ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

যে প্রবন্ধগুলো রয়েছে ‘কবি শহীদ কাদরী ও অন্যান্য প্রবন্ধ‘ প্রন্থে

মিল্টন রহমান

প্রকাশিত : ০৮:০৭ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার | আপডেট: ১১:২১ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ রবিবার

তান্ত্রিকগণ। আটটি প্রবন্ধের একটি বৃক্ষ। তবে এটি কোনো একজাতীয় বৃক্ষ নয়। এর রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের ডালপালা। রয়েছে বাংলা এবং বিশ্বসাহিত্যের গুণিনদের উপস্থিতি। রয়েছে তাঁদের কাজ এবং অবস্থানের কথা। প্রতিটি রচনায় আমি সময়কে ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। এই সময় হয়তো একদিন নতুন সময়ের হাতে তার উত্তরাধীকারের স্বীকৃতি দেবে। বাংলা গদ্য সাহিত্যে এমন কাজ প্রচুর রয়েছে। তাই প্রায় প্রতিটি প্রবন্ধে আমি প্রেক্ষাপট এবং রচনার ভাষাভঙ্গী ও রীতি প্রয়োগে স্বকীয় অবস্থান চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি। বাকিটুকু পাঠক আবিস্কার করে নিতে পারবেন।

‘যাদুরবংশীবাদক মার্কেজ‘। ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্যের অন্যতম প্রধান লেখক গার্বিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ এর সাহিত্য কর্মের বিষয়ে রচিত এই প্রবন্ধ। ম্যাজিক রিয়েলিজমের এই যাদুকরকে আমি নানান দিক থেকে আলো ফেলে দেখার চেষ্টা করেছি। তাঁর লেখক জীবনের সূচনা থেকে শেষ পর্যন্ত যেসব রচনা তিনি রেখে গেছেন, প্রায় প্রত্যেকটি লেখা ও সময়কে ধরার চেষ্টা করেছি। উঠে এসেছে মার্কেজের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক চিন্তা ও দর্শন। আমি মনে করি এই প্রবন্ধে পাঠক একসাথে পেয়ে যাবেন তাঁকে। যে কোন পাঠক মার্কেজকে পাঠের পূর্বে এই প্রবন্ধ পাঠ করলে তাঁর রচনা বুঝতে অনেক সহজ হবে বলেও মনে করি। কেননা যে কোন সাহিত্যিকের বই পাঠের পূর্বে তাঁকে চেনা এবং তাঁর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ-প্রতিবেশের সাথে পরিচিত হওয়া জরুরি বলে মনে করি।

‘তখন টেড হিউজ অন্য নারী শয্যায় ছিলেন‘। ব্রিটিশ কবি টেড হিউজ এবং আমেরিকান-ব্রিটিশ কবিসিলভিয়া প্লাথ সম্ভবত ইংরেজি সাহিত্যের সবেচেয় বেশি আলোচিত নিজেদের ব্যক্তিগত এবং সাহিত্যের কারণে। আত্মবিধ্বংসী কবি সিলভিয়াপ্লাথের মৃত্যুর এতো বছর পরও রহস্যের খোলস উন্মোচনে এখনো চলছে আলোচনা-সমালোচনা। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ওরসেস্টার কলেজের শিক্ষক, গবেষক স্যার জোনাথন বেট, ‘টেড হিউজ: দি আনঅথরাইজড লাইফ‘ নামে এই গ্রন্থ রচনা করেছেন। গ্রন্থটি ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর প্রকাশিত হয় (আমার রচনাটি এই গ্রন্থ প্রকাশের কয়েকদিন পূর্বে রচিত)। সেখানে তিনি সিলিভিয়া প্লাথ আত্মহত্যার সময় স্বামী টেড হিউজ কোথায় ছিলেন এবং সেই মুহুর্তের দৃশ্য উপস্থাপন এবং তা নিয়ে আলোকপাত করেছেন। গ্রন্থটি প্রকাশের আগেই ব্রিটেন, আমেরিকাসহ পুরো বিশ্বে আলোচনার ঝড় ওঠে। তারই প্রেক্ষাপট আমার আগ্রহের স্থান। ইংরেজি সাহিত্যের প্রভাবশালী এই দুই কবি সব সময় আমার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিলো। সেজন্যেই এ রচনায় আমি প্রসঙ্গের সাথে তুলে এনেছি আরো বিস্তারিত।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘স্ট্রে বার্ড‘স‘ এর চায়না অনুবাদ নিয়ে তুমুল বিতাণ্ডা শুরু হয়েছিলো একবার। গ্রন্থটির অনুবাদ করেছিলেন চীনের তরুণ লেখক ফ্যাং টাং। তাঁর রচনার প্রেক্ষাপটে আমার প্রবন্ধ ‘ তীব্র সমালোচনায় রবীন্দ্রনাথের স্ট্রে বার্ড‘স এর চায়না অনুবাদ‘। এই অনুবাদ গ্রন্থ নিয়ে ব্রিটেন-আমেরিকা থেকে শুরু করে ভারত-চীনসহ পুরো বিশ্বে সমালোচনা চলে। তবে এ নিয়ে বাংলাদেশে সমালোচনা তো দূরে থাক বেশ কয়েকজন তুখোড় সাহিত্যকর্মীর সাথে আলোচনা করে বুঝি তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না। ব্রিটেনের দি গার্ড়িয়ান, ডেইলী মেইল, ডেইলি টাইম, বিবিসি থেকে শুরু করে আমেরিকার প্রভাবশালী পত্রিকাগুলো এ নিয়ে মেতে ওঠে। বাংলাদেশে একমাত্র দৈনিক সমকাল এর ‘কালোর খেয়া‘ তে আমার এ সংক্রান্ত প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি প্রকাশের পর অনেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। সেই আগ্রহ থেকেই প্রবন্ধটি এই গ্রন্থভুক্ত করলাম।

‘নীলপদ্মের উদ্যান জিংকি বয়েস‘। নোবেল বিজয়ী বেলারুশের সাংবাদিক সেটলানা আলেক্সিয়ভিস এর রিপোর্টিংধর্মী উপন্যাস ‘জিংকি বয়েস‘ বিষয়ে আমার এই প্রবন্ধের অবতারণা। ২০১৫ সালে তাঁর নোবেল বিজয়ের পর পরই এটি রচনা করি। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র এই উপন্যাসের পটভূমি। তাতে যুদ্ধবিরোধী এই সাংবাদিক মানবিকতা ভুলণ্ঠিত হওয়ার দৃশ্য তুলে এনেছেন অনুপুঙ্খ। সাংবাদিকের চোক যখন ঔপন্যাসিকের চোখ হয়ে ওঠে তখন দৃশ্য কেমন হয়, সেই বিষয়টি উঠিয়ে আনার জন্যই আমার এই রচনা।

আমি কবি আবুল হাসান-এর রচনাকে সব সময় বুকে আগলে রেখেছি। এখানে সেখানে চিরিকুটের মত অসংখ্য কথা তাঁকে নিয়ে লিখেছি। এই গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধ ‘অনন্তযাত্রার কবি আবুল হাসান‘ সম্ভবত পূর্ণাঙ্গ রচনা। তাঁকে নিয়ে অসংখ্য রচনা রয়েছে। তবে কোন রচনা আমার দেখার দৃষ্টির সাথে এক নয়। আমি আবুল হাসানকে পাশ্চাত্যের আলো ফেলে নতুনভাবে আবিস্কার করেছি। এতে করে আমি আবারো বুঝতে পেরেছি সব ভাষার কবিতার সুর কিন্তু এক। এর চিন্তা, দর্শনও এক। কেবল কবির ভৌগোলিক অবস্থান ভিন্ন। এটি আবুল হোসেনকে দিয়ে আমি আবিস্কার করেছি। শহীদ কাদরী দীর্ঘ প্রবাস জীবনের কবি। রচনার বহর খুব বেশি নয়, কিন্তু জনপ্রিয়। তাঁকে নিয়ে রচিত আমার প্রবন্ধ ‘পাখি জীবনের কবি শহীদ কাদরী‘। এতে আমি মূলত বলতে চেয়েছি নতুন কোন কবিতা রচনা না করার ভেতর দিয়ে কবি কিভাবে কাব্য রচনা করে গিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আমি বলতে চেয়েছি একজন কবি সব সময় কবিতা রচনা করেন। এমন কি কবি মৃত্যুর পরেও কবিতা রচনা করেন। অনেকেই বলে থাকেন শহীদ কাদরী প্রবাস জীবনে তেমন কোর কবিতা রচনা করেন নি। এই কথাটিকে আমি ভুল প্রমাণ করেছি। বলেছি তিনি কখনো কাব্য রচনা থেকে বিরত থাকেন নি। এটি গভীর নীরিক্ষণের বিষয়।

কবি শামীম আজাদ এর কাব্যগ্রন্থ ‘জিয়ল জখম‘ নিয়ে আমার রচনা ‘দীর্ঘ সহবাসের জিয়ল জখম‘। কবির অনেকগুলো কাব্যগ্রন্থ থেকে আমি বিশেষ কারণে এটি নির্বাচন করেছি। আমার মনে হয়েছে এখানে কবি শামীম আজাদ নিজেকে মেলে ধরেছেন। এখানে তিনি চিন্তা, ভাষা, দর্শন, পারিপার্শ্বিকতা, প্রকৃতি নিয়ে নতুন কাব্যভাষা তৈরি করেছেন। কবি বিলেতে অবস্থান করেন বলে তাঁর কাব্যভঙ্গি যে নতুন বাঁক নিতে দেখেছি তাকে তুলে ধরার জন্যই আমার এই রচনা।

বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় হুমায়ূন আজাদ বিষয়ে আমার রচনা ‘তান্ত্রিক হুমায়ুন আজাদ‘। এতে হুমায়ুন আজাদ এর সাথে আমার ব্যক্তিগত স্মৃতিতর্পণের মাধ্যমে তুলে এনেছে তাঁর অভিব্যক্তিক চেহারা। যেখানে একজন হুমায়ুন আজাদকে আমি দেখেছি বাংলা সাহিত্যের একজন প্রভাব বিস্তারি ব্যক্তিত্ব হিসেবে। সম্ভবত হুমায়ুন আজাদই একমাত্র সাহিত্যিক যাঁর মধ্যে কোনো রকম রাগঢাক ছিলো না। তিনি স্পষ্টভাষী এবং চিন্তুক। আমার এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যে তাঁর রাজকীয় চেহারা উপস্থাপন করতে চেয়েছি।

 

লেখক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

টিকে