ঢাকা, রবিবার   ০৫ মে ২০২৪,   বৈশাখ ২২ ১৪৩১

রোহিঙ্গা নিধন

ধ্বংসলীলার চিহ্নও মুছে দিচ্ছে সেনারা

প্রকাশিত : ০৯:৩৯ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ০৯:৪৯ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ শনিবার

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের প্রমাণ নিশ্চিহ্ন করতে অন্তত ৫৫টি গ্রাম বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়,দেশটির সেনারা রাখাইনের ৩৬২টি গ্রামে নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে। এবার এই ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন নিশ্চিহ্ন করতে দ্রুতগতির বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে একের পর এক গ্রাম।

এতে সেখানে যে মানুষের বাস ছিল, তা বুঝার-ই কোন উপায় থাকবে না। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) গতকাল শুক্রবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

নতুন স্যাটেলাইটের চিত্র বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি বলছে, মিয়ানমারের সেনারা উত্তর রাখাইনের পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলোর অবশিষ্টাংশ সরাতে বুলডোজার ব্যবহার করছে। এতে সেখানে মরুভূমির মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেখানে যে মানুষের বাস ছিল, তা মুছে ফেলতে সেনারা এ অভিযান শুরু করেছে বলে জানা গেছে।

‘দ্যা আরাকান প্রজেক্ট’ নামে মিয়ানমারের স্থানীয় একটি মানবাধিকার পর্যবেক্ষক সংস্থা এই অভিযোগ করার মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রাইটস ওয়াচ এ প্রমাণ তুলে ধরেন। স্যাটেলাইট থেকে নেওয়া স্থির চিত্র বিশ্লেষণ করে, রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, হত্যাযজ্ঞসহ ঘরবাড়ি পুড়িয়ে ফেলার প্রমাণ মুছে ফেলতে তারা বুলডোজার ব্যবহার করেছে। ওই এলাকা গুলোতে এতদিন বিদেশি কোন সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক বা মানবাধিকার সংগঠনের লোকগুলোকে যেতে দেওয়া হয়নি।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনে যাওয়ার আগ পর্যন্ত এসব অপরাধের এলাকা সংরক্ষণ করা জরুরি বলে মত দেয় সংস্থাটি। এদিকে বুলডোজার দিয়ে একের পর এক গ্রাম নিশ্চিহ্ন করা থেকে বিরত থাকতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি জাতিসংঘ ও এর সংস্থা, নিরাপত্তা পরিষদ এবং মিয়ানমারের দাতা দেশগুলোর দাবি তোলা উচিত বলেও পরামর্শ দেয় সংস্থাটি।

গত বছরের ১১ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সময় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, ভারি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে কমপক্ষে ৫৫টি গ্রামের সব অবকাঠামো এবং গাছ-পালা নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্টের পর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নিধনযজ্ঞ চালানোর সময় যে ৩৬২ গ্রাম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো এই গ্রামগুলো তার মধ্যেই রয়েছে। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়, আগে অগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি এমন দুটি গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগুনে আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত অন্য দশটি গ্রামের শত শত ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে।

এইচআরডব্লিউ’র এশীয় পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, গুঁড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো রোহিঙ্গাদের ওপর ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এভাবে অপরাধের আলামত নিশ্চিহ্নের চেষ্টা সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যাযজ্ঞের বিচারে বাধা হবে।

এইচআরডব্লিউ’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের আগস্টে অভিযান শুরুর পর সেনারা শত শত রোহিঙ্গা গ্রামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, নির্বিচারে গ্রেফতার ও অগ্নি সংযোগ করেছে। এর ফলে ৬ লাখ ৮৮ হাজার রোহিঙ্গা প্রতিবেশী বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বুলডোজার দিয়ে গ্রাম গুঁড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে অপরাধের প্রমাণ মুছে ফেলা হচ্ছে যা ন্যায় বিচারের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। মিয়ানমার সেনারা ব্যাপকভাবে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে বলে অভিযোগ উঠলেও দেশটির সরকার নিরপেক্ষ তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমার সরকার রাখাইনে জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে প্রবেশে অনুমতি দেয়নি। এর মাধ্যমে রোহিঙ্গা নিধনের তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহে তারা বাধা দিয়েছে। ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, গ্রাম গুড়িয়ে দেওয়ায় রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া হুমকিতে পড়েছে।

সূত্র: রয়টার্স
এমজে/