ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪,   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তারকালাপে সঙ্গীতশিল্পী পুতুল

আমার সত্তা দুই মাধ্যমেই

প্রকাশিত : ১২:৫১ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১২:৫৭ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার

সাজিয়া সুলতানা পুতুল। প্রজন্মের জনপ্রিয় গায়িকা। তবে শুধু গায়িকা বললে ভুলই হবে। তিনি গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। উপস্থাপক হিসেবেও তার নাম আছে বেশ। গানের এই পাখির যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্লোজআপ ওয়ান প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। যদিও ছোটবেলা থেকেই গানে অনবদ্য অবদানের জন্য বেশ কিছু জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তবে এ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়েই পেশাগতভাবে শিল্পী হিসেবে যাত্রা শুরু করেন পুতুল। আর এ যাত্রাটা শুরু থেকেই ছিল বেশ ভালো। তখন থেকেই স্টেজ, টিভি লাইভ, অ্যালবাম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। শুধু গান নয়, গানের পাশাপাশি লেখালেখিও করেন এই গুণী শিল্পী।

ইতিমধ্যে বই মেলায় তার কিছু বইও প্রকাশ পেয়েছে। দুই মাধ্যমেই নিজেকে তুলে ধরতে নিরন্তর ছুঁটে চলছেন পুতুল। একুশে টেলিভিশন (ইটিভি) অনলাইন’র তারকালাপে নিজের সঙ্গীত সাধনা ও লেখালেখির কথা জানালেন তিনি। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- সোহাগ আশরাফ

ইটিভি অনলাইন : কেমন আছেন?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : খুব ভালো আছি।

ইটিভি অনলাইন : আপনি চলতি প্রজন্মের একজন জনপ্রিয় গায়িকা। পাশাপাশি লেখালেখিও করেন। আপনার প্রকাশিত প্রথম বইটির নাম কি?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আমার প্রথম বই ‘পুতুল কাব্য উপক্রমণিকা।’ এটি একটি কাব্য গ্রন্থ। বইটির প্রকাশ হয় ২০১৬ সালে। বইটি প্রকাশ করে ‘প্রিয়মুখ প্রকাশনী’।

ইটিভি অনলাইন : এরপর কি বই প্রকাশ পায়?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : এরপর প্রকাশ পায় ‘পুতুল কাব্য দ্বিতীয় অধ্যায়।’ এই বইটি ২০১৭ সালে প্রকাশ পায়। এটি আমার লেখা দ্বিতীয় বই। এটি প্রকাশ করে ‘দেশ প্রকাশনী’।

ইটিভি অনলাইন : এবারের বইমেলায় আপনার নতুন কোনো বই এসেছে কী?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : এবছর আবারও ‘প্রিয়মুখ প্রকাশনী’ থেকে একটি উপন্যাস প্রকাশ পেয়েছে। উপন্যাসের নাম ‘একটি মনস্তাত্ত্বিক আত্মহনন ও তার পুতুলকাব্যিক প্রতিবেদন’। এটি আমার প্রথম উপন্যাস। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত লেখক হুমায়ুন আজাদকে।

ইটিভি অনলাইন : নতুন এই উপন্যাসের গল্পটা কি? বইটি সম্পর্কে একটু জানতে চাই।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আসলে উপন্যাসটির মূল কথা হচ্ছে নারীর মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন। একজন নারী তার জীবনে বিভিন্ন সময়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। সে ক্ষেত্রে যখন সে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে এবং যখন সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারে না, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নেয়- দেখা যায় যে একারণে পরবর্তী জীবনে তাকে অনেক ভুগতে হয়। অনেক সময় এটা সংশোধন করার সুযোগ সে পায়, আবার অনেক সময় পায় না। আর এমনও হয় যে সংশোধনের সুযোগ থাকা সত্যেও সে সংশোধনের ইচ্ছা করে না। মনে করে যে যা হয়েগেছে সেটাই থাক। আবার সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে সামনের দিকে পথ চলা, এসব বিষয়গুলো উপন্যাসের মধ্যে পাওয়া যাবে। মোটকথা একটি মেয়েকে কেন্দ্র করে গল্প বিভিন্ন শাখপ্রশাখায় বিস্তার লাভ করেছে।

আমি কাছের কিছু মেয়ের জীবন ও বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে এটি লিখেছি। উপন্যাসটিতে নারী তাকে আলাদা আলাদা ভাবে নিজেকে দেখতে পারবে।

ইটিভি অনলাইন : গানের মাধ্যম থেকে লেখালেখির জীবনে প্রবেশ করলেন কেনো? কখন থেকে এই আগ্রহটা প্রকাশ পায়?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : এটা যে হঠাৎ করে হয়েছে তা কিন্তু নয়। আমার আত্মপ্রকাশটা হয়তো দেরিতে হয়েছে। কিন্তু সেই ছোটবেলা থেকে আমি যখন গানের সঙ্গে আছি তখন থেকেই সাহিত্য চর্চা করছি। গানের আমার পরিচিতিটা প্রথমে আসার কারণে অনেকে হয়তো মনে করেন যে আমি সৌখিন লেখক। আমি এটার সঙ্গে ঘোর বিরোধিতা করি। কারণ পুতুলের সত্তা দুই মাধ্যমেই। গান ও সাহিত্যের বাইরে আমি কিছুই না। সুতারাং আমি মনে করি যে আমি যদি গান নাও গাইতাম তখনও সাহিত্য চর্চা আমার একমাত্র মাধ্যম হতো। আমি নিয়মিত লেখক। আমি সারাদিনে গানটা যতটুকু যত্ন নিয়ে করি, লেখালেখিটাও ঠিক ততটা মন দিয়ে করি।

আর অনুপ্রেরণার বিষয়টা হচ্ছে- আমার পরিবারেই সাহিত্যের চর্চা আছে। আমার বাবা ভিষণ কবিতা প্রেমি একজন মানুষ। আমার ভাই সাহিত্য চর্চা করে। বাসায় বই পড়ার প্রবণতা দেখেছি ছোটবেলা থেকেই। সেই পড়তে পড়তে একটা সময় মনে হলো আমিও আমার কথাগুলো প্রকাশ করি।

ইটিভি অনলাইন : আপনি কি শুরুতেই কবিতা লিখেছেন?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আমার লেখালেখিটা শুরু হয় গান দিয়ে। গানের পরে কবিতা। কবিতা লেখার পর থেকে সাহিত্যের বিভিন্ন অঙ্গনে প্রবেশ করতে থাকি। এবার তো উপন্যাস লেখার কাজে হাত দিলাম। আমার নিজের যে অ্যালবামগুলো রয়েছে তার অধিকাংশ গানই আমার লেখা, সুর ও কম্পোজিশন করা।

ইটিভি অনলাইন : সঙ্গীতশিল্পী নাকি একজন সাহিত্যিক হিসেবে নিজেকে দেখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : দুইটার অনুভুতি একেবারে আলাদা। আমি যখন মঞ্চে থাকি, মঞ্চে গাই বা মঞ্চ থেকে নামি তখন আমাকে ঘিরে দর্শক-শ্রোতাদের যে আগ্রহ দেখি এটা স্বর্গীয় একটা অনুভুতি। আমি যখন মঞ্চে গাই তখন মঞ্চের সামনে যে প্রবীণ মানুষটি আমার গানের সঙ্গে তাল দেয় ঠিক তখন অন্যরকম অনুভুতি হয়। তখনই মনে হয় আমি স্বার্থক।

আর লেখালেখির ক্ষেত্রে পাঠকদের অনুরাগের কথা যদি বলেন সেই অনুভুতিটাও ভিন্ন। এটার সঙ্গে আমি গত তিন বছর যাবৎ অভ্যস্ত। আমি যখন বই মেলার স্টলে থাকি তখন যারা আমার বই কেনেন এবং তাদের অনুভুতির কথা ব্যক্ত করেন তখন মনে হয় জীবন অনেক সুন্দর। অবশ্য আমার গানের অনুরাগীরাও সেখানে আসেন। তারা উৎসাহ দেন। আসলে দুই মাধ্যমের ভালোবাসা নিয়ে আমি এগিয়ে যেতে চাই।

ইটিভি অনলাইন : গতকাল ভ্যালেন্টাইন ডে ছিলো। দিনটি কিভাবে কাটলো?

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : প্রত্যেকটা দিবসেই আমাদের আলাদা ব্যস্ততা থাকে। দিনের শুরু হয়েছিলো টিভির পর্দায় দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আবার দিন শেষ হয়েছে দর্শকদের সঙ্গে সরাসরি গানের মাধ্যমে। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। কারণ বিশেষ দিনগুলোকে আমি আরও বিশেষ করতে পারি আমার দর্শক-শ্রোতার জন্য।

ইটিভি অনলাইন : ব্যক্তি পুতুলের ব্যাক্তিগত ভালোবাসার গল্পটা শুনতে চাই।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আমার ভালোবাসার গণ্ডিটা পরিবার কেন্দ্রীক। আমি ভিষণ পরিবার ঘেষা একটা মেয়ে। আমি কাজের বাইরে পুরোটা সময় আমার পরিবারের সঙ্গে থাকি। আমার মা-বাবা, ভাই-বোনদের সময় দিতে পারা এবং তাদের সময়টা পাওয়া এটাই অনেক সৌভাগ্যের বিষয়।

ইটিভি অনলাইন : অনেক ভালো লাগলো কথা বলে। ধন্যবাদ।

সাজিয়া সুলতানা পুতুল : আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।

এসএ/