ঢাকা, শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪,   বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

বোর্ডে এঁকে এঁকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেন যে শিক্ষক

প্রকাশিত : ১২:১৪ পিএম, ১ মার্চ ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ০১:২৮ পিএম, ১২ মার্চ ২০১৮ সোমবার

সাধারণত শিক্ষকেরা ব্ল্যাকবোর্ডে পড়ানোর বিষয়ে লিখে লিখে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করে থাকেন। কিন্তু তাই বলে মাইক্রো সফট ওয়ার্ডের পুরো ইন্টারফেসই কী চক দিয়ে ব্ল্যাকবোর্ডে এঁকে এঁকে পড়ানো সম্ভব? যদি মনে করেন যে, এমন ধৈর্য্যশীল শিক্ষক নেই তাহলে সেটি ভুল। জেনে রাখুন ঘানায় এমন একজন আছেন যিনি বোর্ডে এঁকে এঁকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দেন।

ঘানার শিক্ষক রিচার্ড আপ্পিয়া অ্যাকোটো তাঁর শিক্ষার্থীদের মাইক্রো সফট ওয়ার্ড বুঝিয়ে পড়ানোর জন্য বোর্ডে এঁকে থাকেন পুরো ইন্টারফেস।

ঘানার দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর কুমাসির অদূরে সেকেডোমাস শহরের বেতিনেজ এম/এ জুনিয়র হাইস্কুলের শিক্ষক রিচার্ড। শিক্ষার্থীদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ে পড়ান তিনি।

সম্প্রতি নিজের ফেসবুক আইডি’তে একটি ছবি প্রকাশ করেন রিচার্ড। ওউরা কোয়াডো হটিস নামের ফেসবুক আইডি থেকে দেওয়া ঐ পোস্টে দেখা যায়, ক্লাসের ব্ল্যাকবোর্ডে মাইক্রো সফট ওয়ার্ড সফটওয়্যারের বিভিন্ন ধাপ আঁকছিলেন রিচার্ড। আর শিক্ষার্থীরা তাঁদের খাতায় সেই ছবি তুলেও নিচ্ছিলেন।

ঐ পোস্টে তিনি লেখেন, “ঘানায় আইসিটি শিক্ষা দেওয়া অনেকটা হাস্যকর বিষয়। আমি আমার শিক্ষার্থীদের ভালবাসি। আমি কী পড়াচ্ছি তা যেন তারা বুঝতে পারে সেজন্য যা যা প্রয়োজন সবই আমি করব”

২০১১ সাল থেকে স্কুলটিতে আইসিটি বিষয় পড়ানো হলেও এখনও সেখানে নেই কোন কম্পিউটার। এমনকি জাতীয় বোর্ড পরীক্ষায়ও এই বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু কম্পিউটার না থাকায় শিক্ষাদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। আর তখনই বোর্ডে এঁকে ১৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষা দিয়ে আসছেন রিচার্ড।

বার্তা সংস্থা কোয়ার্টজ আফ্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিচার্ড বলেন, “আমি প্রথমবার এমনটা (বোর্ডে আঁকা) করছি না। যখনই আমি ক্লাসরুমে থাকি তখনই এমনটা করি”।

তিনি আরও বলেন, “আমি ফেসবুকে ছবি দেওয়া পছন্দ করি। তেমন কিছু না ভেবেই এই ছবিটিও দিয়েছিলাম। তবে এভাবে সকলের প্রতিক্রিয়া পাব ভাবিনি”।

  

ভাইরাল

এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ছবি প্রকাশ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে তা ভাইরাল হয়েছে ভার্চুয়াল জগতে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রিচার্ড ও তাঁর শিক্ষার্থীদের সাধুবাদ জানাচ্ছেন অনেকেই।

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইয়ান ব্রেমার টুইট বার্তায় লেখেন, “ঘানায় আইসিটি ক্লাস। কম্পিউটার নেই, তাতে কোন সমস্যাও নেই”।

নাইজেরিয়া ভিত্তিক প্যারাডাইজ ইনিশিয়েটিভ এর নির্বাহী পরিচালক লেখেন, “রিচার্ডের এই ছবি ২০০৫ সালে আমার ছাত্র জীবনের এক অভিজ্ঞতাকে মনে করিয়ে দেয়। তখন আমরা কম্পিউটার চিনতাম শুধু কাগজে করা ফটোকপিতে”।

আর ক্যামেরুনের নারী উদ্যোক্তা এবং অ্যাপসটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেবেকা এনেচং এক টুইট বার্তায় মাইক্রোসফটকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “মাইক্রোসফট, সে ব্ল্যাকবোর্ডে এমএস ওয়ার্ড শিখাচ্ছে। তোমরা তো তাঁকে কিছু সাহায্য করতে পার”।

মাইক্রোসফটের সহায়তা

এদিকে রেবেকার টুইটেই হয়তো নজরে আসার পর রিচার্ডকে কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইস দিয়ে সাহায্য করার কথা জানিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ টেক প্রতিষ্ঠান মাইক্রো সফট। ফিরতি এক টুইট বার্তায় মাইক্রো সফট জানায়, “আমরা রিচার্ডকে কম্পিউটার দিয়ে সাহায্য করব। পাশাপাশি তিনি যেন আমাদের এমসিই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট কোর্স করতে পারে সেই সাহায্যও মাইক্রোসফট দেবে”।

সূত্রঃ বিবিসি

//এস এইচ এস// এআর