ্য করে গুলি চালাই। এতে মারাত্মকভাবে আহত হয় অনেকে। সেদিনের মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সালাম, জাব্বার, রফিক, সফিক, আবুল বরকতসহ নাম না জানা আরও অনেকে।

তাদের আত্মোৎসর্গকারী এসব মহৎ প্রাণদেরকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণে রাখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশে শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা নির্মাণ করা হয়।

জাদুঘরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের দ্বিতীয় গেইট পলাশী মোড়ে এটি অবস্থিত। পাঁচ কাঠা জমির উপর নির্মিত জাদুঘরটি ২০১২ সালের ২৫ মার্চ এই উদ্বোধন করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। জাদুঘরটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে।

স্মৃতি জাদুঘরের ভবনের সম্মুখে স্থাপন করা হয় আবুল বরকতের প্রতিকৃতি। দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটি নিচতলায় আবুল বরকতের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও ছবি আছে। শহীদ বরকতের ব্যবহৃত হাতে লেখা চিঠি, স্মৃতিচিহ্ন, হাতঘড়ি, একুশে পদক ও ডকুমেন্টারি ফিল্মও রয়েছে জাদুঘরটিতে। ভেতরে ভাষা আন্দোলনের সময় তোলা বেশ কিছু ছবির পাশাপাশি বরকতের দুটো ছবি আছে।

মুর্শিদাবাদ জেলার বরকতের বাড়ির ছবি। সেই সময়ের কিশোর বরকতের ছবি রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে ঘটে যাওয়া মিছিল, সভার আলোকচিত্র, ভাষা শহীদদের আলোকচিত্র, প্রিয়জনের কাছে লেখা চিঠি ইত্যাদি সংরক্ষিত রয়েছে। এ জাদুঘরে আছে তাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র ও ছবি।

এছাড়া এ জাদুঘরের দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। এ লাইব্রেরিতে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর পাঁচ শতাধিক বই রয়েছে। বইগুলো সবার পাঠের জন্য উন্মুক্ত। ভাষা আন্দোলনের ওপর ডকুমেন্টারি, একুশে পদক (মরণোত্তর) ও তাঁর ছবি রয়েছে এখানে। লাইব্রেরিটিকে ডিজিটালে রূপান্তরের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে ডিজিটাল ছবির আর্কাইভও হবে। ৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে পাকিস্তানি হানাদারদের গুলিতে নিহত ছাত্র-জনতার ছবি রয়েছে।

আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘরের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার একুশে টেলিভিশনকে বলেন, ``ভাষা আন্দোলনের উপর এটি একমাত্র বিশেষায়িত জাদুঘর। ভাষা আন্দোলনের উপর লিখিত ৪৩০টি বই জাদুঘরের লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। ভাষা শহীদ বরকতের দুর্লভ চিঠিপত্র, বরকতের রক্ত মাখা জামা কাপড়, এবং ভাষা শহীদের ছবি, সংরক্ষণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এখানে মাঝে মাঝে ভাষা আন্দোলনের উপর ডুকুমেন্টারি দেখানো হয়। যেহেতু অন্যান্য শহীদের স্মৃতি বিজরিত তেমন কোনো উপকরণ পাওয়া যায়নি তাই স্বল্প কলেবরে ভাষা আন্দোলন ও ভাষা সৈনিকদের ইতিহাসকে ধরে রাখতে এটি চালু করা হয়েছে। যাতে করে নতুন প্রজন্ম আমাদের মাতৃভাষা দিবস ও এবং ভাষার জন্য জীবন উৎসৎর্গকৃত শহীদদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা লাভ করতে পারে। এছাড়া প্রতিবছর বরকতের স্মরণে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে `বরকত মেলা` অনুষ্ঠিত হয়। ইতোমধ্যে ভাষা আন্দোলনের উপর ১৯৫৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রকাশিত সকল ক্রোড়পত্র সংরক্ষণের কাজ চলছে।``

জাদুঘরে প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য রয়েছে আলাদা পথ। আগত দর্শনার্থীদের জন্য গাইডের ব্যবস্থা আছে। স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে পরিদর্শনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পায়।

শুক্র ও শনিবার জাদুঘরটি বন্ধ থাকে। দর্শনার্থীদের জন্য রোববার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে এই স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা।

কেআই/টিকে