ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪,   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

তারুণ্যের ব্যতিক্রম উদ্যোগ

চলন্ত বাসে পাঠাগার

প্রকাশিত : ০৫:২৯ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ০৫:৩১ পিএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শুক্রবার

নগর জীবনের প্রধান সমস্যা যানজট। যানজটের ভোগান্তি পোহাতে হয় না-এমন মানুষ পাওয়া দায়। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা বলেছে, ট্র্যাফিক জ্যামের কারণে রোজ ৩২ লাখ কর্মঘন্টার অপচয় হয় নগরবাসীর।

যানজটের আটকা পড়ে গণপরিবহনে অলস সময় কাটাতে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারে ডুবে থাকেন। আবার অনেককে কানে হেডফোন লাগিয়ে মোবাইলে খোশ গল্প করতে দেখা যায়।

কর্মব্যস্ত মানুষের চলাফেরায় যানজটের দুর্ভোগে ক্লান্ত চোখে স্বস্তি এনে দিতে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন একদল তরুণ। যানজটের মধ্যেও চলন্ত বাসযাত্রীদের জ্ঞানচর্চায় পাঠাগারের ব্যবস্থা করেছেন তারা। বাসে উঠে আপনিও এখন চোখ-মন ডুবাতে পারেন বইয়ের রাজ্যে।

চলন্ত বাসে ব্যতিক্রম এই পাঠাগারের নাম বই বন্ধু পরিবহণ পাঠাগার। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে রাজধানীর আজিমপুর থেকে গাজীপুরগামী ভিআইপি-২৭ নম্বর বাসে এই পাঠাগার চালু করা হয়েছে। এই বাসে তাকের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী বই রাখা আছে। পাঠক সেখান থেকে নিজ হাতে বই নিয়ে পড়তে পারেন।  

পাঠাগারটির উদ্যোক্তা `সোস্যাল চেইন ফর ডেভেলআপমেন্ট` নামের একটি সংগঠন। যেটির সদস্য কয়েকজন তরুণ। এই পাঠাগারের স্বপ্নদ্রষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আমিনুল ইসলাম।

তার পাঠাগার গড়ে তোলার ভাবনা বেশি দিনের না। গত ৬ জানুয়ারি এমন পরিকল্পনা মাথায় আসে তার। এর ২০ দিনের মাথায় বাস্তবায়ন ঘটিয়ে ফেলেন আমিনুল।

তবে তার এই বইবন্ধুর যাত্রা যে সংগঠনের কল্যাণে সেই সোশ্যাল চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট’র যাত্রা ২০১৫ সালে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঢাকায় কাজ করে এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। আস্তে আস্তে তারা সারাদশে কাজ করতে চায়। তবে এখন তাদের যত ব্যস্ততা সবই এই বইবন্ধু পাঠাগারকে ঘিরে। ৬টি বাস দিয়ে শুরু করলেও ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তারা আজিমপুর থেকে গাজীপুর রুটে চলা ভিআইপি সার্ভিসের ২০টি বাসে এই লাইব্রেরি গড়ে তুলবেন। তারপর অন্যান্য রুট হয়ে দূরপাল্লার বাসেও আলো ছড়াতে চায় এই পাঠাগার।

উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বই বন্ধু প্রকল্পের উদ্দেশ্য বৃহৎ। সব গণপরিবহণে বই সংরক্ষনের মধ্য দিয়ে যাত্রী সাধারণের মধ্যে বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি করা। ঢাকা সিটির অভ্যন্তরীণ সব গণপরিবহণে বই সংরক্ষন; তীব্র যানযটের বিরক্তিকর ভ্রমনকে আনন্দঘন করে তোলা; যানযটে অপচয় হওয়া সময়কে মূল্যবান করে তোলা; দূরপাল্লার পরিবহণে বই সংরক্ষণের মাধ্যমে যাত্রীর চলার পথকে সহজ ও জ্ঞানমূলক করে তোলা; অডিও ডিভাইসের মাধ্যমে পড়তে না পারা যাত্রীদেরকে বই পড়ে শোনানোর বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া। এছাড়া হাসপাতাল, নৌ পরিবহন, দূরপাল্লার লঞ্চ, বাস, ট্রেন এবং বিমানে এটি চালু করার চিন্তা রয়েছে।

বই বন্ধু পাঠাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টিকে বইয়ের সঙ্গে সম্পৃক্তকরণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টিকে চিহ্নিত করে এলাকাভিত্তিক উন্মুক্ত পাঠাগার স্থাপন করা। এছাড়া নবীন লেখকদের উৎসাহিত করতে বই বন্ধু প্রকাশনা করার চিন্তাও রয়েছে।

বই বন্ধু পাঠাগারের গল্প শুনুন এ প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা আমিনুল ইসলামের মুখ থেকেই। তার সঙ্গে কথা বলেছেন ইটিভি অনলাইনের  প্রতিবেদক কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক।

ইটিভি অনলাইন : বই বন্ধু প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাই?

আমিনুল ইসলাম :  আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের অন্যতম বন্ধু হচ্ছে বই। একটি ভালো বই পারে আমাদের জাগতিক ভাবনার জগৎকে প্রশস্ত করতে। নিজকে ইতিবাচক রাখতে বইয়ের বিকল্প নেই। বই বন্ধু সোস্যাল `চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট`র একটি শিক্ষা বিষয়ক প্রকল্প। দেশের সব শ্রেণিতে পাঠক সৃষ্টির লক্ষে এটি চালু করেছি।

এছাড়া যেকোনো সময় পাঠক যাতে নিয়মিত বইয়ের সংস্পর্শে থাকতে পারে সে লক্ষে মূলত এই উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণী, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠীর জন্য নয়। সর্বসাধারণের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা গড়ে তুলতে এটি সাহায্য করবে। বই পাঠকের কাছে সহজলভ্য করার পাশাপাশি স্থায়ী ও বিশেষ পাঠাগারের মাধ্যমে জ্ঞান বিতরণের কাজকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভুমিকা রাখবে প্রকল্পটি।

ইটিভি অনলাইন : সোশ্যাল চেইন ফর ডেভেলআপমেন্ট সংগঠনটির কাজ সম্পর্কে যদি বলতেন?

আমিনুল ইসলাম : ২০১৫ সালের নভেম্বর সোস্যাল চেইন ফর ডেভেলআপমেন্ট সংগঠনটি ১৫ জন বন্ধু দের নিয়ে প্রতিষ্টা করি। বর্তমানে  আমি সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব  পালন করছি। প্রথমে ব্লাড গ্রুপিং, শীত বস্ত্র বিতরণ, পথ শিশুদের জন্যে নতুন জামা, মেডিকেল ক্যাম্পসহ কিছু সামজিক মানবিক কাজ করছে এই সংগঠনটি।

ইটিভি অনলাইন : গণপরিবহনে পাঠাগার চালুর করার কথা কিভাবে মাথায় এলো?

আমিনুল ইসলাম: দেখুন,পরিবহণে যাতায়াতের সময় আপনার আমার অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। এই যানজটের ফলে দিন শেষে ক্লান্তি আর হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরতে হয়। বাসে বসে অলস সময়কে প্রাণবন্ত করতে মূলত চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি আজিমপুর টু গাজীপুর ভিআইপি-২৭ নামক বাসে এই প্রকল্প চালু করেছি।

চলন্ত বাসের পাঠকরা আমাদেরকে অনেক ভালো সাড়া দিচ্ছেন। যদিও প্রাথমিকভাবে মাত্র ৬টি বাসে বই বন্ধু পাঠাগার চালু রয়েছে, যা পাঠকের চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। ইতোমধ্যে বাস মালিকের সহযোগিতায় বাসের স্টাফদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। এই ব্যাপারে উক্ত পরিবহনের পরিচালক আবদুর রাজ্জাক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।

ইটিভি অনলাইন :  প্রকল্পটিকে নিয়ে আগামীর ভাবনা কি?

আমিনুল ইসলাম :  আগামীতে এই প্রকল্প নিয়ে অনেকগুলো চিন্তা ভাবনা রয়েছে। ঢাকাসহ সারাদেশের সড়ক, রেল ও নৌ পথের যাত্রীবাহী পরিবহণসমূহে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠাগার স্থাপনের মধ্য দিয়ে আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষকে বই পড়া কর্মসূচির সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই।

ইটিভি অনলাইন : চলন্ত বাসে পাঠাগার চালাতে কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন কি না?

আমিনুল ইসলাম :  আমাদের সংগঠনের সবাই শিক্ষার্থী। তাই প্রকল্প চালাতে অর্থই বড় সমস্যা। কেউ কেউ স্বেচ্ছায় কিছু সহায়তা করেন, যেটি একেবারেই অপ্রতুল। সমাজের হৃদয়বানরা এগিয়ে আসলে বই বন্ধু প্রকল্পটি আরও ভালো ভাবে চালানো সম্ভব।

যে কেউ যোগাযোগ করতে পারেন- বইবন্ধু, সোশ্যাল চেইন ফর ডেভেলপমেন্ট, হাউস ২০, রোড ১২, শেখেরটেক, শ্যামলী, ঢাকা-১২০৭ এই ঠিকানায়। ফেসবুকেও তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন www.facebook.com/scd.org -এই ঠিকানায়।

/ এআর /